দেশজুড়ে

ঠাকুরগাঁওয়ে আন্তঃনগর ট্রেনের বদলে ‘শাটল ট্রেন’

সরকারের ৯৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলপথ নির্মাণকাজ শেষ হলেও অজ্ঞাত কারণে চালু হচ্ছে না ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় পর্যন্ত সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন।

Advertisement

ফলে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবিতে ফুঁসে উঠেছে দুই জেলার মানুষ। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রেন চালু না হওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে সাধারণ মানুষ। এরপর দীর্ঘদিন আন্তঃনগর ট্রেন চালু না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছে এই দুই জেলার মানুষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার ৯৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০১০ সালের অক্টোবরে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থেকে ঠাকুরগাঁও হয়ে পঞ্চগড় পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটারের মিটার গেজ রেলপথকে আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও ডুয়েল গেজে রূপান্তরের কাজ শুরু করে।

২০১৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তারা দুবার নির্মাণকাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে কাজ শেষ করার অঙ্গীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা ও ম্যাক্র কনস্ট্রাকশন।

Advertisement

এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৯০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ১৩১টি ছোট ব্রিজ ও ৩টি বড় ব্রিজ পুনর্নির্মাণ ও মন্মথপুর, চিরিরবন্দর, কাউগাঁও, কাঞ্চন, বিরল, মঙ্গলপুর, সেতাবগঞ্জ, পীরগঞ্জ এবং ভোমরাদহ রেলস্টেশন পুনর্নির্মাণ শেষ হয়েছে।

কিন্তু এ কাজ শেষ করতে প্রায় সাত বছর লেগে যায়। শেষ হওয়ার পরও এ রুটে ঢাকাগামী ব্রডগেজ লাইনের ট্রেন চলাচল শুরু করা সম্ভব হয়নি।

ঠাকুরগাঁও রোড এলাকার ব্যবসায়ী জমির উদ্দিন জানান, দীর্ঘ সাত বছর ধরে অপেক্ষায় আছি কবে আন্তঃনগর ট্রেন চালু হবে। সরকার এতো কোটি টাকা ব্যয়ে রেললাইন নির্মাণ করল কিন্তু এখন ট্রেন চালু হলে নাকি লোকসান গুনতে হবে। এরই অজুহাতে আন্তঃনগর ট্রেন চালু হচ্ছে না ঠাকুরগাঁওয়ে। ফলে ‘আশাই যেন মরীচিকায়’ পরিণত হয়েছে আমাদের।

নারগুন এলাকার কৃষক পারভেজ হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁও কৃষিপ্রধান এলাকা। প্রচুর পরিমাণ ধান, গম, ভুট্টা, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়। বাইরে থেকে পাইকার আসলে পরিবহন খরচের কারণে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাই না আমরা। মনে করেছিলাম ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ট্রেন চালু হলে আমাদের জেলার কৃষিপণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কম খরচে পাঠানো সম্ভব হত। কিন্তু কি কারণে সরকার এ অঞ্চলে ট্রেন চালু করছে না, বুঝি না।

Advertisement

ঠাকুরগাঁও সুজনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চালুর। সরকার জনগণের কথা চিন্তা করে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেললাইন নির্মাণ করেছে। কিন্তু এখন নাকি ট্রেন চালু হলে লোকসান গুনতে হবে এমন অজুহাতের কথা উঠিয়ে ট্রেন চালু করছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ দ্রুত আন্তঃনগর ট্রেন চালু করে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের মানুষের আশার সঞ্চার ঘটান।

ঠাকুরগাঁও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা বিশাল রহমান জানান, আন্তঃনগর ট্রেন না দিয়ে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে শাটল ট্রেন চালু হচ্ছে। আমরা শাটল ট্রেন চাই না, সরাসরি ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেন চাই। তাই এরই দাবিতে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী এই দুই জেলায় আন্তঃনগর ট্রেন চালুর ঘোষণা না দিলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, জেলার মানুষের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবারও আবেদন করা হবে।

উল্লেখ্য, আগামী ১৭ জুন সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চালু না করে পঞ্চগড় থেকে শাটল ট্রেন উদ্বোধন করতে আসছেন রেলমন্ত্রী। এ খবরে বিক্ষুব্ধ পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আসছে। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচিও হাতে নিচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন।

এএম/জেআইএম