অর্থনীতি

ভ্যাট আইন স্থগিতের সিদ্ধান্ত

নতুন মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আইন স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ১ জুলাই থেকে এ আইন বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তা আর হচ্ছে না।

Advertisement

আগামী অর্থবছর চলমান ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনই বলবৎ থাকছে। তবে এ আইনের মধ্য থেকেই বাড়ানো হবে ভ্যাটের আওতা ও পরিধি। জোর দেয়া হবে অটোমেশন (স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা) পদ্ধতির ওপর। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ জরুরি সভায় অর্থ সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর এ সিদ্ধান্ত নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। নির্বাচন সামনে রেখে মূলত ব্যবসায়ী ও অন্যান্য পক্ষের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে এ বছরের জন্য নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে গেলেন অর্থমন্ত্রী।

Advertisement

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ভ্যাট আইন স্থগিত হলেও ভ্যাটের আওতা ও পরিধি বাড়ানো হবে। এছাড়া আমদানি শুল্কেও পরিবর্তন আনা হবে।

জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে শুধুমাত্র ভ্যাট খাতেই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা, যা চলতি বছর ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার (৭২ হাজার ৭৬৪ কোটি) তুলনায় ২৫.৪২ শতাংশ বেশি।

এছাড়া আয়কর খাতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের (৭১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা) তুলনায় ১৮.৪০ শতাংশ বেশি।

আমদানি শুল্ক খাতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ২৩ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের (২২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা) তুলনায় ৩৩.৭৩ শতাংশ বেশি।

Advertisement

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হলে প্রস্তাবিত বাজেটের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ২০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি পড়বে। এছাড়া আবগারি শুল্ক খাত থেকে আরও সাড়ে তিনশ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আবগারি শুল্ক বাতিল হলে সেটাও অন্য দিক দিয়ে আয় করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু এটা প্রস্তাবিত বাজেট, তা পরিবর্তন হতেই পারে। কিন্তু এ পরিবর্তন যেন অন্যের ঘাড়ে বোঝা না হয়। অর্থাৎ শুল্ক, ভ্যাট বা করের হার যেন না বাড়ে। এতে বাজেটটি সুষম হবে। তাদের মতে, করের আওতা বাড়ানো দরকার, একই সঙ্গে আদায় নিশ্চিত করতে হবে। এতে রাজস্ব ঘাটতি পূরণ সহজ হবে।

জানা গেছে, গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে আলোচনার জন্য অর্থমন্ত্রী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের মন্ত্রী ও সচিবদের নিয়ে আলাদা একটি বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে ভ্যাট আইন স্থগিত করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে আরোপিত ভ্যাট ও আবগারি শুল্কের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইন ও আবগারি শুল্কের বিষয়ে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বাজেট পাশের আগে এগুলোর সমাধান করতে হবে। বাজেটের প্রভাবে যাতে জনমনে কোনো ধরনের অসন্তোষ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে বাজেট পাশের আগেই এ বিষয়গুলো ঠিক করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

প্রসঙ্গ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চার লাখ ২২৬ কোটি টাকার এ বাজেটে ঘাটতি রয়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। এ ঘাটতি বৈদেশিক ঋণ-সহায়তা ও অভ্যন্তরীণ খাতে ব্যাংকঋণ ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে মেটানোর পরিকল্পনা করছেন অর্থমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্বপ্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা যা চলতি বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার (দুই লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা) তুলনায় ১৮.৬৩ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রিত করের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা যা গত বছরের লক্ষ্যমাত্রা (দুই লাখ তিন হাজার ১৫২ কোটি টাকা) তুলনায় ২২.০৭ শতাংশ বেশি।

সূত্র জানায়, আগামী ২৯ জুলাই বাজেট পাশ হওয়ার কথা ছিল। ঈদের ছুটির কারণে সেটি এক দিন এগিয়ে আনা হয়েছে অর্থাৎ আগামী ২৮ জুলাই বাজেট পাশ হবে।

এমএ/এমএআর/আরআইপি