অর্থনীতি

ব্যাংককে হটিয়ে শীর্ষে বস্ত্র

কয়েক মাস ধরে শেয়ারবাজারের লেনদেনে একতরফা দাপট দেখানো ব্যাংক খাতকে হটিয়ে মে মাসে শীর্ষ স্থান দখল করে নিয়েছে বস্ত্র খাত। এর আগে মার্চ ও এপ্রিল মাসে লেনদেনের শীর্ষ স্থান ব্যাংক খাতের দখলে ছিল।

Advertisement

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে লেনেদেনের শীর্ষ স্থানে না থাকলেও একটি বড় অংশই ছিল ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর দখলে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, মে মাসজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১২ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। আগের মাস এপ্রিলে লেনদেন হয় ১৫ হাজার ২২৩ কোটি টাকার। সে হিসাবে মে মাসে লেনদেন আগের মাসের তুলনায় কমেছে ২ হাজর ৯৬৫ কোটি টাকা।

এপ্রিল মাসেও ডিএসইতে বড় অঙ্কের লেদদেন কমেছিল। মার্চ মাসজুড়ে লেনদেন হয় ২১ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় এপ্রিলে লেনদেন কমে ৬ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। আর দুই মাসের ব্যবধানে বা মার্চের তুলনায় মে মাসে লেনদেন কমে প্রায় অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। এ চিত্র থেকেই বোঝা যায় ডিএসইতে মোট লেনদেনে এক প্রকার ধস নেমেছে। ধারাবাহিকভাবে কমে মে মাসে ডিএসইতে চলতি বছরের সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে।

Advertisement

ডিএসইর খাতওয়ারি লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, লেনদেনে শীর্ষ স্থান দখল করা বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার মে মাসজুড়ে লেনদন হয়েছে ১ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকার। যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আগের মাস এপ্রিলে এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেন হয় ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। মাসটিতে বস্ত্র খাত লেনদেনের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে ছিল।

এদিকে, এপ্রিলে লেনদেনের শীর্ষ স্থান দখল করা ব্যাংক খাত মে মাসে দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছে। মে মাসজুড়ে এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকার, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আগের মাস এপ্রিলে ব্যাংক খাতের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ।

মে মাসের লেনদেনে তৃতীয় স্থান দখল করেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। মাসজুড়ে এ খাতের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এপ্রিল মাসে এ খাতের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা, যা ওই মাসের মোট লেনদেনের ৮ দশমকি ৭৯ শতাংশ।

এপ্রিলে দ্বিতীয় স্থানে থাকা আর্থিক খাত চতুর্থ স্থানে নেমে এসেছে। মে মাসজুড়ে এ খাতের লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এপ্রিল মাসে এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা, যা মাসটির মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ।

Advertisement

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, যে খাতের শেয়ার লেনদেন বেশি হবে বুঝতে হবে ওই খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। আর আগ্রহ বাড়ার পেছনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে, শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা কেমন রিটার্ন পাচ্ছেন। বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলো ২০১৬ সালে বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে। এর কারণেও এ খাতের লেনদেন বাড়তে পারে।

ব্যাংক খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। মে মাসে ব্যাংক খাত লেনদেনের শীর্ষস্থানে না থাকলেও মোট লেনদেনের বড় অংশই ছিল এ খাতের। ব্যাংক কোম্পানিগুলো ২০১৬ সালে ভালো মুনাফা করেছে। এছাড়া চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে যে ব্যাংকগুলো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এর অধিকাংশই ভালো মুনাফা করেছে।

লেনদেন কমে যাওয়ার বিষয়ে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বছরের শুরুতে টানা উত্থানের পর গত দুই মাস টানা দরপতন দেখা দেয়। টানা দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও আতঙ্ক ছড়াই। এতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে ব্যাংক, বস্ত্র, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ওষুধ, প্রকৌশল এবং আর্থিক খাত লেনদেনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। লেনদেনের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, মোট লেনদেনের সিংহভাগই এ খাতগুলোর। ঘুরে ফিরে এ খাতগুলোই লেনদেনের শীর্ষ তিন স্থান দখল করে।

তিনি আরও বলেন, বরাবরই ব্যাংক খাত দেশের শেয়ারবাজারে বড় ভূমিকরা রাখে। ২০১০ সালের যে উত্থান হয়েছিল তার পেছনে ব্যাংক খাতের বড় ভূমিকা ছিল। সে সময় মোট লেনদেনের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশই থাকত ব্যাংক কোম্পানিগুলোর। দীর্ঘ মন্দার পর চলতি বছরের শুরুতে শেয়ারবাজারে যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ফিরে আসে তার পেছনেও ব্যাংক খাতের বড় ভূমিকা ছিল।

বস্ত্র খাতের শীর্ষে উঠে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, পোশাক মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। এর চাহিদা সব সময় থাকে। তবে আমাদের শেয়ারবাজার সব সময় ফান্ডামেন্টালের ওপর নির্ভর করে না। অনেক সময় হুজুগেও বড় লেনদেন হয়। বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলো যদি ভালো মুনাফা করে এবং তার প্রভাবে যদি লেনদেন বাড়ে, এটি ভালো লক্ষণ।

লেনদেন কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বছরের শুরুতে যেভাবে সূচক বেড়েছিল তা স্বাভাবিক ছিল না। যে কারণে কিছুদিন পরই বাজারে দরপতন দেখা দেয়। এ দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যার প্রভাবে লেনদেন কমে। তবে সামগ্রিক বিবেচনায় বলা যায়, বাজারের এ মন্দাভাব বেশিদিন থাকবে না।

এদিকে, ডিএসইর মাস ভিত্তিক লেনদেনের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে প্রকৌশল খাতের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ৯৩ শতাংশ। মাসটিতে ১০ শতাংশের ওপরে লেনদেন হয়ছে ওষুধ খাতেরও। এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

বাকি খাতগুলোর মধ্যে বিবিধ ও আইটি খাতের অবদান এককভাবে ৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে। বাকি সবকটি খাতের অবদান ২ শতাংশের ঘরে অথবা তারও নিচে।

মে মাসজুড়ে বিবিধ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৬৮ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। আইটি খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬১৫ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।

এছাড়া মোট লেনদেনে মে মাসে খাদ্যের ২ দশমিক ৭১ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ২ দশমিক ১৯ শতাংশ, সেবা ও আবাসনের ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ, সিমেন্টের ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, বীমার ১ দশমিক ২৯ শতাংশ, টেলিযোগাযোগের ১ দশমিক ১৯ শতাংশ, ট্যানারির দশমিক ৭২ শতাংশ, ভ্রমণের দশমিক ৬৯ শতাংশ, সিরামিকের দশমিক ৫২ শতাংশ, পাটের দশমিক ৫১ শতাংশ এবং কাগজ ও মুদ্রণের দশমিক ১৭ শতাংশ অবদান রেখেছে।

এমএএস/এমএআর/জেআইএম