১ জুন থেকে শুরু হচ্ছে বাজেট অধিবেশন। এই অধিবেশনেই পাশ হবে ২০১৫-২০১৬ এর জাতীয় বাজেট। কেমন হবে সেই বাজেট? কেমন বরাদ্দ থাকবে কৃষিখাতে? কেমন প্রত্যাশা দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের? এনিয়ে ‘কৃষি বাজেট, কৃষকের বাজেট’ প্রস্তাবনায় উঠে এসেছে কৃষকদের প্রস্তাব, দাবি ও চাহিদার কথা। এসব নিয়েই জাগো নিউজে লিখেছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। সাত পর্বের ধারাবাহিক লেখার আজ থাকছে শেষ পর্ব।(পূর্ব প্রকাশের পর)মৎস্য খাত :১. মৎস্য চাষ ও পোনা উৎপাদন হ্যাচারির ওপর আরোপিত আয়কর প্রত্যাহার করতে হবে। এক্ষেত্রে ২০১১ সালের আগের মতো পাঁচ বছর মেয়াদি বন্ড কেনার নিয়মিতি পুনরায় বাস্তবায়ন করতে হবে।২. মৎস্য খাতকে কৃষির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। ভূমি উন্নয়ন কর, বিদ্যুৎ বিল, ঋণ, ভর্তুকি প্রদানসহ সকল ক্ষেত্রে কৃষি খাতের অনুরূপ সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে।৩. মৎস্য চাষিদের জন্য বীমা ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।৪. ঋণের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সকল ব্যাংকে সুদের হারের সামঞ্জস্য ও সমতা নিশ্চিত করতে হবে।৫. কলকারখানাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে নদী ও অন্যান্য জলাশয়ের পানি দূষণ রোধের উদ্যোগ নিতে হবে।৬. মৎস্য সেক্টরের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, জরিপ নিশ্চিত করতে হবে। বাইরে থেকে নতুন করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় উন্নত ব্রান্ডের মাছ আমদানি করতে হবে। মাতৃমাছের অভাবে আমাদের হ্যাচারিগুলোতে মানসম্পন্ন পোনা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।৭. মাছের অন্তঃপ্রজনন রোধকল্পে হালদা, পদ্মা ও যমুনা থেকে সংগৃহীত জাত সরকারি ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি হ্যাচারিতে সরবরাহের উদ্যোগ নিতে হবে। রেণু পোনা উৎপাদনের সময় বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে। ৮. মাছের স্থানীয় বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং চাষিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। একইভাবে মাছ রফতানির ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ ও সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে। ৯. দেশের মৎস্য গবেষণা উন্নয়নের জন্য সকল গবেষণা ইনস্টিটিউটকে ঢেলে সাজাতে হবে। প্রধান প্রধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও আঞ্চলিক গবেষণা ইনস্টিটিউটগুলোতে লোকবল বৃদ্ধি ও গবেষণা সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে হবে।১০. মাছের খাদ্য ও পোনার মান পরীক্ষা ও নিয়মিত সরকারি তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। চাষের ক্ষেত্রে মাটি ও পানির গুণগত মান পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।১১. অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে প্রাকৃতিক জলাশয় রক্ষা করতে হবে। দেশের জলাশয়গুলোকে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের মধ্যে ইজারা বন্দোবস্ত দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।১২. বিলুপ্ত প্রজাতির দেশি মাছের জাত রক্ষার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।১৩. সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের যুগোপযোগী জরিপ প্রয়োজন। সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে প্রচলিত নীতিমালা পরিবর্তন ও সংস্কার করতে হবে।পশুপালন ও দুগ্ধ খামার :১. প্রাণিসম্পদ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য বিশেষ করে পশুপালনকারী ও দুগ্ধ খামারিদের জন্য কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডের অনুরূপ পরিচয়পত্র প্রদান করতে হবে।২. দুগ্ধ খামারিদের জন্য বীমা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।৩. দেশের দুগ্ধ খামার সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও চিলিং প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার মাধ্যমে তাদের মাধ্যমেই বিভিন্ন এলাকায় দুগ্ধশিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেতে পারে।৪. দেশীয় ক্ষুদ্র খামারি পর্যায়ে দুধের মূল্য নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে।৫. সকল পশু খাদ্যের দাম কমাতে হবে।৬. প্রাণিসম্পদ গবেষণা কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে হবে। আমাদের দেশীয় জাত গবেষণায় বিজ্ঞানীদের মনোনিবেশ করার তাগিদ দিতে হবে ও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।৭. সরকারি কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমের পরিধি আরো সম্প্রসারণ করতে হবে।৮. পশু রোগ শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে দেশে একাধিক উন্নতমানের ল্যাবরেটরি স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। বিনামূল্যে প্রাণিসম্পদের বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে হবে। ৯. দুগ্ধ খামারিদের জন্য সহজশর্তে ঋণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ১০. দুগ্ধ শিল্পের জন্য বিশেষ ভর্তুকি বরাদ্দ দিতে হবে।১১. ভারত থেকে দুগ্ধজাত কাঁচা পণ্য যেমন- ছানা, মাখন আমদানি ও অবৈধ পথে আসা বন্ধ করতে হবে।এসবের মধ্য দিয়ে কৃষকদের সার্বিক স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। প্রস্তাবিত ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে কৃষিখাতে উত্তরোত্তর উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে। আশা করি, বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী মহোদয় বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন।এইচআর/বিএ/পিআর
Advertisement