আন্তর্জাতিক

‘আমি সব মুসলিমকে হত্যা করতে চাই’

লন্ডনে মসজিদের বাইরে মুসল্লিদের ওপর ভ্যান চালিয়ে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় একজন নিহত এবং অারও ১০ জন আহত হয়েছেন। হতাহতের সবাই মুসলিম। খবর বিবিসির।

Advertisement

মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) জানিয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে প্রার্থনারত মুসলমানদের ওপর ওই হামলা চালানো হয়েছে। এটা ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামভীতির একটি হিংসাত্মক প্রকাশ। তারা সব মসজিদের আশপাশে বাড়তি নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন।

খালিদ আমিন নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ঘটনার সময় হামলাকারী ব্যক্তি চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমি সব মুসলিমকে হত্যা করতে চাই।’ উত্তর লন্ডনের সেভেন সিস্টার্স রোডে ফিনসবারি পার্ক মসজিদের কাছে ওই হামলা চালানো হয়।

মুসলিম ওয়েলফেয়ার হাউজের ঠিক বাইরেই অনেক মানুষ ইফতার করে এবং নামাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন ঠিক সে সময়ই সাদা রঙের একটি ভ্যান দ্রুতবেগে পথচারীদের ওপর উঠে যায়।

Advertisement

এরপর জরুরি বিভাগে খবর পাঠানো হয়। খবর পেয়েই চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্স ক্রু, প্যারামেডিকেল কর্মী, স্পেশালিস্ট রেসপন্স দল এবং অ্যাডভান্সড ট্রমা ব্যবস্থাপনা দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। অসংখ্য পুলিশ ঘটনাস্থলকে ঘিরে রেখেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রাড বলেছেন, এ হামলাকে পুলিশ একটি সন্ত্রাসী হামলা হিসেবেই দেখছে। কাউন্টার টেরোরিজম সদস্যরা এর তদন্ত শুরু করেছে।

পুলিশ বলছে, ৪৮ বছর বয়সী একজন ভ্যানটি চালিয়ে পথচারীদের ওপর উঠিয়ে দেন এবং পরে ওই হামলাকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা অনেকেই বলছেন, এ হামলার পেছনে একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলে তারা মনে করছেন। যদিও সন্দেহভাজন অন্য কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ বলছে, এ বিষয়ে তাদের তদন্ত চলছে।

Advertisement

সোমবার ভোরের দিকেই পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে হামলায় একজন নিহত হয়েছে। তবে তার নাম বা পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

লন্ডন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস জানিয়েছে, তারা গুরুতর আহত অন্তত আটজনকে এবং অপেক্ষাকৃত কম আহত দুজনকে ঘটনাস্থলে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে। আহতদের পরে রাজধানীর তিনটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এ হামলাকে ভয়ঙ্কর ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেছেন। আক্রান্তদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।

লেবার পার্টির নেতা এবং স্থানীয় এমপি জেরেমি করবিন এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, এমন হামলায় তিনি ভীষণভাবে ব্যথিত।

সেখানকার বিভিন্ন মসজিদ, পুলিশ এবং স্থানীয় কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলেও জানান তিনি।

লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেছেন, এ সম্প্রদায়ের মানুষদের, বিশেষ করে যারা রোজা রাখছেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।

মেয়র বলেন, ‘আমরা এখনও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানি না কিন্তু এটা পরিষ্কারভাবেই লন্ডনবাসীর ওপর ইচ্ছাকৃত একটি হামলা। আর যাদের ওপর হামলা চালানো হয় তাদের অনেকেই পবিত্র রমজানের নামাজ আদায় শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন।

ম্যানচেস্টার, ওয়েস্টমিনিস্টার এবং লন্ডন ব্রিজে ভয়ানক হামলার মতো এটাও নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের ওপর চালানো হামলা। একই সঙ্গে পারস্পরিক সহনশীলতা, স্বাধীনতা এবং শ্রদ্ধাবোধের ওপর হামলা এটি।

ব্রিটেনে মুসলিম কাউন্সিলের মহাসচিব হারুন খান সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে প্রার্থনারতদের ওপর ভ্যান চালিয়ে দেয়ার ঘটনায় তিনি বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ।

উত্তর লন্ডনের ইহুদি সম্প্রদায়ের কাউন্সিলের পক্ষ থেকে টুইটারে এ হামলাকে বর্বরোচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

টিটিএন/জেআইএম