বিশেষ প্রতিবেদন

গুলশানের পর জঙ্গিদের টার্গেট ছিল রেডিসন

রাজধানীর গুলশানে স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলা কিংবা কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের বাইরে দুই পুলিশকে নির্মমভাবে হত্যা করেই ক্ষান্ত ছিল না জঙ্গিরা। পরিকল্পনা ছিল আরও দুটি বড় ধরনের হামলার।

Advertisement

এর একটি হলো- রাজধানীর এয়ারপোর্ট রোডের আন্তর্জাতিক চেইন হোটেল রেডিসন ব্লুতে অতিথিদের জিম্মি ও হত্যা করা এবং অপর পরিকল্পনাটি ছিল বড় মগবাজারের বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় প্রধান কার্যালয়ে হামলা।

হলি আর্টিসান হামলার এক বছর পূর্তিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্য ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

তারা জানান, গুলশানে হলি আর্টিসানে হামলার ১১ দিন পর গত বছরের ১১ জুলাই হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়া হয় রেডিসন ব্লুর প্রধান ফটক। অনেকেই রেস্টুরেন্টসহ নানা কাজে হোটেলের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন কিন্তু কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বাতিল করা হয় সব হল বুকিংও। হোটেল রেডিসন ব্লুর বাইরে ও ভেতরে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ।

Advertisement

স্টাফ ও হোটেল রুমে গেস্টদের নিরাপত্তা তল্লাশির মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। রেডিসনের মূল ফটকের ভেতরের প্যাসেজ ও পার্কিংয়ে কাউকে হাঁটাচলাও করতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। অতিথিদের মূল গেট থেকে নিজস্ব বাসের মাধ্যমে লবির গেটে নিয়ে যাওয়া হয়।

রেডিসনের এসব প্রস্তুতি দেখে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তখন তারা বলেন, থ্রেট নেই, এটি নিয়মিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করা হলেও সেসময় কেউ মুখ খোলেননি।

অবশেষে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে হামলার আগাম তথ্যের খবর জানা যায়। ২০১৬ সালের সেবা, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য ১৩২ জন পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) দেয়া হয়।

বিপিএমপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বগুড়া জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান। তার বিপিএম পাওয়ার পেছনের কারণ ছিল রেডিসন ব্লুতে হামলার বিষয়ে আগাম তথ্য সংগ্রহ ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

Advertisement

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স সূত্রে জানা যায়, গুলশান হামলার পর জঙ্গি দমনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স স্পেশাল টাস্ক গ্রুপ (এসটিজি) গঠিত হয়। এসপি আসাদুজ্জামানের নির্দেশনা ও নিবিড় তত্ত্বাবধানে নিরলস প্রচেষ্টায় এসটিজি ১৯ জঙ্গিকে গ্রেফতার এবং ১৫টি সম্ভাব্য জঙ্গি হামলা ঠেকিয়ে দেয়। এছাড়া বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ২০ ব্যক্তিকে টার্গেট কিলিংয়ের বিষয়ে আগাম তথ্য সংগ্রহ করে তাদের বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা দেন এই এসপি।

এসটিজির কাছে আরও তথ্য ছিল, ঈদুল ফিতরের পর যেকোনো দিন ৬৮৪-৬৮৬ নম্বর বড় মগবাজারের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ন্যাশনাল হেডকোয়ার্টার্সে অবস্থানরত দেশি-বিদেশিদের জিম্মি করে হত্যা করা হবে। সেটিও প্রতিরোধ করা হয়েছিল ওই সময়।

এছাড়া গুলশান হামলার পর থেকে বিভিন্ন অজ্ঞাত নম্বর থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের এসএমএসের মাধ্যমে দেশের ভিআইপি মন্ত্রী-এমপিদের ওপর হামলার হুমকি দেয়া হয়। কেপিআইভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার তথ্যও পাওয়া যায়। আগাম ওই তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মিন্টু রোডসহ যে সব সড়কে মন্ত্রী-এমপিদের বসবাস সেগুলো জনসাধারণের জন্য বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গুলশান হামলার পর থ্রেট ছিল দেশের অত্যাধুনিক শপিংমল রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের সিনেপ্লেক্স ও যমুনা ফিউচার পার্ক বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার। তবে বাংলাদেশ পুলিশ সেগুলো প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। প্রসঙ্গত, হলি আর্টিসানের ওই হত্যাযজ্ঞের প্রথম দিনই দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৬ জন নিহত হন। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর অভিযানে ছয় হামলাকারী জঙ্গিও নিহত হন। ওই ঘটনার প্রায় দুই মাস পর পুলিশের অভিযানে নারায়ণগঞ্জে নব্য জেএমবির প্রধান ও গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরী নিহত হন। কয়েক মাস পর নিহত হন অপর মাস্টারমাইন্ড ও তামিমের সহযোগী নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান।

গুলশান হামলার ছয়দিন পর অর্থাৎ ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে জঙ্গি হামলার চেষ্টাকালে পুলিশসহ তিনজন নিহত হন। পুলিশের গুলিতে হামলাকারী জঙ্গিও নিহত হন।

এআর/এমএমএ/এমএআর/পিআর