আসন্ন ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেট নিয়ে বাজেট পূর্ব বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানে দেশের তৈরি পোশাক রফতানিতে উৎসে কর বাড়ানোর পাশপাশি রফতানি খাতে সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তা কমিয়ে আনার কথা জানিয়ে আসছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে বাজেটে তৈরি পোশাক খাতের উৎসে কর না বাড়িয়ে সব ধরণের প্রণোদনা অব্যাহত রাখার দাবি তৈরি পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন পুনঃনির্ধারণ ও ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত বছরের এপ্রিলে পোশাক রফতানি আয়ের উপর আরোপিত উৎসে করহার দশমিক ৫ শতাংশ কমানো হয়। অর্থাৎ উৎসে কর দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৩ শতাংশ করা হয়। এদিকে উৎসে করকে চূড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য করে দশমিক ৩ শতাংশ হারে উৎসে কর পাঁচ বছর বহাল রাখার দাবি জানিয়ে আসছে তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।তৈরি পোশাক শিল্প সরাসরি কোনো নগদ সহায়তা পায় না। তবে রফতানিমুখী পোশাক খাতে বস্ত্র বিক্রির উপর ৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা পেয়ে থাকে দেশি বস্ত্র খাত।অর্থমন্ত্রীর ইঙ্গিতকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্রেতাদের দাম কমানো চাপ, পোশাক তৈরির অর্ডার কমে যাওয়া, শ্রমিকের বেতন ও ফ্যাক্টোরির খরচ বৃদ্ধিসহ নানা কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। এই মুহূর্তে এ খাতের উৎসে কর বাড়ানো আর নগদ সহায়তা কমানো মানে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।চ্যালেঞ্জিং এই খাতটির সক্ষমতা বাড়াতে সরকার পোশাক খাতের রফতানিতে উৎসে কর না বাড়িয়ে সব ধরনের প্রণোদনা অব্যাহত রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।উৎসে কর বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) সভাপতি ও তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে তৈরি পোশাক খাত বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। সবধরণের খরচ বেড়েছে। ইউটিলিটি বিল বেড়েছে আগের তুলনায় ৪০ শতাংশ। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও দেশের বাজারে তা কমেনি, ঋণের সুদহারও বেশি। বেড়েছে শ্রমিকের বেতন-বাতা, সব মিলিয়ে আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের রফতানি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ২ শতাংশে। যেখানে আমাদের প্রতিযোগি দেশগুলোর রফতানি প্রবৃদ্ধি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। এমন অবস্থায় পোশাক খাতে আগের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে কিন্তু ভালো দাম মিলছে না। উল্টো ক্রেতারা পোশাকের দাম কমানোর চাপ দিচ্ছেন। এখন পোশাক খাতের আরেকটি চ্যালেঞ্জ দামের সক্ষমতা। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করে আন্তর্জাতিক বাজারে এগিয়ে যেতে হবে। এমন অবস্থায় সরকার পোশাক রফতানিতে উৎসে কর বাড়ায় তাহলে রফতানি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পরবে বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী।মুর্শেদী বলেন, নানা দুর্ঘটনায় আমরা এমনিতেই খারাপ ইমেজে আছি বিদেশি ক্রেতাদের কাছে। তার ওপর রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের মার্কেটকে আরো খারাপ করে দিচ্ছে। আমরা প্রতিযোগি দেশগুলো থেকে আরো পিছিয়ে যাচ্ছি।যে হারে প্রবৃদ্ধি কমছে সেখানে গার্মেন্টস খাত তাদের বাজার ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ। আর পোশাক শিল্পে প্রবৃদ্ধি কমতে থাকলে দেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি নেগেটিভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।তৈরি পোশাক খাত দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড উল্লেখ করে সালাম মুর্শেদী বলেন, এ খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সার্বিক বিবেচনায় উৎসে করসহ সব ধরনের প্রণোদনা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। আমরা আশা করছি অর্থমন্ত্রী তৈরি পোশাক শিল্পের কল্যাণে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখবেন।এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম জাগো নিউজকে বলেন, গত তিন মাস রাজনৈতিক অস্থিরতায় আমাদের কাজ ছিলো না। প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। আর্ন্তজাতিক বাজারে তৈরি পোশাক খাত এখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এ অবস্থায় উৎসে কর বাড়ানো আর রফতানিতে নগদ সহায়তা কমালে বিপদে পরবে পোশাক মালিকরা। বিশেষ করে ছোট ছোট ফ্যাক্টোরিগুলো বেশি সমস্যায় পরবে। আর যে সব প্রতিষ্ঠান এখন ক্ষতির মধ্যে রয়েছে তা অনেক বন্ধ হয়ে যাবে।তৈরি পোশাক শিল্পের এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে এ খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আর্ন্তজাতিক বাজারে টিকিয়ে রাখতে কর না বাড়িয়ে সব ধরনের প্রণোদনা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান শহিদুল্লাহ আজিম।এসআই/আরএস/আরআই
Advertisement