অবশেষে একে অপরের বাহুতে চির জীবনের জন্য বাধা পড়লেন লিওনেল মেসি এবং আনতোনেল্লা রোকুজ্জো। ২৫ বছরের পরিচয়, প্রায় ৮ থেকে ৯ বছরের প্রেম। অবশেষে সবকিছুকে প্রনয়সূত্রে আবদ্ধ করলেন বিশ্বসেরা এই সেলিব্রিটি জুটি। যদিও এরই মধ্যে দু’জনের কোল আলো করে পৃথিবীতে এসেছে দুটি পুত্র সন্তান।
Advertisement
২০১৬-১৭ ফুটবল মৌসুম শেষ হতে না হতেই আনতোনেল্লার সঙ্গে বিয়ের ঘোষণা দেন মেসি। তারিখটা নির্ধারণ করা হয় তার নিজের ৩০তম জন্মদিনের ঠিক এক সপ্তাহের মাথায়। তবে মেসির বিয়ের ভেন্যু নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। নিজের এবং আনতোনেল্লার জন্মস্থান রোজারিওর এমন এক জায়গাকে মেসি বিয়ের ভেন্যু হিসেবে বেছে নিয়েছেন, যেটা পুরো লাতিন আমেরিকার কুখ্যাত মাফিয়া গ্যাং লস মনোসের আস্তানা।
রোজারিওর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আর্জেন্টিনার অন্য যে কোনো শহরের চেয়ে দ্বিগুণ খারাপ। দেশটির সরকার কর্তৃক পরিচালিত জরিপেই দেখা যায়, পুরো আর্জেন্টিনা যায় অপরাধ হয়, শুধু রোজারিওয় হয় তার দ্বিগুণ। গত পাঁচ বছরেই এই শহরে গ্যাং ওয়ারে নিহত হয়েছেন অন্তত হাজার খানেক মানুষ। এমনই এক শহর এমনকি মাফিয়া আস্তানায় কি না মেসি নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করে ফেললেন।
রোজারিও সিটি সেন্টার হোটেল কমপ্লেক্স এবং ক্যাসিনোয় অনুষ্ঠিত হয়েছে মেসির জমকালো বিয়ের অনুষ্ঠান। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বার্সেলোনা এবং আর্জেন্টিনা দলে মেসির সাবেক এবং বর্তমান সতীর্থরা। ছিলেন নামি-দামি বেশ কিছু সেলিব্রিটি। কারও হিসেব মতে প্রায় ৬০০ সেলিব্রিটি অতিথি আবার মেসির মুখপাত্রের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২৫০ সেলিব্রিটি পরিবার অংশ নিয়েছেন মেসির বিয়েতে।
Advertisement
বিয়ে উপলক্ষে পুরো সিটি সেন্টার কমপ্লেক্স নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়। সাধারণের প্রবেশের অনুমতি ছিল না। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন ইজরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক একজন কর্মকর্তার অধীনে ৪৫০-এর বেশি ওপর নিরাপত্তারক্ষী। আবার পুরো রোজারিও শহরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখতে এদিন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছে শহরের পুলিশ বিভাগ। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অতিথিদের মোবাইল ফোন পর্যন্ত ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল।
মেসির বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন বার্সেলোনার সাবেক এবং বর্তমান ফুটবলাররা। লুইস সুয়ারেজ, নেইমার, জাভি হার্নান্দেজ, সেস ফ্যাব্রেগাস, জর্দি আলবা, সার্জিও বুস্কেটস, স্যামুয়েল ইতো, কার্লোস পুয়োল, জেরার্ড পিকে থেকে শুরু করে অনেক নামি-দামি ফুটবলার। উপস্থিত ছিলেন পিকের বান্ধবী, পপ গায়িকা শাকিরা, সুয়ারেজের স্ত্রী সোফিয়া বালবি, সার্জিও আগুয়েরোর স্ত্রী কারিনা।
স্প্যানিশ ডিজাইনার রোজা ক্লারার বানানো সাদা রংয়ের ওয়েডিং গাউন পরে অতিথিদের সামনে হাজির হন আনতোনেল্লা রোকুজ্জো। মেসি পরেন সাদা শার্ট এবং হালকা অ্যাশ কালারের টাইয়ের সঙ্গে কালো স্যুট।
