ঈদের একদিন আগেও রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার শপিংমল আর দোকানপাটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষণীয় হলেও অভিজাত এলাকা গুলশান ও বনানীতে বিপরীত চিত্র। কোটি টাকার বিনিয়োগের জনপ্রিয় ব্যান্ডের সব দোকান একরকম ক্রেতাশূন্য। সামান্য দুএকজন ক্রেতার উপস্থিতি ঘটলেই বিক্রেতাদের করুণ আবেদন। মন গলানো সেরকম আবেদনের শিকার একজন গণমাধ্যমকর্মী।
Advertisement
নাম না প্রকাশের শর্ত জুড়ে দিয়ে তিনি বললেন, ঈদের বাজার করা শেষ। বিকেলে বনানী সুপার মার্কেটে বউ-বাচ্চা নিয়ে এসেছিলাম শুধুমাত্র একটা পাজামা কিনতে। পরিচিত বিক্রয়কর্মীদের আমার বউয়ের প্রতি অনুরোধ, আপা দাম কমিয়ে রাখব একটা থ্রি-পিচ নেন। ভালো শার্ট আছে স্যারের জন্যে। নিতে হবে না একবার একটু দেখেন পছন্দ হয় কি না।
ক্যাশবাক্সের পেছনে বসা মালিক বললেন, কেনা দামের বেশি রাখব না। যা পছন্দ হয় নেন।
ওই গণমাধ্যমকর্মী জানালেন, নেব না নেব না বলেও ৫টি আইটেম নিয়েছি। দাম নিয়েছে মাত্র আড়াই হাজার টাকা। ক্রেতা হিসেবে তিনি এটিকে পানির দাম বলছেন।
Advertisement
আর দোকানটির মালিক আমিনুল ইসলাম বললেন, ভাই ঈদ উপলক্ষে উঠানো মালের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মাল অবিক্রিত রয়ে যাচ্ছে। কী করব, যে যা বলছে, সামান্য লাভ হলে কিংবা কেনা দাম বললেও দিয়ে দিচ্ছি।
শনিবার বিকেলে গুলশান-২ নম্বর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। সরেজমিন ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। মূলত এখনও জনমনে বিরাজ করছে সেই আতঙ্ক। গুলশান-বনানীসহ এর আশপাশের এলাকাজুড়ে এখনও ভীতি-আতঙ্কের কারণে নিরাপদ ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ এখনও গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। যে কারণে হামলার বছর ঘনালেও সাধারণ ক্রেতারা এসব এলাকা ঈদের বাজার করার তালিকা থেকে বাদ রেখেছেন। আশেপাশের এলাকার শপিংমলে ভিড় জমাচ্ছেন।
দেখা গেছে, দুপুর পর্যন্ত অল্পসংখ্যক ক্রেতা এলেও সন্ধ্যা নাগাদ রেস্টুরেন্ট ও শপিংমলগুলো পুরো ফাঁকা হয়ে যায়। বাড়তি নিরাপত্তা দিতে পুলিশের পাশাপাশি অস্ত্রসহ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চোখেপড়ার মতো নিরাপত্তারক্ষীদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। বাস্তবতা হচ্ছে এখনও একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ গুলশান বনানীর হোটেল, রেস্তোরাঁ কিংবা শপিংমলে আসছেন না।
গুলশানের পিংক সিটি শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রায় ক্রেতাশূন্য। মার্কেটের এক জুয়েলারি দোকানের কর্মকর্তা বলেন, এখানে একসময় প্রতিদিন শতাধিক কাস্টমার আসতেন। আর এখন ঈদের সময়ও দশজন কাস্টমারও নেই। এ রকম চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হবে।
Advertisement
আরএম/বিএ