দেশজুড়ে

রাঙামাটিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ

দুর্দশার শেষ নেই পাহাড়ের দুর্ভাগা মানুষদের। দুর্ঘটনা-দুর্যোগ লেগেই আছে। সম্প্রতি লংগদুতে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এবং পাহাড় ধসের বিপর্যয় রাঙামাটির সব ক্ষেত্রে বিরুপ প্রভাব ফেলেছে। খাদ্য, অর্থনীতি, যোগাযোগ, পরিবহন, বিদ্যুৎ, পানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে নানা সংকট। ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমেছে মারাত্মক ধস। পরিবহন ব্যয় বেড়ে হয়েছে দেড় থেকে দুইগুণ।

Advertisement

পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ ভেঙে পড়ায় ধস নেমেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। তা ছাড়া যাতায়াত ও পরিবহন বন্ধ হওয়ায় তৈরি হয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। অর্থনৈতিক আর পরিবহন সংকটের কারণে এখন দেখা দিচ্ছে খাদ্য সংকটও।

ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ দুর্গতরা জানান, রাঙামাটির পরিস্থিতি এখনও সব ক্ষেত্রে সংকটময়। ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরাজ করছে স্থবিরতা। এতে অর্থনৈতিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি স্থায়ীভাবে ঠিক না হওয়া পর্যন্ত সংকট কাটবে না। বিদ্যুৎ সংকটও পুরোপুরি কাটেনি। ভারি বৃষ্টিতে পানি ময়লা ও ঘোলাটে হওয়ায় তৈরি হয়েছে খাবার পানির সংকট।

দুর্যোগের টানা আট দিন পর সাময়িকভাবে রাস্তা মেরামতের ফলে ২১ জুন রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে হালকা যান চলাচল শুরু হলেও ভারী যান চলাচলে সচল হয়নি সড়কটি। ফলে সরাসরি পর্যাপ্ত মালামাল পরিবহন করা যাচ্ছে না। সরাসরি বাস সার্ভিস চালু না থাকায় রাঙামাটি থেকে লোকজনকে যাতায়াত করতে হচ্ছে ভেঙে ভেঙে। ফলে ভোগান্তি কাটেনি যাতায়াতকারী লোকজনের। সড়কের সাপছড়ির শালবনে বিধ্বস্ত অংশে মেরামত করা রাস্তা দিয়ে ১ টনের অধিক মালামাল পার করা যাচ্ছে না। একাধিকবার ভেঙে ভেঙে ওঠানামা করে গাড়ি পাল্টিয়ে মালামাল আনা-নেয়া করতে হচ্ছে।

Advertisement

রাঙামাটির বিশাল একটি জনগোষ্ঠী নির্ভরশীল কাঠের ওপর। কিন্তু রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক দিয়ে ভারী যান চলাচল করতে না পারায় কাঠ ব্যবসা ও পরিবহন এখন সম্পূর্ণ বন্ধ। ফলে আয়-উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার বসে আছেন অসংখ্য মানুষ। লোকসান যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

বনরূপা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. সোলাইমান চৌধুরী বলেন, সড়ক যোগাযোগ ভেঙে পড়ায় কাঠ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে শত শত ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কাঠুরিয়া ও জোত মালিক বেকার হয়ে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন। সংকট মোকাবেলায় দ্রুত সড়ক মেরামত দরকার।

রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, পর্যটক আসা-যাওয়া করতে না পারায় পর্যটননির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ কারণেও বহু মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন।

পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে আম ,কাঁঠাল, কলা, আনারসসহ কোটি কোটি টাকার কাঁচা পণ্য। এতে অপূরণীয় লোকসানের শিকার অসংখ্য মানুষ।

Advertisement

বনরূপা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাপস দাশ বলেন, ব্যবসায়ীরা এখন চরম ভোন্তিতে। পরিবহন ব্যয় বেড়েছে অনেকগুণ। ৫০ টাকার খরচের কাটনে এখন পরিবহন করতে হচ্ছে ২৫০ টাকায়। ব্যবসা-বাণিজ্যে মারাত্মক ধস নামছে। এতে অর্থনৈতিক, খাদ্য, পণ্যসহ নানান সংকট দেখা দিচ্ছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক ভারী যান চলাচলের উপযোগী না হওয়া পর্যন্ত সংকট কাটবে না। শুক্রবার রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের শালবন গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম থেকে বড় গাড়িতে করে জ্বালানি তেল নিয়ে আবার সেখান থেকে ছোট গাড়িতে করে পারাপার করানো হচ্ছে। কক্সবাজার থেকে বড় ট্রাকে কয়েকজন মিলে ১৫ হাজার টাকা ভাড়ায় ১০ টন নাপ্পি (শুকটকির লাসাগুড়া, যা পাহাড়িদের বিশেষ ভোগ্যপণ্য) পরিবহন করে এনেছেননাপ্পি ব্যবসায়ী আপ্রু মং রাখাইন।

তিনি বলেন, শালবন থেকে আবার ছোট চারটি গাড়িতে করে নাপ্পিগুলো নিতে হচ্ছে রাঙামাটি শহরে। এতে শ্রমিক খরচ ও গাড়িভাড়া মিলে অতিরক্ত পরিবহন খরচ হচ্ছে ১০ হাজার টাকা।

জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান বলেন, দুর্যোগের পাশাপাশি সংকট মোকাবেলায় প্রশাসন তৎপর রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সংকট দূর করা সম্ভব হয়েছে। দুর্গতদের সহায়তায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চলছে। পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে চলেছে। সুশীল প্রসাদ চাকমা/আরএআর/এমএস