‘প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারত আমার খুব পছন্দ। একসময় ক্রিকেটে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া বা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে যে বাড়তি প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা উত্তেজনা থাকতো, এখন সেই জায়গা নিয়েছে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ। ২০০৭ সালে চ্যাম্পিয়ন হতে যাওয়া ভারতের বিশ্বকাপ শেষ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ। আর গত বিশ্বকাপে ভারত অন্যায়ভাবে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছিল। বিশ্বকাপের পর ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। ফলে র্যাং কিং যাই হোক, বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ এখন সমানে সমান। সত্যি কথা বলতে কি ২০০৭ এর পর বাংলাদেশকে দেখলে একটু নার্ভাস হয়ে যায় ভারত। তাই সেমি ফাইনালে দারুণ এক ম্যাচ দেখার আশা করতেই পারে ক্রিকেট বিশ্ব।
Advertisement
এই ম্যাচকে সামনে রেখে সামাজিক মাধ্যমে অনেক ট্রল হবে, অনেক ফান হবে। তবে সেই ফানটা যেন খেলার সীমা ছাড়িয়ে না যায়। যেন অশ্লীল ব্যক্তি আক্রমণে না যায়। তবে ভারতীয়রা উল্টাপাল্টা কিছু করলে শ্লীলতার সীমা মেনেই তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে হবে। ভারতকে সামনে পেলে আমার খালি মাশরাফির সেই ডায়ালগটার কথা মনে হয়, ধরে দিবানি।‘বাংলাদেশ-ভারত সেমিফাইনাল নিশ্চিত হওয়ার পর ফেসবুকে আমি এই স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। তাতে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। ভারত থেকে সন্দ্বীপ হাজরা লিখেছেন, ‘আপনাদেরকে ফ্রিডম এনে দিয়েছিলাম আমরা। আমাদের জন্য আজ বাংলাদেশ স্বাধীন। সেই আমাদের দেশকে খারাপ কথা বলতে লজ্জা করে না। এটা একটা ম্যাচ আর কিছু না। এটাকে নিয়ে নোংরামি করবেন না। মে দ্যা বেস্ট টিম উইন।’
সন্দ্বীপ হাজরার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। সেরা দল মাঠে খেলে জিতুক আমাদের আপত্তি নেই। তিনি নোংরামি না করতে বলেছেন, আমিও তাই বলেছি। তবে তার মন্তব্যের প্রথম অংশ নিয়ে আমার তীব্র আপত্তি। একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের পাশে ছিল, ৬ ডিসেম্বর তারা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাড়িয়ে পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, অনেকে শহীদ হয়েছেন। তাদের এই সহায়তার জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ, কিন্তু নত নই। ভারত আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, এটা ঠিক নয়। এটা বললে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়, আমাদের অর্জনকে ম্লান করা হয়। আমাদের স্বাধীনতা নয়মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত আর কোটি শরণার্থীর ত্যাগে অর্জিত। কোনো দেশের এনে দেয়া নয়। এটা ঠিক, তখন ভারত আমাদের অর্থ দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে, আশ্রয় দিয়ে সহায়তা না করলে যুদ্ধটা আমাদের জন্য আরো অনেক কঠিন হতো। তখনকার ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধী ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। সব ঠিক আছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখন স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। এখন সবকিছু নির্ধারিত হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আর সমতার ভিত্তিতে। ভারত একাত্তরে আমাদের সহায়তা করেছে বলেই, এখন তাদের কোনো অন্যায় আবদার, অন্যায্য আচরণ মানতে হবে; এসন কোনো কথা নেই।