প্রায় ১৫৫জন সাংবাদিককে অনুষ্ঠান কাভার করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তারা উপস্থিত ছিলেন নির্দিষ্ট সীমানায়। তাদের সামনেই লাল কার্পেট দিয়ে হেঁটে যান অতিথিরা। সেখানেই ছবি তোলেন বর এবং নববধু। রেড কার্পেটের ওপর দিয়ে প্রথম অতিথি হিসেবে হেঁটে যান বার্সার সাবেক ফুটবলার স্যামুয়েল ইতো। তার পেছনে ছিলেন আগুয়েরো এবং তার বন্ধবী কারিনা, সেস ফ্যব্রেগাস এবং দানিয়েলা সিমান, যিনি আবার আনতোনেল্লার ভালো বন্ধুও বটে। এরপর ছিলেন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের খেলোয়াড় এজেকুয়েল লাভেজ্জি।
Advertisement
বার্সায় মেসির ব্রাজিলিয়ান সতীর্থ নেইমার আসলেন একা। আর্জেন্টাইন মিডিয়ার মতে নেইমার তার বান্ধবী ব্রুনা মার্কুয়েজিনকে আসতে বলেছিলেন। তিনি নেইমারকে ‘না’ করে দেন।
নারী অতিথিদের তিনটি করে ড্রেস নিয়ে আসতে উৎসাহ দেয়া হয়েছিল। কারণ যে কোনো ধরনের অনাকাংখিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করা। একই সঙ্গে পুরুষ অতিথিদেরকেও বলা হয়েছিল তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলের শার্ট নিয়ে আসতে।
আর্জেন্টিনা এবং ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক ডিফেন্ডার মারিন ডেমিচেলিসের স্ত্রী, প্লেবয় মডেল এভাঞ্জেলিনা এন্ডারসন নাকি নিয়ে এসেছিলেন ৫টি করে ড্রেস। কারণ, তিনি চেয়েছিলেন অন্য কারও বান্ধবী বা স্ত্রীদের ড্রেসের সঙ্গে যেন তারগুলো মিলে না যায়, তিনি যেন একটু ব্যতিক্রম থাকতে পারেন।
কঠিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানকে পণ্ড করার চেষ্টা করেছিলেন প্রায় ৬০০ কর্মী। যারা কিছুদিন আগেই রোজারিওয় পেপসিকো থেকে চাঁটাই হয়েছিলেন। অনুষ্ঠান পণ্ড করার মাধ্যমে তারা তাদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন এবং চেয়েছিলেন মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে।
মজার একটি ঘটনাও ঘটেছে এ সময়। মেসির দারুণ এক ব্রাজিলিয়ান ভক্ত, যাকে দেখতে পুরোপুরি মেসির মতই মনে হয়, নাম অ্যালেক্স। তিনিও একই দিন এবং একই সময় রোজারিওয় বান্ধবীকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন, তাকে বিয়ে করার জন্য। মেসির বিয়ে যে হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে তার ঠিক বাইরেই তিনি নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
মেসি এবং আনতোনেল্লাকে সবার আগে শুভেচ্ছা জানান তাদের বড় ছেলে থিয়াগো। এ সময় আনতোনেল্লাকে দারুণ এক সারপ্রাইজ দেন মেসি। আনতোনেল্লা জানতেন না যে, মেসি অনুষ্ঠানের থিম সং গাইবার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আর্জেন্টাইন শিল্পি অ্যাবেল পিন্টোসকে। তিনি গাইলেন আনতোনেল্লার সবচেয়ে প্রিয় গান, সিন প্রিন্সিপিও নি ফাইনাল (উইদাউট বিগিনিং অর ইন্ড)।
উরুগুয়ের পপ ব্যান্ড রোম্বাই ও মারামার দারুণ উপস্থাপনা ছিল মেসির বিয়ের অনুষ্ঠানে। সঙ্গে ড্যান্সারের ভুমিকায় ছিলেন সার্জিও আগুয়েরোর স্ত্রী কারিনা। শাকিরা উপস্থিত থাকলেও তিনি আসর মাতিয়েছেন কি না জানা যায়নি।
আইএইচএস/এমএস