এক মাসের সিয়াম সাধনার পরে আনন্দের ঈদ। ঈদের আনন্দকে পরিপূর্ণ করতে চাই নতুন পোশাক। মেয়েদের ঈদের পোশাকের ক্ষেত্রে সালোয়ার কামিজের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে পরা যায় বলে, তরুণীরা প্রতি বছরেই ঝুঁকে থাকেন এই সালোয়ার কামিজের প্রতি। পাজামা, ওড়না ও কামিজের ভিন্নধর্মী নকশা সালোয়ার কামিজকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে যা সহজেই দৃষ্টি কাড়ে ক্রেতাদের । ভয়েল, পপলিন, প্রিন্ট, আদ্দি কটন, কটন জর্জেট, টিসি সিনথেটিক কালার ইত্যাদি কাপড়ের সমন্বয়ে এবার প্রস্তুত হয়েছে সালোয়ার কামিজ। আবহাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে সালোয়ার কামিজের কাপড় সিলেকশন করা হয়েছে।
Advertisement
সালোয়ার কামিজের পাশাপাশি ওড়নার বৈচিত্র্য এবার লক্ষণীয়, এর কাটিং ডিজাইন এবং লেআউটে রয়েছে ভিন্নতা। সুতার কাজ, ক্রিস্টাল, মেটাল আইটেম এবং কড়ি দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে সালোয়ার কামিজ এবং ওড়নায়। স্টোন এবং স্ট্রিং পাইপের ডিজাইনের সালোয়ার কামিজ এবার বাজারে বেশ। সুতি কাপড়ের চাহিদাও এবার বেশ রয়েছে। পাইপিন এবং টারসোলর সমন্বয়ে কটন এবং এন্ডি কটনের ডিজাইন করা হয়েছে।
ঈদের পোশাকে সাধারণত উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার প্রাধান্য পায়। এবার লাল থেকে শুরু করে নীল, সবুজ, হলুদ, বেগুনি, কমলা, মেজেন্ডাসহ থাকছে সব ক’টা রঙেই। একরঙা পোশাকের ফ্যাশন বদলে একই পোশাকে কয়েক রঙের ব্যবহার এখন বেশি জনপ্রিয়। তাই কখনো এক রঙা কামিজের বডিতে একই রঙের কয়েকটি শেডের কাজ করা হয়েছে। আবার কখনো দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীত রঙের কাজ। কামিজের কাজের সঙ্গে রং মিলিয়ে করা হয়েছে সালোয়ার এবং ওড়নার ডিজাইন। যারা গাঢ় রঙে স্বাচ্ছন্দ্য নন, ফ্যাশন ডিজাইনাররা ভেবেছেন তাদের কথাও। কাপড় হিসেবে সবসময়ের মতো এবারও রয়েছে সুতির জয়জয়কার। পাশাপাশি এন্ডি কটন, তাঁত, হাফ সিল্ক, সিল্ক, মসলিনটাও চলছে বেশ। তবে রেগুলার ডিজাইনের পোশাকেই সবার আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে।
এবারের ঈদ কালেকশনের উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার। একই পোশাকে উজ্জ্বল রঙের পাশাপাশি কন্ট্রাস্ট দেখা যাচ্ছে প্রচুর। একই পোশাকে একাধিক রঙ ব্যবহার করে তৈরী করা হয়েছে বিভিন্ন কামিজ। কাটিংয়ের ক্ষেত্রে কামিজের ঝুলে কখনো তেরছা কখনো বেশি ঘের দেখা যাবে। হাতার ক্ষেত্রে থ্রি কোয়ার্টার ও ফুলস্লিভই এখন বেশি চলছে। পালাজ্জো ও লেগিংসের চাহিদা এবার বেশি। আবার চাপা ডিজাইনের সালোয়ারের পাশাপাশি চুড়িদারও কিনছেন কেউ কেউ।
Advertisement
