আইন-আদালত

মওদুদের বাড়ি ভাঙতে আইনি বাধা ছিল না : অ্যাটর্নি জেনারেল

গত চার দশক অবৈধভাবে গুলশানের যে বাড়িটিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বসবাস করে আসছিলেন সেটি ভাঙতে কোনো আইনি বাধা ছিল না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রোববার সকালে রাজউক গুলশান এভিনিউয়ের ১৫৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের একতলা ওই ভবন ভাঙা শুরু করার পর দুপুরে নিজ বাসায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এই কথা বলেন।

Advertisement

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আপিল বিভাগ স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে- এই সম্পত্তিটা গ্রাস করার জন্য কাগজপত্রগুলি জাল জালিয়াতির আশ্রয়ে তৈরি করা হয়েছে। ঊনি কিছু মামলা করেছেন, সেটা উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরে। এই মামলার করণে এই সম্পত্তি ভেঙে ফেলতে কোনো বিধি-নিষেধ নাই।’

আইনি লড়াইয়ে হারের পর গত ৭ জুন রাজধানীর গুলশান এভিনিউর ১৫৯ নম্বর বাড়িটি ছাড়তে হয় মওদুদকে, যেখানে কয়েক দশক ধরে থাকছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওই বাড়িতে উঠেছিলেন তিনি।

বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ওই জমির মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। তার স্ত্রী অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামে এর নিবন্ধন ছিল। একাত্তরে তারা ঢাকা ছাড়লে ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়।

Advertisement

ইনজে মারিয়া প্লাজের মৃত্যুর পর ‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করে মওদুদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির দখল নেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে দুদক মামলা করলে চার বছর আগে শুরু হয় আইনি লড়াই। সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় মওদুদের বিপক্ষে গেলে গত ৭ জুন ওই বাড়ি থেকে তাকে উচ্ছেদ করে রাজউক।

অন্যদিকে নোটিশ না দিয়ে উচ্ছেদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দখলি স্বত্বে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য সরকার ও রাউজকের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা। হাইকোর্টে আলাদাভাবে একটি রিট আবেদনও করেন।

উচ্ছেদের ১৮ দিনের মাথায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রোববার বুলডোজার দিয়ে এক তলা ওই ভবন গুঁড়িয়ে দেয়। রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘আমরা আদালতের আদেশের পর বাড়ির দখল নিয়েছি। এখন ভেঙে ফেলছি।’

অন্যদিকে মওদুদ গুলশানে তার এক ফ্ল্যাটে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই বাড়ি ভাঙার কোনো আদেশ আদালত দেয়নি। ভাঙার বিষয়ে কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি। রাজউক যা করছে, তা গায়ের জোরে। একটা রিট পিটিশন হাইকোর্টে বিচারাধীন, যেটা ২ জুলাই শুনানি হওয়ার কথা। আরেকটা টাইটেল স্যুট ফাইল করেছি নিচের কোর্টে, সেটাও পেন্ডিং আছে শুনানির জন্যে। আমি মনে করি আদালতের বিচারাধীন অবস্থায় এ ধরনের অভিযান সম্পূর্ণভাবে আদালতের প্রতি চরম অবজ্ঞা ছাড়া আর কিছুই নয়।’

Advertisement

মওদুদের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে অ্যাটর্নি জেনারেল তার বাসায় সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের রায়ের পর ওই বাড়ি এখন সরকারি সম্পত্তি। সুতরাং সরকার তা যেভাবে খুশি ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য নোটিশের প্রয়োজন নেই।

মওদুদ বলে আসছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ওই বাড়ির কর্তৃত্ব সরকার বা রাজউককে দেওয়া হয়নি। ওই বাড়ির মূল মালিক এখন ইনজে মারিয়া প্লাজের ছেলে করিম ফ্রানজ সুলায়মান। তার সঙ্গেই তিনি আইনি বোঝাপড়া করতে চান।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মওদুদ আহমদ একবার নিজের ভাইয়ের নামে নামজারি করতে বলছেন, আবার নিজে ওই বাড়ির দখল ফেরত চাইছেন। তার কথার ভেতরেই স্ববিরোধিতা রয়েছে।

এফএইচ/এসএইচএস/এমএস