জাতীয়

৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৮০ ভাগ ভবন ধসে যাবে

রাজধানী ঢাকা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রাণকেন্দ্র। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরও। এখানে ১ কোটির বেশি মানুষের বাস। ভৌগোলিকভাবে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ভূমিকম্প ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায়। দেশে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার ৮০-৮৩ শতাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনার প্রায় ৭৩ শতাংশ মেরামতেরও অযোগ্য হয়ে পড়বে। সম্প্রতি ‘আগামী প্রজন্ম ঢাকা : আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গবেষণাভিত্তিক প্রকাশনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। রাজধানী ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স ও সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশন যৌথভাবে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। ভূমিকম্পের ক্ষতি এড়াতে বিভিন্ন সুপারিশও করেছে তারা। গবেষণানির্ভর প্রকাশনাটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে ঢাকাবাসীর জীবনের নিরাপত্তা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে, একই সঙ্গে জীবনযাত্রার মান নিম্ন হচ্ছে। সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো যদি আশু লাঘব করা না যায়, তবে তা সহসাই ব্যাপক দুর্যোগ আকারে দেখা দিতে পারে এবং নগরবাসীর জীবনে বয়ে আনতে পারে চরম দুর্ভোগ। ভৌগোলিকভাবে এ শহরের অবস্থান ভূমিকম্প ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায়, যেখানে প্লেটের সংযুক্ত স্থলের খুব সন্নিকটে। স্বাধীনতার পর থেকে রাজধানীতে ছোট ও মাঝারি মিলিয়ে ৫০০-এর বেশি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। একদিকে যেমন এ এলাকায় ভূমিকম্প হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে, অন্যদিকে দুর্বল অবকাঠামো, ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা ও দুর্বল ব্যবস্থাপনায় ঢাকা হয়েছে চরমভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। ২০০১ সালে ভারতের গুজরাটে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা থেকে দেখা যায় ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় দীর্ঘদিন ভূমিকম্প না হলে সেখানে প্লেটের সংযোগস্থলে শক্তি জমা হয়ে বড় ভূমিকম্প হতে পারে। বিভিন্ন দেশে শুধু ভূমিকম্পের ঝুঁকি পরিমাপ করে পরিকল্পনার মাধ্যমে ঝুঁকি কমিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হয়েছে। হাইতির ভূমিকম্প ছিল ৭ মাত্রার, যেখানে চিলির ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮.৮। কিন্তু হাইতির ক্ষয়ক্ষতি ছিল চিলির তুলনায় অনেক গুণ বেশি। ভূমিকম্পে বড় দুর্ঘটনা এড়াতে ও রাজধানীকে বাসযোগ্য করতে বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণেরও সুপারিশ জানিয়েছে তারা। এর মধ্যে রয়েছে- বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি সহায়তা নেওয়া, নিম্নাঞ্চলে বালু দিয়ে ভরাট করে নির্মিত বাড়ি চিহ্নিত করা, শহরের ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনার তালিকা করে ভূমিকম্প মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। এ ছাড়া বড় ক্ষতি এড়াতে ভারী শিল্পকে শহরের বাইরে নেওয়া, ভূমিকম্পসহনশীল ভবন নির্মাণে স্থপতি, প্রকৌশলী ও রাজমিস্ত্রিদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, বিদ্যালয়ে দুর্যোগকালীন জরুরি অবস্থায় করণীয় বিষয় অন্তর্ভুক্তির দাবি জানানো হয়। সর্বোপরি ভূমিকম্প রোধে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঝুঁকিমুক্ত মহানগরী গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ‘সম্প্রতি নেপালে বড় মাত্রার ভূমিকম্প বয়ে গেছে। আমাদের দেশেও অনেক স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো চিহ্নিত করতে হবে। এ ছাড়া নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড মানতে হবে।’ সিলেটের ডাউকি ফাটল রেখায় ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে শুধু রাজধানীতেই ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। ১ লাখ ৪০ হাজার ভবনও মাঝারি ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। নরম মাটির ভিতর দিয়ে গ্যাস ও পানির লাইন নেওয়ায় এগুলোও ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ভূমিকম্পে ক্ষতি এড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। খালি জায়গা সংরক্ষণ করতে হবে যাতে আপদকালে তা ব্যবহার করা যায়। নগরায়ণের ক্ষেত্রে শতভাগ বিল্ডিং কোড মানতে হবে।এআরএস/এমএস

Advertisement