বিশেষ প্রতিবেদন

গুলশান হামলার একবছর : নিরাপত্তা শঙ্কা কাটেনি বিদেশিদের

১ জুলাই; গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলার কারণে যে দিনটি বিভীষিকাময় হিসেবে বাংলাদেশের স্মৃতির পাতায় আটকে গেছে। বছর ঘুরে সেই দিন আবারও এসেছে ক্যালেন্ডারে পাতায়। তবে ওই ঘটনার পরে ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিক ও বিদেশিদের মনে যে `অনিরাপত্তা`র ভয় ঢুকেছিল তা আজও পুরোপুরি কাটেনি। ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পরেও আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটে তাদের।

Advertisement

গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এদের মধ্য ১৭ জন বিদেশি ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ২২ জন মারা যায়। জীবিত জিম্মিদের উদ্ধারে সেদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করে। এতে ৬ হামলাকারী জঙ্গিও নিহত হয়।

ওই ঘটনার পর থেকেই নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানান বিদেশি কূটনীতিকরা। দফায় দফায় সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। এসব বৈঠকে বিভিন্ন দাবি দাওয়া তোলে বিভিন্ন দেশ। সরকারও তাদের দাবি অনুযায়ী নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারপরেও নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানিয়েছেন কূটনীতিকরা।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে জাপান দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, `আমাদের (জাপানিদের) টার্গেট করে কোনো হত্যাকাণ্ড বা আক্রমণ হবে সেটা আশা করিনি। তারপরেও তা হয়েছে। আর তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রতি সহায়তা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে আমাদের ধারণা কোনোভাবেই পরিবর্তন হয়নি।`

Advertisement

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপান দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, `এদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট কাজ করছেন। তবুও প্রতি মাস বা সপ্তাহে নানা জায়গায় অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। অনেক লোক এখনও গ্রেফতার হচ্ছে। এজন্য আমরা মনে করি নিরাপত্তা ঝুঁকি এখনও আছে।`

এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন,`আর যাতে কেউ টার্গেটের শিকার না হয়, এজন্য জাপানিরা কি করছে না করছে সেসব বিষয়ে কাউকে তথ্য না দেওয়ার চেষ্টা করছি। এমনকি আমাদের পরিবারের সদস্যরাও এদেশে আছে কি না সে বিষয়টিও গোপন রাখার চেষ্টা করছি।`

হলি আর্টিসানের মতো হামলা আবারও ঘটার আশঙ্কাও রয়েছে বিদেশিদের মধ্যে। গত মে মাসে প্রেস ক্লাবে কূটনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত মিকায়েল হেমনিতি এমন আশঙ্কার কথা জানান। তিনি বলেন,`এখনও অনেক বিধিনিষেধ মেনে আমাদের চলাফেরা করতে হয়। গুলশান হামলার দশ মাস পরেও আমরা ঝুঁকিতে রয়েছি বলে মনে করি।`

হলি আর্টিসান বেকারির ওই হামলায় নিহতদের মধ্যে সাতজন জাপানি নাগরিক, নয়জন ইতালির, ছয়জন বাংলাদেশি, একজন যুক্তরাষ্ট্রের এবং একজন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।

Advertisement

২০১৫ সালে আইএস সন্ত্রাসীদের দ্বারা কয়েকটি জঙ্গি হামলার শিকার হয় ফ্রান্স। ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত সোফি আবার্ট জাগো নিউজকে বলেন, জঙ্গিরা মুক্ত, উদার, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজকে ঘৃণা করে। আমরা যতদিন এ ধরনের সমাজের  প্রতিনিধিত্ব করব, ততদিন এমন নিরাপত্তাহীনতা এবং হুমকি আমাদের জীবনের অংশ হয়ে থাকবে।

তবে বছরজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদারে বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা তিনি।

সোফি আবার্ট বলেন, `এদেশের পুলিশ শক্তহাতে জঙ্গি দমন করছে, যার কারণে নিরাপত্তা হুমকির অনেকটাই কমে এসেছে। তারপরেও অন্যান্যদের মতো বিদেশিরাও লক্ষ্যবস্তু হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন। এ কারণে তারা সতর্ক রয়েছেন।

ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি কুয়েলিনেয়ার জাগো নিউজকে বলেন, `সন্ত্রাস একটি বিশ্বব্যাপী ঘটনা। বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী হামলা চলছে এবং বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। গুলশান হোলি আর্টিসান বেকারিতে হামলার পর শহরের কূটনৈতিক এলাকায় বিদেশিদের নিরাপত্তার জন্য সরকারের পদক্ষেপে প্রশংসনীয়। তবে অবশ্যই উন্নতি সর্বদা সম্ভব। কিন্তু আমি ঢাকায় এবং বাংলাদেশের অন্যান্য অংশে পরিদর্শনের সময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা দেখতে পাই।`একইভাবে বিদেশিদের সুরক্ষায় বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন ঢাকাস্থ পাকিস্তানের হাইকমিশনার রফিউজ্জামান সিদ্দিকী।তিনি জাগো নিউজকে বলেন, `কূটনীতিকদের জন্য (বিশেষ করে পশ্চিমাদেশগুলোর) নিরাপত্তা পরিস্থিতি সবসময়ই বিশাল উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার  নিরাপত্তার উন্নতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পর থেকেই আমরা ঢাকায় নিরাপদবোধ করি।`জেপি/এমএমএ