জাতীয়

পাহাড়ে নবী হোসেনের আত্মত্যাগ

নিজের জীবন বিপন্ন করে যে ব্যক্তি পাহাড়ধসে বিধ্বস্ত প্রতিবেশী ও নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের উদ্ধারে প্রথম এগিয়ে এসেছিলেন শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেই নিজের জীবন রক্ষা করতে পারলেন না। এমনকি নিজ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের জীবনও রক্ষা করতে পারেননি নবী হোসেন।

Advertisement

পেশায় গাড়িচালক নবী রাঙামাটি জেলার নতুন পাড়ার বাসিন্দা। গত সোমবারের পাহাড়ধসের ঘটনার পরপরই সর্বপ্রথম তার নেতৃত্বে প্রাথমিক উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।

সোমবার সকালে পাহাড়ধসের ঠিক আগে তিনি নিজ ঘর ছেড়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে তিনি মাইকে পাহাড়ের তলদেশে থাকা বাড়িঘর ছেড়ে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে প্রতিবেশী ও নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের প্রতি আহ্বান জানান।

মাইকে তার ওই আহ্বানে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। কিন্তু তার পরিবারের ছয় সদস্য ঘর থেকে বের হতে পারেননি। ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড় থেকে ধসে পড়া মাটির চাপায় মারা যান তারা।

Advertisement

উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে একপর্যায়ে নিজেও পাহাড়ের ধসে পড়া মাটিতে চাপা পড়েন। তার ঘাড় ও কাঁধ পর্যন্ত কাদামাটিতে তলিয়ে যায়। প্রতিবেশী সিদ্দিক, সেলিম ও আকবর তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করেন।

গুরুতর অসুস্থ নবীকে প্রথমে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে চট্টগ্রাম এবং গতকাল শনিবার তাকে ঢাকায় আনা হয়। ধানমন্ডির ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতালে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় বেঁচে থাকার যুদ্ধে নতিস্বীকার করেন তিনি। হাসপাতালে কর্মরত অনিকা সরকার তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নবীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১৬-এ।

পাহাড়ধসের পর নতুন পাড়ায় শোকের আবহ বিরাজ করছে। এমন সময় তাদের ত্রাণকর্তা নবীর মৃত্যুতে এলাকায় নতুন করে শোকের ছাড়া নেমে এসেছে। শোকে যেন সবাই নির্বাক–মূহ্যমান।

Advertisement

নবীর পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছেন রাঙামাটির বাংলাদেশ বেতারের সাবস্টেশন ভবনে। নতুন পাড়া সামাজিক সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল খালেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নবীর কারণে আমরা আজ বেঁচে আছি। আমাদের এ পাড়ার লোকজন বেঁচে আছে। কিন্তু নিজেকে সে বাঁচিয়ে রাখতে পারল না।

তিনি বলেন, সোমবার সকালে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় নবী নিজের ঘর ফেলে মসজিদে গিয়ে মাইকিং করতে থাকেন। বলতে থাকেন, ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে, আপনারা পাহাড়ের পদদেশ থেকে সরে এসে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসুন। তার কারণে এলাকার অধিকাংশ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। কিন্তু নবী নিজে এবং তার পরিবারকে বাঁচাতে পারল না।

রুবেল ও সুমন নামের দুই পুত্রসন্তান ছাড়া নবীর পরিবারের সবাই (ছয় সদস্য) পাহাড়ধসের কারণে মারা যান। সুমন বর্তমানে চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন এবং রুবেল কাজের কারণে খাগড়াছড়ি থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।

এমএআর/পিআর