দেশজুড়ে

শীতলক্ষ্যা নদীতে চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন নৌ-শ্রমিকেরা

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনায় প্রতিনিয়ত নৌযানের শ্রমিকরা চাঁদাবাজদের হামলার শিকার হচ্ছে। নৌ-পথ নিরাপদ না থাকায় একের পর এক হামলার শিকার হচ্ছে শ্রমিকরা। স্থানীয় বালু সন্ত্রাসীরা চাঁদা না পেয়ে শ্রমিকদের উপর হামলা করছে বলে শ্রমিকদের অভিযোগ ।  জানা গেছে, বুধবার ভোরে শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনায় ৫/৩ বালুবাহী বাল্কহেডের সুকানী সফি আলমকে কুপিয়ে জখম করে নগদ ৬ হাজার টাকা ও রান্না করা মুরগির মাংস লুটে নেয় নৌ-চাঁদাবাজরা। দুর্বৃত্তদের হামলায় সুকানী সফি আলমের ডান হাতে ৭টি সেলাই পড়েছে। তাকে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। একই সময়ে দুর্বৃত্তরা এমবি রেদোয়ান নামের বালুবাহী বাল্কহেডের সুকানী মঞ্জুরুলকে মারধর করে সঙ্গে থাকা নগদ ১৫ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল সেট লুটে নেয়। ওই ঘটনায় নৌশ্রমিকদের পক্ষ থেকে সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে।  নৌযান শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনায় টোকেন কাটার নামে ৭/৮টি ট্রলার থাকে। একেকটি ট্রলারে ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী থাকে। তারা নৌযান শ্রমিকদের উপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। চাঁদা না দিলে শ্রমিকদের মারধর করে তাদের সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ ও মোবাইল লুটে নেয়। এর মধ্যে চাঁদনী ট্রেডার্সের মালিক বন্দরের সুবিধাবাদী কথিত আওয়ামী লীগ নেতা চান মিয়া। বিজয় ট্রেডার্সের মালিক মুন্সিগঞ্জের মহিউদ্দিন। তবে তার পক্ষে নৌ-চাঁদাবাজির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে সোনারগাঁয়ের শম্ভুপুরা ইউনিয়নের মেম্বার নাছির। এছাড়া একই এলাকায় ভুঁইয়া ট্রেডার্সের পক্ষে মুন্সিগঞ্জের আফসার উদ্দিন চেয়ারম্যান ও মেসার্স এবাশা ট্রেডার্সও নৌপথে চাঁদাবাজি করে আসছে। গত ১৬ মার্চ বালুমহালের ইজারাদার বিজয় ট্রেডার্স ও চাঁদনী ট্রেডার্সের চাঁদাবাজির প্রতিবাদে শহরের ৫নং ঘাট এলাকায় মানববন্ধন করে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন। এছাড়া গত ৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ওই দু’টি প্রতিষ্ঠানের চাঁদাবাজি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় শ্রমিক নেতারা যেমন চাঁদাবাজির বিষয়টি তুলে ধরেন তেমনি মালিক সমিতির নেতারাও এর প্রতিকার দাবি করেন। এসময় সভায় শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জানান, চাঁদাবাজির কারণে বালুবাহী বাল্কহেডগুলো রাতের বেলায় চলাচল করে। এতে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। সভায় ডেমরা বাল্কহেড মালিক সমিতির সভাপতি হাজী সিরাজ মিয়া বলেন, বালু মহালের ইজারাদারদের কারণে শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে। সেখানে কোন আইন নেই। এছাড়া ওইদিন চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও প্রদান করে নৌযানের শ্রমিকরা। এদিকে চান মিয়ার বাহিনীর হাতে শুধু যে বিভিন্ন নৌযানের মালিক শ্রমিক কর্মচারীরা নির্যাতিত হচ্ছে তা নয়। হুমকির মুখে রয়েছে সোনারগাঁয়ের অন্তত ১০টি গ্রাম। মেঘনা নদীর তীরের ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া ও বালু সন্ত্রাসীদের অব্যাহত হামলার প্রতিবাদে চান মিয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে গত বছরে একাধিকবার ঝাড়ু মিছিল ও মানববন্ধন করেছে সোনারগাঁ উপজেলার ১০টি গ্রামের এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ ছিলো, গত কয়েক মাস ধরে মেঘনা নদীর তীরবর্তী শম্ভুপুরা, দড়িগাঁও ফতেপুর, ফরদী, এলাহীনগর, গোবিন্দপুর, নয়াগাঁও, গজারিয়ারপাড় সহ ১০ গ্রামের কৃষকদের কয়েক শত বিঘা ইরি, বোরো ধানের ফসলি জমি এবং কয়েকটি স্থানের তিন ফসলি জমি (যেসব স্থানে রবি শস্য হয়) মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই ২০-২৫টি ড্রেজার মেঘনা নদীতে অবস্থান করে থাকে। রাতের বেলা তারা চর ঘেঁষে ড্রেজারের সাহায্যে জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। এ অবস্থা এখনো চলছে। এর আগে চান মিয়া বাহিনী ব্রহ্মপুত্র নদেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছিলো। পরে গ্রামবাসীর বিক্ষোভের মুখে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়। এ বিষয়ে চান মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, তার কোন লোক সেখানে নেই। এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। সোনারগাঁয়ে চাঁদনী ট্রেডার্সের লোকজন নয়, বালু উত্তোলন করছে বাশার ট্রেডার্সের লোকজন। তিনি নারায়ণগঞ্জে কোথাও বালুমহালের ইজারা নেননি। তবে বুধবার সকালে তিনি উক্ত বিষয়টি বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদারের কাছ থেকে শুনেছেন। বিজয় ট্রেডার্সের নাছির মেম্বার জাগো নিউজকে জানান, তাদের কালেকশন ১৫ দিন আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে। তাদের কোন লোক সেখানে নেই। তিনি সকালে ওই মোহনায় ৪টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে টোল আদায় করতো। ওই সময় ৪টি প্রতিষ্ঠান এক সিন্ডিকেটে ছিল। এখন অন্য কেউ করছে কিনা তা তার জানা নেই। বিজয় ট্রেডার্সের পক্ষে তারা নারায়ণগঞ্জে কোন বালুমহাল ইজারা পাননি। একটি তারা পেয়েছিলেন সেটি হাইকোর্টের নির্দেশে বন্ধ রয়েছে। এর আগে শ্রমিক কর্মচারীদের উপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তারা তো আর ঘটনাস্থলে থাকেন না। এজন্য কারা হামলা করছে তা জানতে পারেন না। তবে হামলা বন্ধে কোন প্রতিকার নিয়েছেন কিনা সেটির কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এসএস/আরআইপি

Advertisement