বিশেষ প্রতিবেদন

চাকরি চান নিহত রবিউলের স্ত্রী

গুলশান হামলায় নিহত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের সহকারি কমিশনার রবিউল ইসলামের অনুপস্থিতি সর্বক্ষণই টের পাচ্ছে তার পরিবার।

Advertisement

পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম মানুষটির চলে যাওয়ার পর সরকার ও পুলিশ বাহিনী থেকে সহানুভূতি মিললেও এখনও পরিবারটির কোনো সদস্যর মেলেনি চাকরি। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জঙ্গি হামলায় নিহত হওয়ায় রবিউলের পরিবার সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে, তার (রবিউলের) স্ত্রী উম্মে সালমাকে যেন একটা চাকরি দেয় সরকার।

গুলশান হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার এক বছর আজ। গত বছরের এই দিন সন্ধ্যার পর গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে জঙ্গিরা।

এটি যে জঙ্গি হামলা প্রথমে তা বোঝা যায়নি। পরে বিষয়টি উপলব্ধি করে রেস্তোরাঁর বাইরে অবস্থান নেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সদস্য। তবে পুর্বানুমান ছাড়াই রেস্তোরাঁর ভেতরে যাওয়ার সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই গ্রেনেড ছোড়ে জঙ্গিরা। ওই হামলায় মারা যান বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন এবং ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) রবিউল করিম।

Advertisement

রবিউল করিম ১৯৮৬ সালে মানিকগঞ্জের কাটিগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাটিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ভালুম আতাউর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে ৩০তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০১২ সালের জুনে সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগ দেন। মাত্র ৪ বছর ১ মাস চাকরির সুযোগ হয়েছিল তার।

রবিউলের স্ত্রীর নাম উম্মে সালমা। রবিউল যখন মারা যান তার স্ত্রী তখন সন্তানসম্ভবা। ৮ বছর বয়সী আরও একটি সন্তান রয়েছে তাদের। নাম সাজিদ। আর রবিউল নিহত হওয়ার পর পৃথিবীর মুখ দেখা মেয়ের নাম কামরুন্নাহার রায়না।

পুলিশে যোগ দেয়ার পর রবিউল সংসারের হাল ধরেছিলেন। পরিবারটিতে একমাত্র রবিউলই চাকরি করতেন।

যোগাযোগ করা হলে রবিউল ইসলামের ভাই শামসুজ্জামান সামস জাগো নিউজকে বলেন, রায়না এখনও বোঝেনি বাবা নেই। কিন্তু ছেলে সাজিদুল অনেকটা বুঝে গেছে। বাবা হারানোর বেদনা ওকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। এই অভাব যে কখনও পূরণ হওয়ার নয়।

Advertisement

শামসুজ্জামান সামস বলেন, আমার বয়স ৩১ হয়ে গেছে। তাই চাকরির প্রত্যাশা আর রাখি না। কিন্তু সরকার কিংবা পুলিশ বাহিনী যদি আমার ভাবির একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতেন তবে খুবই ভাল হতো। এতে ভাবিও বেঁচে থাকার অবলম্বন পেতেন। শোক কাটিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারতেন।

সামস বলেন, ভাই হারানোর পর অনেকের সহমর্মিতা পেয়েছি। পুরো পুলিশ বাহিনী পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ভাবির চোখে স্বামী হারানোর বেদনা, মায়ের চোখে সন্তান হারানো, আর সন্তানের চোখে বাবা হারানোর বেদনা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। এমন করে যেন কোনো পরিবার তার সন্তানকে না হারায়।

সামস বলেন, রবিউল মারা যাওয়ার পর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে এক অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক যোগ্যতা অনুযায়ী সালমাকে একটি চাকরি দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনার কথাও পুলিশ প্রধান জানিয়েছিলেন। তবে এক বছরেও কোনো সুরাহা হয়নি।

জেইউ/এনএফ/পিআর