আইলা শেষ হয়েছে সেই কবে। কিন্তু দুর্ভোগের দিন যেন শেষ হচ্ছে না কিছুতেই। পবনার বাঁধটিই কাল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো কয়রার দুই লাখ মানুষের জন্য। সম্প্রতি লবণ পানির চিংড়ি চাষিরা পবনা ক্লোজারটির বেড়িবাঁধ ছিদ্র করায় সেটি আবারো হুমকির মুখে পড়েছে।সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা-২ এর অধীন ১৩-১৪/২ নং পোল্ডারের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধটি ২০০৯ সালের আইলার ছোবলে বিলীন হলেও মূলত জনৈক এক ব্যক্তির লবণ পানির চিংড়ি ঘেরের পাইপ এর ছিদ্রের কারণে বাঁধটি ভাঙা শুরু হয়। সেখান থেকে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ বাঁধ বিলীন হয়ে যায়। দীর্ঘ ভোগান্তির পর ১৬৫ মিটার বাঁধটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে পাউবো। বাঁধ মেরামতে ঠিকাদারের টাকা পরিশোধ হওয়ার আগেই দীর্ঘ ভোগান্তির কথা ভুলে গিয়ে আবারো বাঁধটিতে ছিদ্র করে পাইপ ঢুকানো হচ্ছে। কতিপয় চিংড়ি চাষিরা পাউবোর অনুমতি না নিয়ে, অপরিকল্পিতভাবে বাঁধটি ছিদ্র করে একের পর এক পাইপ বসিয়ে চলেছ। শুধু পবনা ক্লোজারই নয়, হরিণখোলা, কাঠকাটা, ঘাটাখালি ক্লোজারেরও একই অবস্থা। এদিকে অন্য এলাকার বাঁধগুলোতেও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। কয়রার উত্তর বেদকাশী এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ, অজিবর সানা, পীর আলী বলেন, আইলার পর যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ হয়েছে, তা দিয়ে ১২০ কিলোমিটার বাঁধ নতুন করে মেরামত করা যেতো। কিন্তু কি যে হলো তা কেউ জানে না। বাঁধগুলো আবারো হুমকির মুখে পড়েছে। তারা বলেন, ঘের মালিকরা পাইপ বসিয়ে পানি তোলার কারণে এবং ঠিকাদাররা ঠিকমত কাজ না করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র জানায়, কয়রা এলাকার অনেক বাঁধই ঠিকাদাররা যত কম টাকায় পেরেছেন করেছেন। অর্ধকোটি টাকার কাজ সাব ঠিকাদারীর মাধ্যমে করেছেন ৬/৮ লাখ টাকায়। এমন নজির রয়েছে অসংখ্য। বিশেষ করে কয়রার কাঠকাটা থেকে হরিহরপুর বাঁধ নির্মাণের জন্য ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু মাত্র ৮ লাখ টাকায় সেই বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। যা আবারো হুমকির মুখে পড়েছে। এই বাঁধটি মাস দেড়েক আগে সম্পন্ন হয়। নতুন করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে পুরানো বাঁধের উপরে। এরকম অনেক বাঁধই হাতে গোনা ২/১ জন ঠিকাদারের মাধ্যমে করানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন ঠিকাদার। যারা কাজ করেছেন তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় স্টেশন কর্মকর্তা, খুলনার প্রভাবশালী একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে ম্যানেজ করে কাজ সম্পন্ন করেছেন। কেউ কিছু বললে ঠিকাদাররা ওই নেতার হুমকি দেখান বলেও অভিযোগ রয়েছে।এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বলেন, কোনো ঘের মালিক এখন বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে পানি তুলতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কয়রায় এখন মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। যা মেরামতের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে ঠিকাদারদের এবং ঘের মালিকদের সাথে আতাত বা যোগসাজসে বাঁধ ধ্বংস করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মালেক বলেন, কয়রা এবং সাতক্ষীরার ঝুকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের জন্য ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাঁধ মেরামতের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকে সেই পরিমাণ টাকার কাজ বুঝে নেয়া হয়। ঠিকাদারদের সাথে আতাতের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলেও জানান।আলমগীর হান্নান/এসএস/পিআর
Advertisement