দেশজুড়ে

ঈদ আনন্দ ফিকে হয়ে আসছে মেঘনার চরে

পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি, সবাই যখন ঈদের কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত ঠিক সেই মুহূর্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীর ‘চর’ চরসোনারামপুর গ্রামের মানুষগুলো চরের ভাঙন রোধে সংগ্রাম করছেন।

Advertisement

মাটির বস্তা আর ইট ফেলে নিজেদের ভিটে-মাটি রক্ষার চেষ্টা করছেন চরের অবহেলিত মানুষগুলো। গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের ফলে চরে ভাঙন শুরু হয়েছে। এর ফলে চরের মুসলিম বাসিন্দাদের ঈদের আনন্দও ফিকে হয়ে আসছে। এ মুহূর্তে তাদের কাছে ঈদ আনন্দের চাইতে চরের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটাই যেন মূখ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশুগঞ্জ উাপজেলার মেঘনা নদীর বুকে জন্ম নেয় প্রায় শতবর্ষী চরসোনারামপুর গ্রামে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। চরের এ গ্রামটিতে যুগের পর যুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে একত্রে বসবাস করে আসছেন হিন্দু-মুসলমানরা।

তবে আধুনিক সভ্যতার এ যুগেও চরসোনারামপুর গ্রামটি ঘোর অন্ধকারে রয়েছে। আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত এ গ্রামটিতে এখনো পর্যন্ত বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। সন্ধ্যার পর বিদ্যুতহীন চরসোনামপুর গ্রামটি বিচ্ছিন্ন এক জনপদে রূপ নেয়। পাশাপাশি চরের মূল সমস্যা ভাঙন ঠেকাতেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার। প্রতিবছরই একটু একটু করে মেঘনা নদীতে বীলিন হচ্ছে চরসোনারামপুর গ্রাম।

Advertisement

গত বুধবার (১৪ জুন) দুপুরে চরসোনারামপুর গ্রামের গৃহবধূ লাভলী বেগমের (৩৫) সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের। নকশিকাঁথা সেলাইয়ের ফাঁকে-ফাঁকেই চলে আলাপচারিতা।

লাভলী বলেন, প্রায় ১৭ বছর আগে চরসোনারামপুর গ্রামের বাসিন্দা ফারুক মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের সময় যে বিশাল চরসোনারামপুর গ্রাম তিনি দেখেছিলেন সেই গ্রামের প্রায় অর্ধেকই মেঘনার গর্ভে বীলিন হয়ে গেছে। গেল ক’দিনের ভারী বর্ষণের ফলে চরে ফের ভাঙন শুরু হয়েছে। এখন শুধু একটা চিন্তাই করি কখন যে মেঘনা আমাদের গিলে ফেলে!

তিনি বলতে থাকেন, সামনে ঈদ, অথচ আমাদের মনে কোনো আনন্দ নেই। বেঁচে থাকাটাই যখন দায় তখন আর ঈদের আনন্দ দিয়ে কী করবো? সরকার যদি আমাদের না দেখে তাহলে আমরা কিভাবে বাঁচবো? আপনারা সরকারকে বলেন আমাদের গ্রাম রক্ষার্থে বাঁধ নির্মাণ করে দিতে।

জাগো নিউজজের কাছে আক্ষেপ করে লাভলী আরও বলেন, নির্বাচন এলে প্রার্থীরা আমাদের আশ্বাস দেন চরের ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ করে দিবেন, গ্রামের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু বিজয়ী হওয়ার পর প্রার্থীদের পায়ের চিহ্ন আর আমাদের গ্রামে পড়ে না।

Advertisement

লাভলীর সঙ্গে বসে নকশিকাঁথা সেলাইয়ের কাজ করছিলেন সূরাইয়া বেগম নামে চরসোনারামপুরের আরেক গৃহবধূ। তার স্বামী শরীফ মিয়া নদীর ওপারে আশুগঞ্জ বাজারে একটি দোকানে কাজ করেন।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ছেলে-মেয়েরা নতুন জামা-কাপড় কেনার জন্য বায়না ধরেছে। কিন্তু চরের ভাঙনের কারণে আমাদের মনে শান্তি নেই।

চরসোনারামপুরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ভাই আমাদের মনে ঈদের কোনো আনন্দ নাই। ভাঙনের কারণে চরে আমাদের বসবাস করাটাই এখন কঠিন। আমরা গরীব মানুষ, ভাঙতে ভাঙতে চর যদি একদিন পুরোপুরি বীলিন হয়ে যায় তাহলে তো আমরা অন্য কোথাও গিয়ে বসবাসও করতে পারবো না।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. জিয়াউল হক মৃধা জাগো নিউজকে বলেন, আশুগঞ্জ উপজেলার মধ্যে চরসোনারামপুর গ্রামটি ঝুঁকিপূর্ণ, এটিকে টিকিয়ে রাখাটা কঠিন। তবে চরের ভাঙনের বিষয়টি পানিসম্পদ মন্ত্রীকে আমি অবহিত করেছি। ঈদের পর মন্ত্রী চরসোনারামপুর গ্রাম পরিদর্শনে আসবেন। এরপর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

এফএ/এমএস