মালয়েশিয়া সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবৈধ শ্রমিকদের অস্থায়ী কাজের পারমিট ই-কার্ড নিবন্ধনের সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়া উপ-প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আহমদ জাহিদ হামিদি। তিনি বলেন, নিয়োগকর্তাদের কাছে অনুরোধ পাওয়া সত্ত্বেও আমরা আর ই-কার্ড নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়াব না।
Advertisement
অনেকবার বলা সত্ত্বেও যারা ই-কার্ড প্রোগ্রামে নিবন্ধন করেনি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবার হুঁশিয়ারি দেন উপ-প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিদেশি শ্রমিকেরা আমাদের দেশে অবস্থান করছেন টাকা উপার্জনের জন্য। যেন তারা ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। কিন্তু আমরা চাইব যতদিন তারা আমাদের দেশে থাকবে অবশ্যই বৈধভাবে অবস্থান করবে।
জাহিদ হামিদি বলেন, ই-কার্ড প্রোগ্রামে নিবন্ধন না করার জন্য নিয়োগকর্তা এবং অবৈধ শ্রমিকরা সমান দায়ী। দক্ষিণ কোরিয়ার ভিসা বন্ধ করে দিয়েছি।
Advertisement
এদিকে মালয়েশিয়ায় অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া ওই অভিযানের কারণে বৈধ কাগজপত্রবিহীন বিদেশি শ্রমিকরা রয়েছেন আতঙ্কে।
১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ৩০ জুন পর্যন্ত দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশি শ্রমিকদের ই-কার্ডের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ দেয়া হলেও এ সুযোগ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছেন বেশির ভাগ শ্রমিক।
দেশটির অভিবাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ সুযোগ নেয়া শ্রমিকের হার মাত্র ২৩ শতাংশ। আর মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থান করছেন প্রায় ৬ লাখ শ্রমিক।
এদিকে ই-কার্ড নিবন্ধনের সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিবাসন কর্তৃৃপক্ষ অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করেছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম বারনামার খবরে বলা হয়েছে, অভিবাসন কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক দাতুক সেরি মুস্তাফার আলী নিজেই একটি অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
Advertisement
অভিবাসন কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী জানান, সারাদেশের ১৫৬টি স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় তিন হাজার ৪৯৩ জন সন্দেহভাজন বিদেশির কাগজপত্র পরীক্ষা শেষে এক হাজার ৪৫ জন শ্রমিককে আটক করা হয়।
তিনি জানান, আটকদের মধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকরাই বেশি। আটকদের মধ্যে ৫১৫ বাংলাদেশি, ১৩৫ ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য দেশের ২২৬ শ্রমিক।
ই-কার্ড নিবন্ধনে যথেষ্ট সময় দেয়া হয়েছে। নতুন করে আর কোনো সুযোগ দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরি মোস্তাফার আলী।
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ধরপাকড়ের ব্যাপারে এ প্রতিবেদককে বলেন, অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে গ্রেফতার প্রক্রিয়া মালয়েশিয়ান সরকারে নিয়মিত কার্যক্রম। এটা নিয়ে আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। সেখানে চার লাখ বাংলাদেশি কর্মী বৈধভাবে কর্মরত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জি-টু-জি প্লাস শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫-৬ হাজার কর্মী গেছে। একশ্রেণির প্রতারক চক্র অবৈধ শ্রমিক পাঠায় যাদের বৈধ কাগজপত্র থাকে না।
এ ব্যাপারে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনার মুহ. শহিদুল ইসলাম জানান, কতজন বাংলাদেশিকে তারা এ পর্যন্ত আটক করেছে সেই সংখ্যাটি আমরা এখনো জানি না। এটা জানাতে তারা ১০-১৫ দিন সময় নেয়। এই ধরপাকড় তাদের রুটিন ওয়ার্ক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
হাইকমিশনার বলেন, ই-কার্ড প্রক্রিয়া শুধু ছিল যাদের কোনো কাগজপত্র নেই তাদের জন্য। এ নিবন্ধনের সময় শেষ হলেও রি-হিয়ারিং প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। রি-হিয়ারিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে অবৈধ শ্রমিকরা বৈধ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ অব্যাহত থাকবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে আতঙ্কের কোন কারণ নেই।
এ সুযোগে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অবশ্য এরই মধ্যে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে এবং জড়িতদের পাকড়াও করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে বিরাজ করছে উৎকণ্ঠা। গ্রেফতারের ভয়ে তারা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। অনেকে নিজেদের ভিসার মেয়াদ বাড়াতে দালালের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। এমন অভিযোগ করেছেন অনেকে।
নরসিংদীর কালাম মালয়েশিয়ায় সাত বছর ধরে রয়েছেন। বাংলাদেশি এক এজেন্টের কাছে টাকা পাসপোর্ট দিয়েছিলেন পারমিট করার জন্য। কিন্তু পারমিটতো দূরের কথা টাকা/পাসপোর্ট দুটোই গেল তার। এরপর কাগজপত্রবিহীন অবস্থায় ই-কার্ড নিবন্ধনের জন্য ইন্ডিয়ান মালয়েশিয়ান নাগরিক এক এজেন্টের কাছে টাকা-পয়সা দেয়ার পরেও তাকে নিবন্ধ করানো হয়নি। এ রকম শত শত বাংলাদেশি এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
জেএইচ/আরআইপি