এই সময়ে কোনোরকম সংকেত ছাড়াই হানা দিতে পারে হঠাৎ বৃষ্টি। পোশাক ডিজাইনে তাই ঈদকে সামনে রেখে ভাবা হয়েছে ঋতু পরিবর্তনের কথাও। এ জন্যই এবারের ঈদের সালোয়ার-কামিজ তৈরি করা হয়েছে তাঁত, সিল্ক, হাফ সিল্ক, অরগ্যান্ডি, মসলিন ও শিপন কাপড়ে। ঈদের আরামদায়ক পোশাক হিসেবে সুতি কাপড়ও এখন অনেক জনপ্রিয়। এসব কামিজে থাকছে ব্লক, কারচুপি, অ্যাপ্লিক, ভরাট অ্যাপ্লিক ও এমব্রয়ডারির কাজ। ঈদ উপলক্ষে সালোয়ার-কামিজে জমকালো ভাব আনতে কামিজের কাজগুলো ভারী রাখা হচ্ছে। গলায় উজ্জ্বল রঙের সুতার কাজ থাকছে। কোনো কামিজের সম্পূর্ণ বডিতে আবার কোনোটির নিচের অংশে সুতার মোটা ও ভরাট ডিজাইন, পট্টি ও লেইস ব্যবহার করা হয়েছে। বাদ যাচ্ছে না পেছনের অংশও। কামিজের হাতায়ও থাকছে ভারী কাজ।
সালোয়ার হচ্ছে কামিজের সঙ্গে কনট্রাস্ট করে। ওড়নায় থাকছে হালকা কাজ। লম্বা কাটিংয়ের কামিজের পাশাপাশি রয়েছে মাঝারি কাটিংয়ের কামিজগুলোও। একছাঁটের এই কামিজগুলো হচ্ছে কিছুটা লুজ ফিটিংয়ের। জনপ্রিয়তা বেশি থ্রি-কোয়ার্টার হাতার। তবে ডিজাইন ও পছন্দভেদে থাকছে ফুল ও স্লিভলেস হাতাও। সালোয়ারের ক্ষেত্রে ক্রেতারা পালাজ্জো ও চুড়িদার সালোয়ার বেছে নিচ্ছেন বেশি। ফ্যাশনের পরিবর্তনের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিটি ফ্যাশন হাউসই কামিজের কাটিং প্যাটার্নে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। আর এই পরিবর্তনের ব্যাপকতা চোখে পড়ার মতো। কামিজের কাটিং, কলার, লে-আউট, ছাপা, ব্লক, বুটিক, বাটিক, লেস ও চুমকির ব্যবহার প্রায় সবকিছুতে ইদানীং বিভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। এখনকার তরুণীরা ট্র্যাডিশনাল পোশাকের পাশাপাশি এই নতুন ধারার ফ্যাশনের সঙ্গে সহজেই নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছেন। সাধ আর সাধ্যের সমন্বয়েই তৈরি হচ্ছে এই পোশাকগুলো। আপনার ঈদকে জমকালো ফ্যাশনের রঙে রাঙাতে দাম থাকছে হাতের নাগালেই।
সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে জুতাটাও হওয়া চাই মানানসই। স্লিপার, হাইহিল বা সেমিহিলের জুতা পরতে পারেন। তবে পুরো ব্যাপারটাই নির্ভর করছে সালোয়ারের ওপর। যেমন ডিজাইনের সালোয়ার তেমন জুতা। পালোজ্জার সঙ্গে সচরাচর স্লিপার জুতাই মানায়। তবে চুড়িদারের সঙ্গে একটু হিল পরাই যায়। দেখতে মন্দ লাগবে না।
ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর ছোট-বড় সব শপিংমলেই রয়েছে নানা ডিজাইন ও রঙের সালোয়ার-কামিজের সমাহার। তাই যেকোনো মার্কেটে গেলেই পাবেন আপনার পছন্দের সালোয়ার-কামিজ। তবে আনস্টিচ সালোয়ার-কামিজ ও তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় মার্কেট ঢাকার গাউছিয়া, নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, ইসলামপুর, বনানী বাজার ও মিরপুর। এখানে আপনার জন্য রয়েছে একই জায়গায় অনেক পোশাক। সব ধরনের কাপড় ও ডিজাইনের পোশাক মিলবে এই জায়গায়। যাদের আগ্রহ ও পছন্দ দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোর পোশাক তারা ঘুরে আসতে পারেন আড়ং, অঞ্জন’স, রঙ, নগরদোলা, সাদাকালো, অন্যমেলা, ক্রে-ক্রাফট, বাংলার মেলা, প্রবর্তনা, বিবিয়ানা, বাসন্তী, দেশালের শোরুমগুলোয়।
Advertisement
এইচএন/এমএস