নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি ও কালিয়া থানার ওসি শেখ গণি মিয়াসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে কালিয়া উপজেলার আমতলা গ্রামে এমপি’র দুই গ্রুপের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এমপি মুক্তি নিজেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়ে মসজিদের ভেতর আশ্রয় নেন। এসময় এক সেনা সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশের কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিতে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
Advertisement
বুধবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৯ জনকে আটক করেছে। ব্যাপক পুলিশি অভিযানের মুখে গ্রেফতার এড়াতে গ্রামটি এখন পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার আমতলা গ্রামের জান্নাত শেখ গ্রুপ এবং হান্নান ও শেখ লিকু শেখ গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত দ্বন্দ্ব চলছিল। উভয় গ্রুপই এমপি কবিরুল হক মুক্তির সমর্থিত ও মদদপুষ্ট। উভয় গ্রুপের দ্বন্দ্ব মীমাংসার জন্য এমপি কবিরুল হক মুক্তির মধ্যস্থতায় পূর্বনির্ধারিত দিনে বুধবার বিকেলে আমতলা মাদরাসা চত্বরে কালিয়া থানার ওসি শেখ গণি মিয়াসহ পুলিশের একটি দল ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের অভিযোগ-অনুযোগের শুনানী শুরু হয়।
শুনানিকালে সাবেক পুরুলিয়া ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা লিকু শেখ এমপির নিকট অভিযোগ করেন, ‘জান্নাত আওয়ামী লীগের নেতা হয়েও বিএনপির নেতা-কর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
Advertisement
এসময় জান্নাতের শ্যালক বিএনপি কর্মী রানা শেখ এর প্রতিবাদ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে এমপি-ওসির সামনেই উভয় পক্ষের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও লাঠিসোঠা এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ তুমুল হট্টগোল-মারামারি শুরু হয়। এসময় চেয়ার ছোড়াছুড়িতে এমপি মুক্তি নিজেও সামান্য আহত হন এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে দৌঁড়ে আমতলা মসজিদের ভেতর আশ্রয় নেন।
উভয়পক্ষের সংঘর্ষে হান্নান শেখ-লিকু মেম্বার গ্রুপের ইকবাল শেখ (৫০), শামসুর রহমান (৭০), খাজা নাজিম উদ্দিন শেখ (৬০), সজিব শেখ (১৮) ও ওই গ্রামের বাসিন্দা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসা সেনা সদস্য রজিবুল শেখ (২২) এবং জান্নাত গ্রুপের তাজমিদুল শেখ (৩৫), রিয়াজ শেখ (৩০), সাইফুল শেখ (৩২), আফছার শেখ (৪১) ও রবিউল শেখ (৩৫) আহত হন। পরে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আহতদেরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ঘটনার পর বুধবার রাতে জান্নাত গ্রুপের লোকজন প্রতিপক্ষ ইলিয়াছ শেখ, ফখরুল শেখ ও খাজা মিয়া শেখসহ কয়েকজনের বাড়ি ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই ঘটনায় পুলিশ দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে বুধবার রাতে রবিউল শেখ ও বাচ্চু শেখকে এবং বৃহস্পতিবার সকালে হিরু মিয়া, মোকছেদ মোল্যা, রেযোয়ান শেখ, শহীদ শেখ, খাজা মিয়া, লায়েক শেখ ও ফকরুল ইসলামকে আটক করেছে। পুলিশের অভিযানে নারী ও শিশুরা রয়েছে অজানা আতংকে।
Advertisement
এ প্রসঙ্গে কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ গণি মিয়া বলেন, ‘এমপি মহোদয় ও আমার উপস্থিতিতে আমতলা গ্রামের একটি সালিশ মিটিংয়ে চেয়ার ছোড়াছুড়ির মতো সামান্য একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
এ ঘটনা সম্পর্কে মতামত জানতে নড়াইল-১ আসনের এমপি মো. কবিরুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
হাফিজুল নিলু/এফএ/এমএস