রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ৭ মে থেকে শুরু হওয়া গ্রীষ্মকালীন অবকাশে ক্লাস বন্ধ থাকলেও একাধিক বিভাগে চলছে চূড়ান্ত পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খোলা রাখা হলেও এরই মধ্যে বেশিরভাগ হলে বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ ও ডাইনিং-ক্যান্টিনসহ ক্যাম্পাসের একাধিক খাবারের দোকান। এতে করে নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৭ মে শুরু হয় গ্রীষ্মকালীন ছুটি। আবাসিক হলগুলো আগামী ২১ মে থেকে বন্ধ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ছুটিতে সব বিভাগের ক্লাস বন্ধ থাকলেও চালু রয়েছে চূড়ান্ত পরীক্ষা। এতে অনেক শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে ক্যাম্পাসে। বন্ধের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা, এনিমেল হাজবেন্ড্রি এ্যান্ড ভেটেরিনারি সায়েন্স, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড বায়োটেকনোলজি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দর্শন ও প্রাণিবিদ্যাসহ একাধিক বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলেছে।এছাড়াও পরীক্ষা না থাকলেও বিভাগের সাক্ষাৎকার, ফিল্ডওয়ার্ক, টিউশনিসহ একাধিক কারণে অনেক শিক্ষার্থী বাড়িতে যেতে পারেননি। তাই তাদেরকে বাধ্য হয়ে হলে অবস্থান করতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ১১টি এবং ছাত্রীদের পাঁচটি হলের প্রতিটিতে এখন অন্তত ৪০ জন করে শিক্ষার্থী অবস্থান করছে।কিন্তু কয়েকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাদার বখ্শ, সৈয়দ আমীর আলী, নবাব আব্দুল লতিফ, শাহ মখদুম (এসএম) ও রোকেয়াসহ প্রায় সকল হলে বন্ধ রয়েছে ওয়াইফাই (তারবিহীন ইন্টারনেট) সংযোগ। গত কয়েকদিন ধরে এসব হলে বন্ধ করা হয়েছে ডাইনিং ও ক্যান্টিন। এছাড়াও ক্যাম্পাসের টুকিটাকিসহ বিভিন্ন চত্বরের খাবারের দোকানগুলোও বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েকদিন ধরে। তবে শাহ মখদুম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ক্যান্টিন খোলা থাকায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কিছুটা কমেছে। গত তিন দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল হলের ঝাড়ুদার, মালি ও সুইপাররা নিয়মিত হলে আসছেন না বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে করে হলের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিভাগের গবেষণার কাজ ও টিউশনি করানোর কারণে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ শুরু হলেও বাড়িতে যেতে পারিনি। কিন্তু হলের ওয়াইফাই বন্ধ থাকায় গবেষণার কাজ করতে পারছি না।’দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গত চার বছর ধরেই দেখছি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধের আগের ছয়-সাত দিন এবং পরের ছয়-সাত দিন ডাইনিং-ক্যান্টিনসহ ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হয়। এতে করে হলে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের অনেকভাবে কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়।’তবে শিক্ষার্থীদের হলে ইন্টারনেট, ডাইনিং ইত্যাদি ব্যবস্থা বন্ধ থাকলেও শিক্ষকদের কোয়ার্টারের ইন্টারনেট সংযোগসহ সব কিছু চালু রয়েছে আগের মতোই।বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্যাম্পাসে অবস্থিত শিক্ষকদের কোয়ার্টারের ইন্টারনেট সংযোগ, টেলিফোন সব কিছু চলছে আগের মতোই সচল আছে। শিক্ষার্থীদের হলে ডাউনিং-ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা একটু অবাকই হয়েছেন।কয়েকজন শিক্ষক পরিচয় গোপন রাখা শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন অবকাশে শিক্ষার্থীদের হল বন্ধ হলে শিক্ষকদের কোয়ার্টার কেনো খোলা থাকবে? একই এলাকার মধ্যে থেকে যদি শিক্ষার্থীদের হলের ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে শিক্ষকদের কোয়ার্টারের সংযোগ বন্ধ রাখা উচিৎ।’শহীদ হবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ এসএম এক্রাম উল্যাহ ওয়াইফাই সংযোগের বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার হলে তো ওয়াইফাই সংযোগ রয়েছে। অন্য হলে নেই কেনো তা আমার জানা নেই।’ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলে জানাতে চান তিনি।বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেশি শিক্ষার্থী না থাকায় হলের ডাইনিং-ক্যান্টিন মালিকরা লোকসানের ভয়ে হয়তো বন্ধ রেখেছেন। তবে ওয়াইফাই বন্ধের বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষরা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা তা আমার জানা নেই।’রাশেদ রিন্টু/এআরএ/আরআই
Advertisement