পবিত্র রমজান মাস ব্যাপী রোজা পালনের পাশাপাশি জামাআতের সাথে নামাজ আদায় ছিল মুসলিম উম্মাহর অন্যতম আমল। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের শেষ দিনগুলোতে জামাআতে নামাজ আদায়ের দৃশ্য দেখে আনন্দাশ্রু ঝড়িয়েছিলেন।
Advertisement
এ যে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুনিয়ার জীবনের প্রথম জেহাদের মহা সফলতা।
জামআতে নামাজ আদায় করা মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক বড় জেহাদ। অসংখ্য বনি আদম, আলেম-ওলামা দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই আদায় করে ঠিকই; কিন্তু অনেকেই ইচ্ছা-অনিচ্ছায় এবং কর্ম ব্যস্ততায় জামাআতের সাথে নামাজ আদায় করতে পারেন না।
অথচ ইসলামের অন্যতম মহান দৃশ্য হলো জামাআতে নামাজ আদায়। জামাআতে নামাজ আদায়ের মধ্যে রয়েছে ফেরেশতাগণের সারিবদ্ধ হয়ে আল্লাহ তাআলার ইবাদাতের সাথে সাদৃশ্য।
Advertisement
জামাআতে নামাজ মানুষের পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, পরিচয় লাভ ও সহনশীলতার শিক্ষা দেয় এবং মুসলিম উম্মাহর সম্মান, শক্তি ও একতার নিদর্শন বহন করে।
এ কারণে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মুসলিম; যার মসজিদে যাওয়ার শক্তি রাখে; তাদের জন্য মসজিদে জামাআতে নামাজ আদায় করা ওয়াজিব করেছেন।
আর এই জামাআতে নামাজ আদায়ের বিধান পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য; তা সফর অবস্থায় হোক বা বাড়িতে থাকা অবস্থায় হোক কিংবা নিরাপদ অবস্থায় হোক বা ভয়ের মধ্যে হোক।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস প্রমাণ করে, জামাআতে নামাজ আদায়ে রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত ও মর্যাদা। যার কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
Advertisement
>> হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘একা একা নামাজ আদায়ের চেয়ে জামাআতে নামাজ আদায়ের ফজিলত সাতাশ গুণ বেশি।” অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘পঁচিশ গুণ বেশি।’ (বুখারি, মুসলিম)
>> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার কোনো (নামাজের) ফরজ আদায়ের জন্য (নিজ) ঘরে ওজু করে আল্লাহর কোনো ঘরের (মসজিদ) দিকে রওয়ানা হয়; ওই বান্দার প্রতিটি দুই ধাপের প্রথমটির দ্বারা একটি গোনাহ মাফ হয়ে যায় এবং অপরটির দ্বারা তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়।’ (মুসলিম)
>> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে বা বিকালে মসজিদে গমন করে; আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারির (অতিথির সেবার) ব্যবস্থা করেন, যখন সে সকালে বা বিকালে গমন করে।’ (বুখারি, মুসলিম)
পরিশেষে...রমজানের রোজা পালন কালে দিনের বেলায় জামাআতে নামাজ; রাতের বেলায় তারাবিহ এবং তাহাজ্জুদসহ নফল নামাজে মানুষ যে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভ করেছে; তা ধরে রাখার অন্যতম মাধ্যম হলো জামাআতের সাথে প্রতি ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।
মুমিন মুসলমান যদি জামাআতে নামাজ আদায়ের প্রশিক্ষণ নিজেদের জীবনে জারি রাখে; তবে আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাআতে নামাজ আদায়ের ঘোষিত ফজিলত দান করবেন। সমাজে বিরাজ করবে শান্তি ও শৃঙ্খলা। বন্ধ হবে অন্যায়, হানাহানি ও রাহাজানি। এ মহান রবের ঘোষণা।
আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।’
আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুহাম্মাদিকে জামাআতে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। রমজানের প্রশিক্ষণ জারি রাখার তাওফিক দান করুন। জামাআতে নামাজ আদায়ের পরিপূর্ণ ফজিলত ও মর্যাদা দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস