দেশজুড়ে

ঈদে চার লেনের কাজ বন্ধের দাবি

আসন্ন ঈদুর ফিতর উপলক্ষে প্রতিদিনই বাড়ছে বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। চার লেন সম্প্রসারণ করণের কাজের পাশাপাশি অতিরিক্ত গাড়ি চলাচলে এ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়েছে।এর ফলে মহাসড়কের অধিকাংশ স্থানেই লেগে থাকছে যানজট।

Advertisement

ঈদের আগ মুহূর্তে এ যানবাহন চলাচলের মাত্রা আরো কয়েকগুন বাড়বে বলে ধারণা করছে মহাসড়কে চলাচলরত পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা সুগম করতে ও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে চার লেনের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা থেকে গাজীপুরের ভোগড়া পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে চার লেন সম্প্রসারণের কাজ। এ উন্নয়ন কাজের জন্য মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে খানা-খন্দক।

মহাসড়কের চলমান উন্নয়ন কাজের এর পাশাপাশি চলাচল করছে প্রতিদিন অন্তত ২৪ হাজার গাড়ি। ঈদের সামনে এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে আরো তিনগুণ। সে সময় গাড়ি চলাচলের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৭৫ হাজার। বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে চলাচল করে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের অন্তত ২৩টি জেলার যানবাহন। এছাড়া টাঙ্গাইলের ধেরুয়া রেল ক্রসিংয়ের উপর দিয়ে উত্তরবঙ্গের ১২টি ট্রেন দিনে ২৪ বার আসা-যাওয়া করছে।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুসেতু মহাসড়কে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় রাস্তা বন্ধ রেখে মহাসড়কের চার লেনে সম্প্রসারণ কাজ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। শুধু টাঙ্গাইল নয়, গাজীপুরের ভোগড়া পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে এ চার লেনের কাজ। মহাসড়কে অনেক অংশ ভেঙেও করা হচ্ছে চার লেনের কাজ। এতে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হওয়া খানা-খন্দক ও রাস্তা খুঁড়ে কাজ করায় যান-চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

এসব জায়গায় যান চলছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। ফলে টাঙ্গাইলের সীমানায় মির্জাপুরের গোড়াই থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত অন্তত ৪৫ কিলোমিটার এলাকার পাকুল্লা, জামুর্কী, করটিয়া, পৌলী ও এলেঙ্গায় প্রায় সময়ই থাকছে গাড়ির ধীরগতি। এছাড়াও দুর্ঘটনা আর বিকল গাড়ির কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।

তবে মহাসড়কে সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় এবারও ঈদে ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছানো কিংবা বাড়ি ফেরা সম্ভব হবে না বলে শংসয় প্রকাশ করছেন গাড়ির চালকরা।

এমতাবস্থায় যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ঈদকে সামনে রেখে চার লেনের উন্নীতকরণের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তবে জেলা পুলিশ বলছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঈদে যানজট এড়াতে নানা কর্মসূচি নেয়া হবে।

Advertisement

এ মহাসড়কে চলাচলকারী কয়েকটি গাড়ির নিয়মিত যাত্রী আকমল হোসেন, বাহাদুর মিয়া, রাশেদ রহমান, শাহেদা আরবী, মমতাজ খানম, নীল কমল সাহাসহ অনেকেই জানান, কর্তব্যরত পুলিশ শুধুমাত্র যানজট হলে তৎপর হয়ে ওঠে। তারা সব সময় তৎপর থাকলে মহাসড়কে যানজট অনেকটাই কম হবে।

এ মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী কয়েকটি দূরপাল্লার বাসের চালক ও সুপারভাইজাররা মনে করেন, চার লেনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ মহাসড়কে যানজট থাকবেই। তবে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যদি নিয়মিত তৎপর থাকে তাহলে অনেকাংশে যানজট কম হবে। ঈদে ঘরমুখো ও ফিরতি মানুষের দুর্ভোগ কমাতে চার লেনের কাজ আপাতত বন্ধ রাখা প্রয়োজন। তাহলে কিছুটা হলেও যাত্রীদের দুর্ভোগ কমবে।

টাঙ্গাইল জেলা বাস-কোচ মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মীর লুৎফর রহমান লালজু বলেন, এ মহাসড়কে প্রতিদিন ২৪ হাজার যানবাহন চলাচল করে থাকে। ঈদের ৪-৫দিন আগে ও পরের ৩-৪দিন প্রতিদিন প্রায় ৭৫ হাজার গাড়ি চলাচল করে। এ অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ মহাসড়কটি সহ্য করতে হিমশিম খায়। চার লেনের কাজ চলা, বিভিন্ন স্থানে খানা-খন্দকের সৃষ্টি হওয়া এবং আগের সড়কের অবস্থাও ভালো না থাকার কারণে এবছরও ঈদে যানজট হচ্ছে।

তিনি মনে করেন, ঈদ মৌসুমের আগে ও পরের ৫-৬দিন মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করা হলে যানজট কম হবে। তাই তিনি চার লেনের কাজ বন্ধ রাখার দাবি জানান।

টাঙ্গাইল জেলা বাস-কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া(বড় মনি) বলেন, মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ তাদের বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকও থাকবে। এর পাশাপাশি ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে চার লেনের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হলে ভালো হয় বলেও জানান তিনি।

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম নূর-এ-আলম বলেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি তাদের বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক মহাড়কের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করবে।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহবুব আলম বলেন, আর যানজটে আটকা পড়ে যাত্রীদের যাতে দুর্ভোগ পোহাতে না হয় সেজন্য জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ রাস্তায় দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ও ঈদে যানজট এড়াতে নানা কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। আমরা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এই চার লেনের কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করছি। আর যেসব জায়গায় যানজট সৃষ্টি হবার সম্ভবনা আছে সেইসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সব সময় উপস্থিত থাকবে বলেও জানান তিনি।

আরিফ উর রহমান টগর/এফএ/জেআইএম