রাজনীতি

ধানের শীষে ভোট চাইলেন খালেদা

‘আগামী নির্বাচন একতরফা হতে দেয়া হবে না’ উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘সামনে আসছে শুভ দিন, ধানের শীষে ভোট দিন।’

Advertisement

বুধবার বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘আপনারা আরও ঐক্যবদ্ধ হোন। আমি বলব, আসুন সামনে আসছে শুভ দিন, ধানের শীষই হবে বিজয়ের বছর, ইনশাআল্লাহ। আসুন আমরা সবাই ধানের শীষে ভোট দেই এবং ধানের শীষকে বিজয়ী করি। এদেশের মানুষকে আবার শান্তি, উন্নতি, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথে নিয়ে যাব।’

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন জেলা সফরে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইলেও বিএনপিপ্রধান এবারই প্রথম নির্বাচনে নিজ দলের প্রতীকে ভোট চাইলেন।

Advertisement

একাদশ নির্বাচন ‘একতরফা’ হতে দেয়া হবে না- এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। তারা ভাবছে, আগামী নির্বাচনেও তারা চুরি করে ক্ষমতায় বসবে। না, তাদের এবার আর চুরি করে ক্ষমতায় বসতে জনগণ দেবে না।

আওয়ামী লীগ চাইবে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা দিয়ে এবং তাদের হয়রানি করে একতরফা নির্বাচন করবে। আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগকে এবার আর একতরফা নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। একতরফা নির্বাচন এদেশে আর হবে না। সেটা কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

তিনি বলেন, এবার সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে। হাসিনা এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিন্তু ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতে পারবে না। হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। মানুষ বুঝে গেছে, হাসিনা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করলে ফলাফল কী হয়!

সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, সেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে। ইনশাআল্লাহ এ লুটেরা, খুনি, চোর, জনগণের হত্যাকারী, মা-বোনদের নির্যাতনকারী, ছাত্র-ছাত্রীদের অত্যাচারকারী এ সরকারকে জনগণ নির্বাচনে কেমনভাবে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের পরিণতি কী হয়, সেদিন তারা নিজেরা দেখে নিতে পারবে।

Advertisement

সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নির্বাচনকে ভয় পাই না, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। কিন্তু সেই নির্বাচন হতে হবে, নির্বাচনের মতো নির্বাচন। সেই নির্বাচন হবে সব দলের অংশগ্রহণে ও সহায়ক সরকারের অধীনে।

নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকা মহানগরে নতুন কমিটিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগঠন শক্তিশালী করারও তাগিদ দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

পার্বত্য জেলায় পাহাড়ধসে সেনাবাহিনীর সদস্যসহ ব্যাপক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করে আহতদের সুচিকিৎসা দাবি করেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।

দেশের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের দুরবস্থার জন্য সরকারের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করেন খালেদা। তিনি বলেন, সরকার কারও কথা শুনছে না, গরিব মানুষের সমস্যার সমাধানে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাদের সময় ফুরিয়ে এসেছে, এটা তারা বুঝতে পেরেছে। এজন্য এখন তারা লুটপাট করে সেগুলো পাচার করতে ব্যস্ত। তাদের যে সেক্রেটারি জেনারেল সে বলে দিয়েছে, যত পারো লুটেপুটে নিয়ে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করো। সেজন্য তারা লুটপাট করছে।

নরসিংদী ছাত্রদলের নেতা সিদ্দিকুর রহমান নাহিদের ছবি দেখিয়ে তাকে গুম করার বিষয়টি তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এ সরকার পবিত্র রমজান মাসেও বিএনপির নেতাকর্মীদের গুম করছে।’

পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তারা মনে করছে, পুলিশ দিয়ে জনগণকে দমন করে রাখবে। পুলিশ বাহিনীকে খারাপ কাজে সরকার ব্যবহার করছে। আমি পুলিশ বাহিনীকে বলতে চাই, আপনারা জনগণের সেবক, আপনাদের দায়িত্ব হলো জনগণের নিরাপত্তা দেয়া। আপনারা ঠিক থাকেন, জনগণের পাশে থাকেন।

‘আওয়ামী লীগের গুণ্ডা-সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করুন, জেলখানায় নিন। ভবিষ্যতে আপনারা ভালো থাকবেন। আপনাদের জন্য আমাদের অনেক কর্মসূচি রয়েছে।’

বিদেশে থাকা উত্তরের নতুন সভাপতি এম এ কাইয়ুমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিও জানান খালেদা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, উত্তরের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসান, সহ-সভাপতি আব্দুল আলী নকি, মো. সাহাবুদ্দিনসহ উত্তরের নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, আতাউর রহমান ঢালী, ফরহাদ হালিম ডোনার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সানাউল্লাহ মিয়া, নুরী আরা সাফা, আমিনুল হক, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, হাফেজ এম এ মালেক, শাহ নেসারুল হক, উত্তরের নেতাদের মধ্যে আতিকুল ইসলাম মতিন, মাসুদ খান, নবী সোলায়মান, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, আবুল হোসেন, আবুল হাশেম, শাহিনুর আলম মারফত, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, এজিএম শামসুল হক, কফিলউদ্দিন আহমেদ, শামীম পারভেজ, দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার, ইউনুস মৃধা, মোশাররফ হোসেন খোকন প্রমুখ।

এমএম/জেএইচ/এমএআর/এমএস