জাতীয়

যানজটমুক্ত মহাসড়ক, তবে ধীরগতি

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। গতকাল শুক্রবার থেকে রাজধানীর লঞ্চ-বাস টার্মিনাল ও রেল স্টেশনে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

Advertisement

অতিরিক্ত গাড়ির চাপে শুক্রবার মহাসড়কে কিছুটা যানজট লক্ষ্য করা যায়। ধীরগতিতে গাড়ি চলায় একটু ভোগান্তি হলেও সারাদেশের কোথাও তীব্র যানজটের খবর পাওয়া যায়নি।

শনিবার সকাল থেকেও রাজধানীর লঞ্চ ও বাস টার্মিনালগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

এদিন ভোরে রংপুরের পীরগঞ্জে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক উল্টে ১৭ শ্রমিক নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। এবারের ঈদযাত্রায় এটিই হতাহতের সবচেয়ে বড় ঘটনা।

Advertisement

গাবতলীতে গাড়ির জন্য বিক্ষোভ

শনিবার সকালে সরেজমিনে গাবতলী ও কল্যাণপুর বাস টার্মিনালে টিকিট না পাওয়া ও নিকট দূরত্বের যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কাঙ্ক্ষিত রুটের পরিবহন কিংবা টিকিট না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। একপর্যায়ে সমস্যা সমাধানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন যাত্রীরা।

রাজধানীর অন্যতম বড় ও ব্যস্ততম পরিবহন হাব গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল হয়ে বাড়ি যেতে হয় উত্তরবঙ্গ ছাড়াও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষদের। একই রুটের বাসে উঠতে হয় সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, পাবনা, ঝিনাইদহের যাত্রীদেরও। এদের অনেকেই অগ্রীম টিকিট কাটতে পারেননি।

টার্মিনালে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টার্মিনালে গাড়ি নেই। মহাসড়কে গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। ফলে যানজট তেমন না থাকলেও গাড়িগুলো আসতে দেরি করছে।

Advertisement

বগুড়াগামী যাত্রী আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে বলেন, স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে গাবতলীতে এসেছি সকাল ৭টায়। কিন্তু কোনো কাউন্টারে টিকিট নেই, বাসেরও কোনো খবর নেই। বাসের সিডিউলও ঠিক নেই। ঠিক কোন বাসে উঠতে পারব, তাও অনুমান করা যাচ্ছে না। সব মিলে বিপদেই আছি।

ভিড় থাকলেও সদরঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক

শনিবার সকালে সদরঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকেই ঘরমুখো যাত্রীদের নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চ। লঞ্চে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্যণীয়। যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ থাকায় নির্ধারিত সময়ের আগেই ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চ। পাশাপাশি একই গন্তব্যের জন্য একাধিক লঞ্চ নোঙর করা রয়েছে।সংশ্লিষ্টরা জানান, দুপুরের পর ভিড় আরও বাড়তে পারে। কারণ, দুপুরের পরে গার্মেন্টসসহ অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছুটি কার্যকর হবে।

জাগো নিউজের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে জানা যায়, শনিবরা ভোর থেকে মহাসড়কগুলোতে গাড়ির চাপ থাকলেও কোথাও যানজট লক্ষ্য করা যায়নি। অধিক গাড়ির চাপে যাত্রা একটু ধীরগতিতে হচ্ছে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক

দেশের প্রধান দুই মহাসড়ক ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইলে তেমন যানজট লক্ষ্য করা যায়নি। এদিন ভোর থেকে যাত্রী ও পরিবহনের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায় চান্দনা চৌরাস্তার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। ভোগড়া বাইপাস থেকে কোনাবাড়ি হয়ে চন্দ্রা পর্যন্ত সড়কের যানবাহনের চাপ রয়েছে তবে যানজট নেই।

সালানা হাইওয়ে পুলিশের ওসি হোসেন সরকার জানান, কোনাবাড়ি থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত যানবাহনের অনেক চাপ রয়েছে। তবে কোনো দীর্ঘ যানজট নেই।

তিনি আরও জানান, গাজীপুরে দু’দিন আগে বিভিন্ন কলকারখানা ছুটি হওয়ায় অনেকে বাড়ি চলে গেছেন। আজ (শনিবার) দুপুরে বাকি কারখানাগুলো ছুটি হবে। ফলে বিকালের থেকে গাড়ির চাপ আরও বাড়তে পারে।

এদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এ মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে রাবনা বাইপাস এলাকা পর্যন্ত গাড়ির পর্যাপ্ত চাপ থাকলেও যানজট নেই।

এছাড়া মহাসড়কের মির্জাপুর থেকে আশেকপুর বাইপাস পর্যন্ত মহাসড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন টাঙ্গাইল ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট ইফতেখার।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় টোল প্লাজা থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কোনো যানজট ছিল না। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির চাপও বাড়তে দেখা গেছে এ মহাসড়কে।

চাপ নেই পাটুরিয়া ফেরিঘাটে

রাতভর যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকলেও শনিবার সকালের দিকে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। বেলা ১১টা পর্যন্ত ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া অপেক্ষমাণ কোনো যানবাহন ছিল না।

বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন রাসেল জানান, যাত্রীবাহী কোচ, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসগুলো ঘাটে পৌঁছেই ফেরি পারাপার হতে পারছে। তবে দুপুর নাগাদ যানবাহনের চাপ বাড়তে পারে।

সকাল থেকে লঞ্চগুলোতে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।

শিমুলিয়ায় পারাপারের অপেক্ষায় শত শত যান

শিমুলিয়া ঘাটে পারাপারের জন্য প্রায় ছয় শতাধিক যানবাহন রয়েছে ঘাট এলাকায়। বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক গিয়াসউদ্দিন পাটোয়ারি জানান, শনিবার ভোর থেকে ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের পরিবহনের চাপ বাড়তে থাকে। ১৮টি ফেরি দিয়ে এ চাপ সামলানো হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, পণ্যবাহী যান পারাপার এখন বন্ধ রয়েছে।

নৌ-ফাঁড়ি ইনচার্জ সুরুজিত কুমার ঘোষ জানান, সকাল থেকেই যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেশি। ঘাট এলাকায় অন্তত ছয় শতাধিক যাত্রীবাহী যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। যার সারিবদ্ধ লাইন চৌরাস্তা ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া পণ্যবাহী যানবাহনগুলো মহাসড়কের একপাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপ কমলে এগুলো পারাপার করা হবে।

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের শ্রীনগর উপজেলার বেজগাঁও এলাকায় ঢাকা থেকে মাওয়াগামী গুনগুন পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

রংপুর এক্সপ্রেসের শিডিউল মিস

যাত্রীদের নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ৩১ টি আন্তঃনগর ও স্পেশাল ছাড়াও লোকাল ও মেইল ট্রেন মিলিয়ে প্রতিদিন এখন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটে চলছে ৬৭ টি ট্রেন।

শনিবার উত্তরবঙ্গগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন থেকে সকাল ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও ঢাকায় পৌঁছায়নি।স্টেশনের ডিসপ্লেবোর্ডে দেখা যাচ্ছে, রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার সম্ভব্য সময় দেখানো হচ্ছে ১২ টা ৪০ মিনিট।

এমএআর/জেআইএম