দেশজুড়ে

কচুর লতি দিয়েই ইফতার করেন তারা

‘মানুষ ভেতরের খবর কেবা কইরা জানবো, আমরা কেমনে খাই? এই রমজানে একবেলা করে খাইয়া রোজা আছি। ইফতার কেনার মত পয়সা নাই। তাই কচুর লতি আর পানি খেয়েই ইফতার করি। আমাগো দেখার মত মানুষ নাই। বাবায় বৃদ্ধ হইছে। কাজ করতে পারেন না। পরিবারের ১১ জনকে নিয়া কোনো মতো দিন কাটছে আমাদের।’

Advertisement

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাট জেলার বামন পরিবারের মেয়ে প্রতিবন্ধী ফরিদা আক্তার (৩০)।

তিনি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের গড্ডিমারী গ্রামের সানিয়াজান নদীর তীর ঘেঁষা গুচ্ছ গ্রামের দিনমজুর সোলেমান আলী ও শাহেরা বেগমের মেয়ে। সোলেমান আলী ও শাহেরা বেগম প্রতিবন্ধী বামন চার সন্তান নিয়ে গুচ্ছ গ্রামে বাস করেন। বৃদ্ধ সোলেমান আগের মত দিনমজুরি করতে না পাড়ায় অনেক কষ্টে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সোলেমান আলীর স্ত্রী শাহেরা বেগম ইফতারের আগে কচুর লতি রান্না করে বসে পড়েছেন ইফতার করতে। এভাবে তারা প্রতিদিন ইফতার করেন। চাল বাচাঁতে সকলেই রোজা রাখছেন বলে জানান শাহেরা বেগম।

Advertisement

চার ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় প্রতিবন্ধী বামন ফরিদা আক্তার (৩০)। স্থানীয় তালেব মোড় বাজারে মুদির দোকান করে সংসার চালান। তার ছোট ভাই শাহ আলম হাবিল (২৮) সানিয়াজান নদীতে মাছ ধরে বাজারে বিক্রয় করে যে টাকা পান তা দিয়েই চাল কিনতে হয় তাদের। ছোট আরেক ভাই কাবেল মিয়া (২০) রমজান মাসে গানের জোকারি বন্ধ থাকায় কাজ না পেয়ে বাড়িতে বসে আছেন। সবার ছোট বোন রাশেদা খাতুন (২৩) এবার এইসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

শাহ আলম হাবিল (২৮) ও কাবেল মিয়া (২০) বিয়ে করেছেন। তারা প্রতিবন্ধী বামন হলেও জীবন সংগ্রামে পিছিয়ে থাকতে চান না। কিন্তু শারীরিক গঠন ছোট হওয়ায় তাদের কেউ কাজে নিতে চান না। তারপরও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মুদির দোকান শুরু করেন সবার বড় ফরিদা আক্তার। সেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী।

প্রতিবন্ধী বামন ফরিদা আক্তার জানান, এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে মায়ের জন্য একটা কার্ড চেয়ে অনেক ঘুরেছি। কিন্তু টাকা দিতে পারিনি বলে কার্ড হয়নি।

ফরিদার বাবা সোলেমান আলী বলেন, বাজারে চালের কেজি ৫০ টাকা। ১১ সদস্য নিয়ে বাকী দিনগুলো কীভাবে কাটাব? তিনবেলা খেতে পারবো কি না তা বুঝে উঠতে পারছি না।

Advertisement

এ ব্যাপারে হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে সাবেক ইউপি সদস্য জাকির হোসেন জানান, তারা অনেক কষ্টে জীবন-যাপন করেন। তাদের অভাবের শেষ নেই। কারও সহযোগিতা পেলে পরিবারটি তিনবেলা খেয়ে বাঁচতো।

সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলায় প্রতি বছর তিস্তা ও সানিয়াজান নদীর হিংস্র থাবায় হাজার হাজার পরিবার গৃহহারা হয়ে একবেলা খেয়ে না খেয়ে তিস্তার গাইড বাঁধে আশ্রয় নেন। এসব পরিবারে ঈদের আনন্দ বলতে কিছুই নেই। আছে শুধু না বলার বেদনা।

রবিউল হাসান/আরএআর