জাতীয়

ঈদে সড়ক ও নৌপথে জনদুর্ভোগের আশঙ্কা

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতকরণে সরকারের গৃহিত পদক্ষেপসমূহ পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ করেছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি (এনসিপিএসআরআর)। দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এবারের ঈদযাত্রায় সড়ক ও নৌপথে চরম জনভোগান্তির আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছে।

Advertisement

শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ঈদ-পূর্ববর্তী পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা বলা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার ঈদে এক কোটি ২৯ লাখ মানুষ ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে সড়কপথে ৫৫ শতাংশ, নৌপথে ২৫ শতাংশ এবং রেলপথে ২০ শতাংশ মানুষ এই তিন জেলা ছাড়বে এবং ঈদ-পরবর্তী দ্রুততম সময়ে তারা আবার ফিরে আসবে। এই হিসেবে এবার বাসসহ বিভিন্ন ধরনের সড়কযানে যাবে ৭০ লাখ ৯৫ হাজার মানুষ। আর লঞ্চ-স্টিমার-ট্রলারসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান ও বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন সার্ভিসে যাবে যথাক্রমে ৩২ লাখ ২৫ হাজার ও ২৫ লাখ ৮০ হাজার মানুষ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বজনদের সান্নিধ্যপ্রত্যাশী এসব মানুষ ঈদের দিনসহ ঈদ-পূর্ববর্তী সাত ও ঈদ-পরবর্তী ১০ দিন মিলিয়ে ১৭ দিন যাতায়াত করবে। কিন্তু স্বল্পসময়ের জন্য এই বিপুলসংখ্যক মানুষের নিরাপদ-নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিতকরণে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এমনকি ঈদ-পূর্ববর্তী সময়ে বাস ও লঞ্চের অগ্রিম টিকিট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে গণবিড়ম্বনা, অনেক লঞ্চ-বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও টিকেট কালোবাজারি ঠেকাতে পারেনি প্রশাসন। তবে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়, ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে রেলওয়ের বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম এবং নামিদামি বিলাসবহুল বাস সার্ভিসগুলোর বিরুদ্ধে বাড়তি দামে টিকেট বিক্রির তথ্য-প্রমাণ পায়নি জাতীয় কমিটি।

Advertisement

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রাতে বিভিন্ন নৌপথে বালুবাহী-সিমেন্টবাহী নৌযান, ইঞ্জিনচালিত যাত্রীবাহী ট্রলারসহ অনিবন্ধিত ও ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল বন্ধ করতে পারেনি সরকার। অথচ রাতে এ ধরনের নৌযান চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। একইভাবে পদ্মার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে চলাচলরত ৮৭টি লঞ্চের অধিকাংশই অনেক পুরানা এবং অবকাঠামোগত ও যান্ত্রিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ জেনেও নৌ পরিবহন অধিদফতর এসব লঞ্চের ফিটনেস সনদ দিয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিককালে ঢাকার কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন ডকইয়ার্ডে সামান্য মেরামত ও চটকদারি রঙ লাগিয়ে অনেক লক্কর-ঝক্কড় লঞ্চ ঈদযাত্রী বহনের প্রস্তুতি নিয়েছে; যা নৌ নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

সারা দেশে এক-তৃতীয়াংশের বেশি সড়ক ভাঙাচোরা এবং ঢাকা থেকে দূরপাল্লার সড়কগুলোর ওপর অনেক স্থানেই শত শত অবৈধ স্থাপনা রয়েছে উল্লেখ করে জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ভরা দুর্যোগ মৌসুমে এসব বেহাল সড়কে যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং কষ্টদায়ক। এছাড়া এসব কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজটের মাত্রা স্বাভাবিক সময়ের চেয় অনেক বেশি হবে। এছাড়া খোদ রাজধানীতে বিভিন্ন ওয়ার্কশপে চলাচল অযোগ্য অনেক পুরানা ও দুর্ঘটনাকবলিত বাস মেরামত এবং রঙচঙ করার কাজ এখনও চলছে। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ঈদযাত্রী পরিবহনে এসব বাস ব্যবহৃত হলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, পরিবহনে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সামাল দিতে শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। একইভাবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরিসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সুষ্ঠু ও নিরবিচ্ছিন্ন ফেরি চলাচলের জন্য বাড়তি কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ দুই ফেরিঘাটে যানজটসহ নানা বিশৃঙ্খলা হতে পারে; যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে দেশের অন্যান্য স্থানের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

এফএইচএস/জেএইচ/আরআইপি

Advertisement