দেশজুড়ে

জন্ম নিল জিরাফটির দ্বিতীয় বাচ্চা

গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে দুটি জিরাফের মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই ১৩ জুন সকালে জিরাফ পরিবারে প্রথম বাচ্চা (মাদি) জন্ম নেয়।

Advertisement

এর ১০ দিন পর ২৪ জুন জিরাফ পরিবারে আরও এক বাচ্চা (পুরুষ) জন্ম নিল। এতে আগের শূন্যস্থান পূরণ হলো।

ঈদের আগে পার্কে জিরাফের এ দুই নতুন সদদ্যের আগমনের ফলে পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে যেন খুশির আমেজ লক্ষ করা গেছে।

জানা গেছে, বর্তমানে পার্কে জিরাফের (বাচ্চাসহ) সংখ্যা ১০টি।

Advertisement

সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক মো. আনিসুর রহমান বলেন, জন্ম নেয়া শাবক ও তার মায়ের সুস্থতার বিবেচনায় জিরাফ বেষ্টনী এলাকায় একজন ভেটেরিনারি চিকিৎসকের অধীনে সার্বক্ষণিক পরিচর্যায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাদের স্বাভাবিক খাবার গাজর, ছোলা, কলা, সবুজ ঘাস ও গমের ভূসি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন দেয়া হচ্ছে। নতুন বাচ্চারা দিনভর মায়ের স‌ঙ্গে জিরাফ বেষ্টনীতে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে। শাবকের সঙ্গে মায়ের সখ্যতা দেখে বেজায় খুশি পার্কের কর্মকর্তা এবং পর্যটকরাও।

পার্কে কর্মরত ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার মো. সরোয়ার হোসেন জানান, ২০১৩ সালে ও ২০১৫ সাল পর্যন্ত সাফারিপার্কে চার দফায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ১২টি জিরাফ আনা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে দুইটি এবং ২০১৭ সালের ১৭ মে দুইটিসহ মোট চারটি জিরাফ অসুস্থ হয়ে মারা যায়।

বর্তমানে শাবক জিরাফটি ছাড়া পার্কে তিনটি পুরুষ এবং পাঁচটি মাদি জিরাফ রয়েছে। ১৩ জুন বাচ্চাটি হলো মাদি এবং সর্বশেষ ২৪ জুন জন্ম নেয়া বাচ্চাটি পুরুষ।

প্রসবের পর থেকে বাচ্চাদের নিয়ে মা জিরাফ দুটি বেষ্টনীতে অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে চলাফেরা করছে।

Advertisement

মা ও বাচ্চা জিরাফরা সুস্থ রয়েছে। বাচ্চাগুলো কিছুক্ষণ পরপর মায়ের দুধ পান করছে। খেলা করছে। জিরাফের বাচ্চাদের মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার খেতে অভ্যাস করা হচ্ছে।

মো. সরোয়ার হোসেন জানান, তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সে জিরাফ পূর্ণতাপ্রাপ্ত এবং প্রজননক্ষম হয়। ১৪ থেকে ১৫ মাস গর্ভকালীণ সময়ের পর সাধারণত একটি মা জিরাফ একটি বাচ্চা প্রসব করে। প্রতিটি জিরাফের গড় আয়ু প্রাকৃতিক পরিবেশে ২০ থেকে ২৫ বছর এবং বেষ্টনীযুক্ত পরিবেশে প্রায় ২৮ বছর।

পূর্ণবয়স্ক জিরাফের গড় ওজন ১৬শ থেকে ২৪শ পাউন্ড এবং বাচ্চা জিরাফের গড় ওজন হয় ১০০ থেকে ১১৫ পাউন্ড। পূর্ণ বয়স্ক জিরাফের উচ্চতা ১৯ ফুট এবং তাদের জিহ্বার দৈর্ঘ্য আরও দুই ফুট। এরা উঁচুতে থাকা গাছের পাতা বা তৃণ লম্বা জিহ্বা ব্যবহার করে মুখে টেনে নিয়ে খায়। সাধারণত এরা পানি কম পান করে। পানি পান করার সময় সামনের পা দুটি ছড়িয়ে দিয়ে মাথা নিচু করে পানি পান করে থাকে।

জিরাফ সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে পছন্দ করে। তবে মজার বিষয় হলো প্রজনন সময়ে একাধিক পুরুষ জিরাফ কোনো মাদি জিরাফের সঙ্গে মিলিত হতে গেলে পুরুষ জিরাফরা যুদ্ধে লিপ্ত হয়। পরে বিজয়ী পুরুষ জিরাফই মাদি জিরাফের মিলিত হওয়ার সম্মতি পায়। একটি মাদি জিরাফ ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বাচ্চা প্রসবের ক্ষমতা থাকে।

সাফারি পার্কে দুই জিরাফ মৃত্যুর কারণ ব্যাকটেরিয়া

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রকল্প পরিচালক মো. সামসুল আজম জানান, ১৭ মে দুটি জিরাফ মারা যাওয়ার প্রাথমিক কারণ হিসেবে ক্লস্ট্রিডিয়াম ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নত করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সেন্ট্রাল ডিজিজ ইনভেস্টিগেশন ল্যাবরেটরি ওই তথ্য জানিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের চিকিৎসক মো. নিজাম উদ্দিন চৌধুরী জানান, এ ধরনের ব্যাক‌টেরিয়া সাধারণত বৃষ্টির মধ্যে ও আর্দ্র মাটিতে বেশি বংশবিস্তার করে। এরা তৃণভোজী প্রাণিদের বেশি আক্রমণ করে। এ জীবানু আক্রমণের ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাণিরা মারা যেতে পারে। সাপ, বেজী, পানি ইত্যাদির মাধ্যমে এ জীবাণু বিস্তার লাভ করতে পারে। তবে আগাম প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এদেরকে নটরিয়াস ব্যাক‌টেরিয়া বলা হয়।

আ‌মিনুল ইসলাম/এমএএস/জেডএ