বাতুল আলির বয়স মাত্র ছয় বছর। কিন্তু তার ভয়ার্ত চোখ আর রুগ্ন শরীর দেখে বয়সটা ঠিক অনুমান করা যায় না। তার ওজন ৩৫ পাউন্ডেরও কম। পেট মনে হয় যেন শরীরের সঙ্গে লেগে গেছে।
Advertisement
ইয়েমেনে পুষ্টিহীনতায় ভোগা প্রায় ৫ লাখ শিশুর মধ্যে বাতুল একজন। শুধু বাতুল নয় ইয়েমেনের বহু শিশুই খাবার, পানি এবং পুষ্টিহীনতার অভাবে ঠিকমত দাঁড়াতে বা চলাফেরাও করতে পারে না।
বাতুলের মতই আর একটি শিশু ইসরা। তার মা আলি আনহারি একটি হাসপাতালে ইসরার সঙ্গে বসে ছিলেন। ইসরার চোখ জোড়া কেমন চকচক করছে। তার হাতে আইভি ড্রিপ লাগানো। সে কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে।
আলি আনহারি বলেন, আমি খুব ভয়ে আছি। আমার তিন সন্তানেরই কলেরা। সন্তানরাইতো আমার পৃথিবী। আমি প্রায় আট মাস যাবৎ কোনো বেতন পাচ্ছি না। সন্তানদের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। এজন্য টাকা যোগাড় করতে খুব হিমসিম খেতে হচ্ছে।
Advertisement
ইয়েমেনে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময় কলেরা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু বিশ্বের কোনো সংবাদমাধ্যমের প্রথম পাতায় বা লিড নিউজে এ ধরনের কোনো ঘটনাকে তুলে ধরা হয় না। ইয়েমেনের এমন কঠিন পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো কেন এমন নীরবতা পালন করছে তা বোধগম্য নয়।
ইয়েমেনে প্রায় আড়াই বছর ধরে সংঘাত চলছে। হুথি বিদ্রোহী এবং সাবেক হাদি সরকারের সমর্থক সৌদি জোটের মধ্যে সংঘাত চলছে। এটাকে নীরব যুদ্ধ বলা হচ্ছে কারণ গণমাধ্যমের খুব কমই নজর কাড়তে পেরেছে এই সংঘাত।
ইয়েমেনের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো সম্পর্কে সংবাদ সংগ্রহের জন্য সিএনএনসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাদের সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
শুধুমাত্র জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠনগুলোই সেখানে প্রবেশ করতে পারছে। বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাদি সরকার এবং এর মিত্র সৌদি জোট ওই এলাকায় কোনো সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
Advertisement
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতিসংঘের এক মানবাধিকার কর্মী জানিয়েছেন, যাদের ওই এলাকায় সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়ার কথা তারা সেটা করছেন না। এটা ইয়েমেনি সরকার এবং সৌদি জোটের সমর্থনেই করা হচ্ছে।
কাউকে ওই এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না কারণ বিশ্বের কাছে ওই এলাকার সঠিক চিত্র প্রকাশ করতে চায় না সৌদি জোট।
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার হিসেব অনুযায়ী, দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে। ইউনিসেফ বলছে, কলেরা আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ১শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে ইয়েমেনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে খাদ্য সংকট। দেশটির প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এর মধ্যে ৭০ লাখ মানুষই চরম বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছেন। সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, এ বছরের শেষ নাগাদ দেশটি পুরোপুরি দুর্ভিগে পতিত হবে। কিন্তু এ নিয়ে ফলাও করে কোনো খবর প্রচার করা হচ্ছে না বা বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলো থেকেও সহায়তা আহ্বানের কোনো সুযোগ পাচ্ছে না ইয়েমেনবাসী।
টিটিএন/এমএস