জাতীয়

ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চের ফিটনেস সনদ বাতিলের সুপারিশ

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নৌপথে সাধারণ মানুষের নিরাপদ যাতায়াতের স্বার্থে ফিটনেস সনদ পাওয়া ত্রুটিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চের সনদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

Advertisement

মঙ্গলবার বিকেলে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির এক জরুরি সংবাদ ব্রিফিংয়ে কমিটির নেতারা এ সুপারিশ পেশ করেন।

নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ নৌপথে চলাচলরত বিভিন্ন নৌযান পরিদর্শন এবং ঈদ উপলক্ষে নৌ-নিরাপত্তায় গৃহীত সরকারি পদক্ষেপের ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানান জাতীয় কমিটির নেতারা।

ঈদ পূর্ববর্তী বিশেষ পর্যবেক্ষণ ও সরেজমিনে পরিদর্শনে প্রাপ্ত অনিয়ম সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে রাজধানীর পুরানা পল্টনে জাতীয় কমিটির কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।

Advertisement

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, বেশ কিছুসংখ্যক ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চকে বার্ষিক সার্ভে (ফিটনেস সনদ) দেয়া হয়েছে। ৪০ বছরের বেশি পুরনো এসব লঞ্চ নৌ-নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

বক্তারা নৌপথে নিরাপদ যাতায়াতের স্বার্থে অবিলম্বে এসব লঞ্চের ফিটনেস সনদ বাতিল এবং ফিটনেস প্রদানের সঙ্গে জড়িত অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরখাস্তের দাবি জানান।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, তাদের অনুসন্ধানে অন্তত চারটি যাত্রীবাহী নৌযানের ফিটনেস প্রদানে অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে; যেগুলোর অর্থনৈতিক আয়ুষ্কািল অনেক আগেই শেষ হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল অধ্যাদেশ (আইএসও) ১৯৭৬ লঙ্ঘন করে নৌ-পরিবহন অধিদফতরের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় থেকে এই লঞ্চগুলোর ফিটনেস সনদ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর নৌপথে চলাচলকারী এমএল শাহ আলী প্লাসের নির্মাণকাল ১৯৬০ সাল। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ নৌপথে চলাচলরত এমএল হৃদয় এক্সপ্রেস ১৯৭৪ সালে, ‘এমএল সোমা এক্সপ্রেস-১ ১৯৭৩ সালে এবং এমএল শাহান ১৯৬৪ সালে তৈরি হয়। অথচ আইএসও-১৯৭৬ এর সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ নৌপথে ৪০ বছরের বেশি পুরানা নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এসব ত্রæটিপূর্ণ নৌযানকে ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ ব্রিফিংয়ে অভিযোগ করা হয়।

Advertisement

তিনি বলেন, এসব নৌযান ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় থেকে সম্প্রতি আরও অন্তত ১০টি লক্কর-ঝক্কড় লঞ্চের ফিটনেস সনদ প্রদানের তথ্য তারা পেয়েছেন। চলতি ঈদ মৌসুমে এসব লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে মেঘনার মতো প্রবল খরস্রোতা নদীতে চলাচল করবে। এতে নৌ নিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং যেকোনো সময় দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে অনাকাঙ্খিত প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।

ফিটনেস প্রদানকারী কর্মকর্তা নৌ পরিবহন অধিদফতরের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক (অতিরিক্ত দায়িত্বে) ড. এস এম নাজমুল হকের বরাত দিয়ে জাতীয় কমিটির সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলা হয়, উল্লেখিত লঞ্চগুলো ৪০ বছরের আগে তৈরি হলেও তখন এগুলোর অবকাঠামো ছিল কাঠের তৈরি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল হক বলেন, পরবর্তী সময়ে এসব নৌযানের অবকাঠামো পরিবর্তন করে স্টিল দ্বারা নির্মাণ করা  হয়েছে। তাই এগুলো চলাচলের জন্য মোটেও ঝুঁকিপূর্ণ নয়।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া, নজরুল গবেষক জি এম সিরাজ, যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি তুসার রেহমান, জাতীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক পূষ্পেন রায়, নদী রক্ষা শপথের সদস্যসচিব জসিম সিকদার প্রমুখ।

এফএইচ/এসআর/আরআইপি