অনেকে খেলার সাথে রাজনীতি মেলাতে চান না। মেলাতে না পারলে ভালো। কিন্তু আমি সবসময় পারি না। পারি না বলেই, অনেক গ্রেট খেলোয়াড় থাকলেও কোনোদিন এক সেকেন্ডের জন্যও পাকিস্তানকে সমর্থন করিনি। বাংলাদেশ খেলা শুরুর আগে আমি ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের সমর্থক ছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থানের পর আমি শুধু বাংলাদেশের সমর্থক। আমার সব হিসাব-নিকাশ বাংলাদেশকে কেন্দ্র। এই যেমন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে আমি একদিনের জন্য ইংল্যান্ডের সমর্থক বনে গিয়েছিলাম। কারণ ইংল্যান্ড জিতলে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে যাবে। সেদিন আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেছেন, পরিস্থিতি এমন হলে আমি একদিনের জন্য হলেও পাকিস্তানকে সমর্থন করবো কিনা। প্রশ্নটা শুনে একটু ধাক্বা খেয়েছি। কিন্তু দ্বিধা ছাড়াই বলেছি, অবশ্যই, বাংলাদেশের জন্য একদিনের জন্য পাকিস্তানকে সমর্থন করতেও আপত্তি নেই আমার। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। যুদ্ধ এবং ভালোবাসার কোনো আইন নেই।
Advertisement
আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। কিন্তু অন্য সব দেশকেও সম্মান করি। আমি যেমন বাংলাদেশকে ভালোবাসি, তেমনি একজন ভারতীয়ও তো তার দেশকে ভালোবাসে। তাই এমন কিছু বলা উচিত না বা করা উচিত না, যা অন্য আরেকজনের দেশপ্রেমের অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারে। কিভাবে জানি না, তসলিমা নাসরিন পারেন। গত বিশ্বকাপে একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশেরও জয় চেয়েছেন, ভারতেরও। কিন্তু আমি এখনও তার মত বিশ্ব নাগরিক হয়ে উঠতে পারিনি। আমার কাছে বাংলাদেশই প্রথম এবং একমাত্র ভালোবাসা। আর খেলা দেখতে বসে নিরপেক্ষ থাকা খুব কঠিন। কোনো একটা দলকে সমর্থন না করলে খেলা দেখার আনন্দটা পূর্ণ হয় না। তবে খেলা দেখতে দেখতে আমরা কখনো কখনো খেলাকে যুদ্ধ বানিয়ে ফেলি। সমস্যাটা এখানেই।
এমনিতে পাকিস্তান ও ইসরায়েল ছাড়া অন্য কোনো দেশের ব্যাপারে আমার বিদ্বেষ নেই। পাকিস্তান আর ইসরায়েলের প্রতি বিদ্বেষটা কাটাতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু চেষ্টা করেও গণহত্যাকারী পাকিস্তান আর দখলদার ইসরায়েলকে মেনে নিতে পারি না। আমি ভারতবিদ্বেষী তো নইই, বরং নানা কারণে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা আছে। ভাষা-সংস্কৃতি নানান মিলের কারণে আমরা অনেক কাছাকাছিও। হূমায়ুন আহমেদ আর ইমদাদুল হক মিলনের আগে বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের বাজার ছিল ভারতীয় বাঙালি লেখকদের দখলে। ছেলেবেলায় আমার ‘আউটবই’ পড়া শুরুই হয়েছে ভারতীয় বই দিয়ে। ফাল্গুনী, নীহাররঞ্জন, নিমাই, শঙ্কর ছিল তখন আমার পড়ার তালিকায়। পরে সুনীল, শীর্ষেন্দু, সমরেশ দখল করে নেয় পাঠসময়ের অনেকটাই।
সমরেশ মজুমদারের উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ পড়ে স্বপ্নাতুর হননি; আমাদের প্রজন্মে এমন তরুণ খুঁজে পাওয়া ভার। গত সপ্তাহে ১৮ ঘণ্টার জন্য কলকাতা গিয়েছি। কিন্তু ভারতীয় উপন্যাস পড়ে পড়ে কলকাতার অধিকাংশ রাস্তাঘাটের নাম আমার মুখস্থ। কল্পনায় কলকাতা আমার অনেক চেনা। ছেলেবেলা থেকে বাংলাদেশের গানের পাশাপাশি ভারতীয় বাংলা গানও অনেক শুনেছি। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, ভারতের গানই বেশি শুনেছি। তখন বাংলাদেশের গান শুনতাম রেডিওতে আর ভারতীয় বাংলা গান শুনতাম পাশের বাড়ির কাশেম ভাইয়ের চেঞ্জারে। প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে.. বা ছাইয়া দিল মে আনারে..। আশা, লতা, সন্ধ্যা, হৈমন্তী, মান্না, কিশোর, হেমন্ত, রফি, ভূপেন, সতীনাথ, মানবেন্দ্র থেকে শুরু করে চিত্রা, জগজিত, সুমন, নচিকেতা পর্যন্ত প্রিয় শিল্পীর তালিকাটা বড় লম্বা।
