অতি দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচি বাতিলের পক্ষে নিজ অবস্থান ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, বর্তমানে আমরা খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
Advertisement
এমনকী আমাদের খাদ্য উদ্বৃত্তও থাকে। সুতরাং নিয়মিতভাবে এখন যথাযোগ্য দাম দিয়ে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করে তা সস্তা দরে গরীব জনগোষ্ঠীর জন্য বিতরণ করা হবে।
সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে পাঠানো একটি চিঠিতে নিজ অবস্থানের কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্তে সমর্থন করেন না অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের গরীব জনগণ কঠিন সমস্যায় পড়বে।
চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ভিজিএফ (সাধারণ) নামে একটি খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম প্রচলিত আছে। এছাড়া দুর্যোগ উপলক্ষে সরাসরি খাদ্য বিতরণের জন্যও খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে যথেষ্ট খাদ্যদ্রব্য পান। আমার মনে হয় এখন ভিজিএফ কার্যক্রম পরিচালনার আর কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। আমরা নিয়মিতভাবে প্রায় পাঁচ মাসের জন্য অনেক খাদ্য বিতরণ করি। সেই খাদ্য বিতরণের জন্য যে বরাদ্দ রাখা হয় সেখানে সমুদয় চাহিদা মেটানোর চেষ্টা আমরা করতে পারি।
Advertisement
চিঠিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে আরও বলা হয়, এখন আমরা মোটামুটিভাবে খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে উদ্বৃত্তও থাকে। সুতরাং নিয়মিতভাবে আমাদের এখন যথাযোগ্য দাম দিয়ে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করতে হবে। সেই খাদ্যদ্রব্য সস্তা দরে একটি উল্লেখযোগ্য গরীব জনগোষ্ঠীর জন্য বিতরণ করতে হবে।
‘তাই আমার প্রস্তাব হলো, আমরা ভিজিএফ কার্যক্রম এখন থেকে বাদ দিয়ে দেব। পরবর্তীতে নিয়মিত কম দামে জাতীয় খাদ্য সরবরাহ কার্যক্রম চালু থাকবে। আপনি রাজি হলে আমরা ভিজিএফ প্রোগ্রামটি এখন থেকে বাদ দিয়ে দিতে পারি।’
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমন জাগো নিউজকে বলেন, ভিজিএফ কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত ঠিক হবে না। কর্মসূচি বন্ধ হলে গরীব মানুষ খুব অসুবিধায় পড়বে। সুতরাং এ ধরনের সিদ্ধান্ত আরও ভেবেচিন্তে নেয়া দরকার।
এদিকে, সরকারের কাছে চাল নেই, তাই অতি দরিদ্রদের ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ খাতে ২০ কেজি করে চাল প্রদান কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে। গত বছর ঈদুল ফিতরে ৬৪ জেলার ৪৮৯ উপজেলায় ৮৮ লাখ দুস্থ পরিবারকে বিনামূল্যে ২০ কেজি করে চাল সরবরাহ করে সরকার। এজন্য এক লাখ ৯৮ হাজার ৩৬৫ টন চাল বরাদ্দ হয়।
Advertisement
এর আগে, ২২ ফেব্রুয়ারি খাদ্য অধিদফতর চালের মজুদের সংকট দেখিয়ে ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ খাতে ২০ কেজির পরিবর্তে ১০ কেজি করে চাল দেয়ার সুপারিশ করে।
কিন্তু পরবর্তীতে পুরো কর্মসূচিই বাতিল করা হয়। বর্তমানে কার্ডধারী প্রায় এক কোটি পরিবার ভিজিএফের সুবিধাভোগী। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোলা বাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) কর্মসূচির আওতায় ১৫ টাকা কেজি দরে যে চাল বিক্রি করা হতো, তাও বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে গরীব মানুষের সামনে বাজার থেকে চড়া দরে চাল কিনে খাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। বাজারে এখন মোটা চালের দাম ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, রাজধানীর ওএমএস কর্মসূচি বন্ধ থাকা নিয়ে খাদ্য অধিদফতরের পরিবেশকরা জানান, দুই সপ্তাহ ধরে সরকার তাদের চাল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এখন আটা দেয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছে আটার চাহিদা কম। এ কারণে আটা বিক্রি করতে উৎসাহী নন তারা।
অবশ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. কায়কোবাদ হোসেন দাবি করেছেন, খোলা বাজারে চাল বিক্রি বন্ধের সঙ্গে চালের মজুদ কমে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি নিয়মানুযায়ী বন্ধ আছে। বছরের এ সময় কৃষকদের কাছ থেকে চাল কেনা হয়।
‘এখন খোলা বাজারে চাল বিক্রি করা হলে সেই চাল কিনে আবার সরকারের কাছে বিক্রির আশঙ্কা থাকে। তবে হাওরে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে দরিদ্রদের মধ্যে কম দামে বা বিনামূল্যে চাল বিতরণ অব্যাহত আছে।’
এদিকে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে মিল মালিকদের গুদামে চাল মজুদের হালনাগাদ তথ্য জানাতে বলেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। মিল মালিকদের কাছে কী পরিমাণে চাল আছে, সেই তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। কেউ চালের বেশি মজুদ করল কীনা, সেই তথ্য সরকার জানে না। এজন্য গুদামে চাল মজুদের হালনাগাদ তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি গুদামগুলোতে এখন চালের মজুদ এক লাখ ৯৮ হাজার টনে নেমেছে। যা গত বছর এ সময়ে ছিল পাঁচ লাখ ৮০ হাজার টন। এছাড়া সরকারি চাল ক্রয় কার্যক্রমেও গতি নেই। ২ মে থেকে শুরু হওয়া চাল ক্রয় কার্যক্রমের আওতায় ৪ জুন পর্যন্ত প্রায় এক মাসে সাত হাজার ৭৫৩ টন সিদ্ধ ও আতপ চাল কিনতে পেরেছে সরকার। যদিও চার মাসে সাত লাখ টন ধান ও আট লাখ টন চাল কেনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
এমইউএইচ/এমএমএ/এমএআর/পিআর