জাতীয়

ঈদে ঘরে ফেরা শুরু

জীবিকার প্রয়োজনে ইট-কাঠের শহরে আবাস গড়লেও রাজধানীবাসীর মন পড়ে থাকে অন্য কোথাও, নিজ গ্রামে। যেখানে রয়েছে মানুষের নাড়ির টান। পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে রাজধানীর বিপুলসংখ্যক মানুষ।

Advertisement

ঈদে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বাস, ট্রেন বা লঞ্চের টিকিটপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত হ্যাপা পোহাতে হয় না মানুষকে। তবুও নিজের জন্মস্থান, গ্রামে ঈদ উদযাপনে উদগ্রীব মানুষ। পথের ভোগান্তি ও দুর্ভোগ নিমিষেই উবে যায় পরিবার-স্বজনদের দেখা মিললে।

ফলে অন্যান্য বছরের মতো এবারো ঈদের ছুটিতে বুধবার থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন মানুষজন।

সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দেখা মিললো হাজারো মানুষের। পথের দুর্ভোগ জেনেও বাড়ি ফেরার আন্দন্দে উদ্বেলিত সবাই।

Advertisement

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিটে আজ থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছেন মানুষ। গত ১২ জুন বিক্রি হয়েছে আজকের (২১ জুন) ট্রেনের টিকিট।

বুধবার কমলাপুরে মানুষের ব্যাপক ভিড় থাকলেও মূলত বৃহস্পতিবা ও শুক্রবার নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষের আসল যুদ্ধ দেখা যাবে বলে মনে করছেন স্টেশনের সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, ঈদের ট্রেনের সূচিতে প্রথমদিনেই দেখা দিয়েছে বিড়ম্বনা। প্রথমদিন সকাল ৯টায় উত্তরবঙ্গগামী রংপুর এক্সপ্রেসের ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা এক ঘণ্টা দেরিতে সকাল ১০টায় ছেড়ে গেছে। এতে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।

স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিলো উত্তরবঙ্গগামী রংপুর এক্সপ্রেস। এই ট্রেনে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে তুলে দিতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী নাইমুল হক।

Advertisement

তিনি বললেন, ভোগান্তি এড়াতে আগেই পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে দিচ্ছি। কারণ আমার যেতে ঈদের আগেরদিন হয়ে যাবে। সে সময় তাদের সঙ্গে নিয়ে যেতে হলে হয়তবা অতিরিক্ত ভিড়ে নিজ সিট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারব না। ফলে আগেই তাদের পাঠিয়ে দিচ্ছি।

তবে প্রথম দিনেই ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রথমদিনের ট্রেনেই মোটামুটি এক ঘণ্টা লেট,এটা খুবই বিরক্তিকর। টিকিটপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ লেগেই আছে।

সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে ২০ জুনের ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন সজিব ও তার বন্ধুরা। তারা রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরবেন তারা।

আলাপকালে সজিব বলেন, দুরপাল্লার যাত্রায় সীমাহীন ভোগান্তি আর যানজটের বিড়ম্বনার কথা চিন্তা করে ঈদের বেশ আগেই বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হচ্ছি। ঈদকে সামনে রেখে বাড়ি ফিরতে পারলেই তখন থেকে ঈদ আনান্দ শুরু হয়ে যায়। বাড়ি পৌঁছাতে পারলে কোনো ভোগান্তির কথা আর মনে থাকে না।

ঈদ যাত্রা শুরুর প্রথমদিন ট্রেনের সার্বিক বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ঈদ যাত্রায় আমরা চেষ্টা করছি যেন সব ট্রেনই ঠিকমতো এসে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাক। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ঈদে বাড়ি ফিরতে পারেন সেজন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। মানুষের ভোগান্তি এড়াতে সব ব্যবস্থা আমরা নেব।

তবে প্রথমদিনেই রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন এক ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়ে যাওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, ট্রেন স্টেশনে পৌঁছাতেই কিছুটা দেরি করেছে। এছাড়া কোচ বিকল থাকায় তা ঠিক করতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে এর প্রভাব অন্য ট্রেনের ওপর পরবে না।

আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত অগ্রিম টিকিটের ট্রেন ছাড়াও বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

এসবের মধ্যে আছে দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল: ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই।

চাঁদপুর স্পেশাল-১: চট্টগ্রাম- চাঁদপুর -চট্টগ্রাম, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই।চাঁদপুর স্পেশাল-২: চট্টগ্রাম- চাঁদপুর -চট্টগ্রাম, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই।

রাজশাহী স্পেশাল: রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই।

পার্বতীপুর স্পেশাল: পার্বতীপর-ঢাকা-পার্বতীপুর, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই।

শোলাকিয়া স্পেশাল-১: ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ- ভৈরববাজার, পবিত্র ঈদের দিন।

শোলাকিয়া স্পেশাল-২: মংমনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-মংমনসিংহ, পবিত্র ঈদের দিন।

এএস/এসআর/পিআর