আমাদের টিভি ইন্ডাস্ট্রির কিলার ভারতীয় চ্যানেলের সিরিয়াল না দেখলেও ভারতীয় সিনেমা আমি নিয়মিত দেখি। উত্তম-সুচিত্রায় মজেনি এমন বাঙালি, দুই বাংলায় একজনও কি আছে? শুধু উত্তম-সুচিত্রা কেন, সুনীল দত্ত, নার্গিস, দিলীপ কুমার, রেখা, অমিতাভ, শাহরুখ, সালমান, আমির খান থেকে শুরু করে বিদ্যা বালান কার না প্রেমে পড়েছি আমরা? অনেকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আগ্রাসন বলে চেচামেচি করে পাড়া মাতান। কিন্তু বাসায় গিয়ে ঠিকই হিন্দি গান শোনেন বা সিরিয়াল দেখেন। সমরেশ পড়ার সময় আমার মাথায় থাকে না তিনি ভারতের না বাংলাদেশের। অন্ধ ভারতবিরোধিতা করে যদি আমি ‘পিকে’ না দেখি; লস তো আমারই হবে, আমির খানের নয়। মান্নাদের গান না শুনলে তো আমার প্রেমই করা হতো না। আমি তাই যেটুকু ভালো নিয়ে নিতে চাই। তা হিন্দি না ইংরেজি, বাংলা না উর্দু; সেটা বাংলাদেশের না ভারতের; তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
Advertisement
শুধু মুক্তিযুদ্ধের সময় সহায়তা নয়, বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির ব্যাপারে ভারতীয় ক্রিকেট সংগঠক জগমোহন ডালমিয়ার বিশাল অবদান আছে। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের প্রতিপক্ষও ছিল ভারত। ভারত আামাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী। আমরা বন্ধু বদলাতে পারবো, প্রতিবেশী বদলাতে পারবো না। দুই দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থেই বাংলাদেশের সাথে ভারতের সুসম্পর্ক থাকা জরুরি। এতকিছুর পরও বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে ভারত একটি বড় ফ্যাক্টর। স্বাধীনতার পর থেকেই ক্ষীণ হলেও ভারতবিরোধিতার ধারাটি ছিল। ৭৫এর পর ধারাটি প্রবল হয়েছে, মাঝে মাঝে তা প্রবলতর হয়।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক উষ্ণ হলেও খেলার মাঠে ভারত বিরোধিতার তীব্র স্রোত বহমান। যে আমি একসময় ভারতের ক্রিকেটের সমর্থক ছিলাম। সেই আমিও এখন বারবার ভারতের পরাজয় চাই। শুধু আমি নই, বাংলাদেশের কোটি মানুষ এখন ভারতবিরোধী। রাজনৈতিভাবে যারা ভারতের পক্ষে, খেলার মাঠেই তারা ভারতের মুন্ডুপাত করেন। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির দায় ভারতীয়দেরই। অভিন্ন পানির নদীর ন্যায্য হিস্যা না দিয়ে, সীমান্তে দিনের পর দিন মানুষ হত্যা করে যেমন বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত রেখেছে ভারত। তেমনি খেলার মাঠের উস্কানিটাও ভারতীয়দেরই। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হারার পর থেকেই বাংলাদেশকে ভয় পায় ভারত। আর সেই ভয় তাড়াতেই ভারতীয়রা আগ বাড়িয়ে নানা কথা বলতে থাকে। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের আগে ভারতীয়রা মওকা মওকা বিজ্ঞাপন বানিয়ে বাংলাদেশকে হেয় করার চেষ্টা করে। কিন্তু সেই মওকাটা তারা নেয় আইসিসি আর আম্পায়ারের বদান্যতায়। এবারও সেমিফাইনালে বাংলাদেশের মুখোমুখি হতে হবে, এটা শোনার পর থেকেই ভারতীয়দের কারো কারো হাটু কাঁপা শুরু হয়ে গেছে। ভয় তাড়াতে খালি মাঠে চিৎকার করে গান গাওয়া শুরু করেছে ভারতীয় সমর্থকদের কেউ কেউ।
সামাজিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশী সমর্থকরা সংযত হলেও ভারতীয়দের ট্রল করা শুরু হয়ে গেছে। দায়িত্বশীলরা ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ কে হবে, ইংল্যান্ড না পাকিস্তান, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। যেন সেমিফাইনালটা তাদের খেলতেই হবে না। অথচ তারাও জানে বাংলাদেশ এখন সমানে সমানে লড়তে পারে। আমি বুঝি এটাও ভয় তাড়ানোর কৌশল। গত বিশ্বকাপের মত এবারও ভারত মাঠে না খেলেই জিতে যাওয়ার কোনো কৌশল পেয়ে গেছে কিনা জানি না। এ কারণেই হয়তো তারা সেমি ফাইনাল বাদ দিয়ে ফাইনাল নিয়ে ভাবা শুরু করেছে। কিন্তু আমরা মাঠে খেলেই জিততে চাই। আমার বিশ্বাস সেমি ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতবে। আমার অতি আত্মবিশ্বাস দেখে কেউ কেউ টিপ্পনী কেটেছেন, ক্রিকেট কৌশলের খেলা, আজাইরা আবেগে খেলা হয় না। আমি এখনও আমার আত্মবিশ্বাসে অটল। এটা ঠিক, আমার আত্মবিশ্বাসের উৎস গভীর দেশপ্রেম। তবে এটাও জানি, শুধু দেশপ্রেম দিয়ে তো আর খেলায় জেতা যায় না।
গত দুই বছরে বাংলাদেশের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স, বিশেষ করে শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ক্ল্যাসিক পারফারম্যান্সই আমার আত্মবিশ্বাসের আসল উৎস। তবে খেলায় জয়-পরাজয় আছেই। সেমিফাইনালের দিন খারাপ খেললে বাংলাদেশ হারতেও পারে। কিন্তু হারজিতটা যেন শুধু মাঠেই হয়। ভারতের নানাকিছু আমার পছন্দ বটে, তবে দাদাগিরিটা ছাড়া। ভারত আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী। কিন্তু তাদের মাথায় রাখতে হবে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। ভারত ‘এলডার ব্রাদার’ হলে আমরা আছি, ‘বিগ ব্রাদার’ হলে নাই। এই ‘এলডার ব্রাদার’ , ‘বিগ ব্রাদার’ তত্বটা কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের দেয়া। এটাকেই আমি বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের সূত্র মানি।
আমরা কথা বলবো চোখে চোখ রেখে, কারো চোখ রাঙানিকে পাত্তা দেয়ার সময় ফুরিয়েছে অনেক আগেই। আমার কথা পরিষ্কার। সম্পর্কটা শ্রদ্ধার-ভালোবাসার হলে; আমরা আছি, নইলে নাই। আমাদের বন্ধু বললে, আমরাও তোমাকে বন্ধু ভাববো। কিন্তু আমাকে গালি দিলে আমি তোমাকে চুমু খাবো না। আমাকে ছোটলোক বললে, আমি তোমার জন্য করুণা করবো। একচুলও ছাড় হবে না। কিন্তু খেলার সুযোগে বাংলাদেশে অন্ধ ভারতবিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ইদানিং। অন্তরে পাকিস্তান ধারণ করে যারা, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে, অন্ধ ভারতবিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে চান তারাই। খেলার মাঠের ভারত বিরোধিতা থেকে রাজনৈতিকব ফায়দা নিতে চান। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে যেমন ভারত বিদ্বেষী মানুষ আছে, তেমনি ভারতেও বাংলাদেশ বিদ্বেষী মানুষ আছে। তবে সেই সংখ্যাটা নিশ্চয়ই বেশি না।
ফেসবুকে যারা বাংলাদেশকে নিয়ে ট্রল করেন, তাদের সংখ্যাও হাতে গোনা। বাংলাদেশকে সত্যি সত্যি মন থেকে ভালোবাসেন, এমন অনেক ভারতীয়কেও আমরা চিনি। ভারতের যেমন শেবাগ আছে, তেমনি গাঙ্গুলীও আছে। ভারতের যেমন শ্রীনিবাসন আছে, তেমনি ডালমিয়ারাও আছেন। তাই কিছু বলার আগে, করার আগে ভাবতে হবে নিজেদের কথা। বিশ্বে যেন আমরা সত্যিকারের স্পোর্টিং জাতি হিসেবে পরিচিত হই। স্লেজিং যেমন খেলার অংশ, তেমনি ইদানিং সামাজিক মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি ট্রল করাও যেন খেলারই অংশ হয়ে গেছে। তবে সেই ট্রল যেন ফানই থাকে; সীমা যেন না ছাড়ায়। খালি মনে রাখতে হবে, তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেন?১৪ জুন, ২০১৭probhash2000@gmail.com
এইচআর/পিআর