বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে সেহরি খেতে উঠ। আর বেশি সময় নেই। বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। মনে হয় পাহাড়ের মাটি গোয়াল ঘরে পড়েছে। যাই একটু গরুগুলোর কি অবস্থা দেখে আসি। ধসে যাওয়া মাটি ঢুকে পড়লে তা পরিষ্কার করতে হবে।
Advertisement
গত সোমবার রাত ৩টার দিকে বাবা, মাকে এভাবেই বলছিল। এরপর তারা দুইজনই প্রচুর বৃষ্টির মধ্যে ছোট বোন সুফিয়াকে রেখে গোয়াল ঘরে চলে যায়।
বুধবার এভাবেই ঘটনার বর্ণনা করছিলেন বড় মেয়ে রোকেয়া বেগম। তার মা-বাবা আঁগাপাড়া এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে থাকতেন। সড়ক যোগাযোগ নেই বললেই চলে। নির্জন নিস্তব্দ এলাকায় ছোট একটি টিনশেড ঘরে সুখে বসবাস করতো মা কামরুন্নেছা, বাবা আব্দুল আজিজ এবং বোন সুফিয়া।
আব্দুল আজিজ আর কামরুন্নেছা কৃষি কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করতো। আর সুফিয়া ৫ম শ্রেণিতে পড়াশুনা শেষে বাবা-মাকে কৃষি কাজে সাহায্য করতো।
Advertisement
রোকেয়া আরও বলেন, গোয়ালঘরের কক্ষটা পরিষ্কার করে বাবা-বাসাই এসে খাটে বসলো। আর মা খাটের সামনে দাঁড়িয়েছিল। বোন মেঝেতে বসা ছিল। পরে খাঁটে দাঁড়িয়ে টর্চের আলো জ্বালিয়ে পাহাড়ের মাটি পড়ছে কিনা দেখতেই পাহাড়ের বিশাল মাটি আমাদের ঘরের চালে পড়ে মা-বাবা দুজনই মাটির নিচে তলিয়ে যায়। সাথে আমার ছোট বোনটিও। মা আর বোনের সেহেরি খাওয়া হলো না।
রোকেয়া বলেন, বাবা কোনো মতে কাঁদা মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মা আর ছোট বোনকে অন্ধকারে খুঁজতে থাকে। কিন্তু তাদেরকে না পেয়ে একাই ওই রাতে কাঁদা মাটিতে ছড়িয়ে থাকা শরীর নিয়ে কালাঘাটা এলাকায় আমার বাসায় চলে আসে এবং আমাকে সব কিছু জানায়।বোন সুফিয়ার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রোকেয়া বলেন, মঙ্গলবার বাবা আমাকে আর আমার স্বামীসহ সবাইকে নিয়ে এবারের ঈদের কাপড় কিনতে বাজারে যাবে বলে মোবাইল ফোনে জানায়। আমার বোনকে নিয়ে ঈদের কাপড় কেনা হলো না ।
দুই দিনের টানা বর্ষণে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে বান্দরবানের নারী ও শিশুসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় পাহাড়ধসে মাটির নিচে তলিয়ে যাওয়া মা-মেয়েকে উদ্ধার করতে পারেনি উদ্ধারকর্মীরা। তবে বুধবার দুপরে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে দমকল বাহিনীর সদস্যরা ।
নিহত কামরুন্নেছার বোন রোজিনা বলেন, সোমবার সকালে আমার বোনকে আমি ঈদের সময় বেড়াতে আসতে বলি। কিন্তু সে তার বাড়ির কাজ দেখিয়ে আমাকে ঈদের সময় বেড়াতে যেতে বলে। আর আমার যাওয়া হলো না ।
Advertisement
এমএএস/পিআর