জাতীয়

দীর্ঘ লাইনে ভোগান্তি, টিকিটে হাসি

আসন্ন ঈদুল ফিতরে বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে ভোর থেকেই এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষজন। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানো এসব মানুষের ভোগান্তি-বিড়ম্বনার যেন শেষ নেই। তবুও লাইন ছেড়ে যেতে নারাজ তারা।

Advertisement

সময় গড়ানোর সঙ্গে দীর্ঘ হতে শুরু করে লাইন। তবু কেউ দাঁড়িয়ে কেউবা বসে অধীর প্রতীক্ষায় রয়েছেন ট্রেনের টিকিটের জন্য। সকালে টিকিট পেতেই নিমিষে উবে গেল দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার ভোগান্তির সব চিহ্ন। ভোগান্তি পেরিয়ে এসে যারাই টিকিট পাচ্ছেন, তাদের মুখে রাজ্যের হাসি।

বুধবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন ঘুরে ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেল এমন চিত্র।

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদে আনন্দ ভাগাভাগি করার লক্ষ্যে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট নিতে স্টেশনে এসেছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। প্রতিবারই ঈদের আগেও এ দৃশ্য এবারও যেন বদলায়নি।

Advertisement

উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনের টিকিট পেতে ভোর ৪টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন মুক্তা। কয়েক ঘণ্টা পর সকালে টিকিট পেয়ে তার মুখে বিজয়ের আনন্দ। চোখ-মুখে তৃপ্তি নিয়ে মুক্তা বলেন, সেহেরি খেয়ে ভোর ৪টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। সাত ঘণ্টা পর টিকিট হাতে পেলাম। খুব ভালো লাগছে। বাবা, মায়ের সঙ্গে ঈদ করব। এখন সুস্থভাবে নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে পারলেই চলে।

তবে নাড়ীর টানে ঘরে ফিরতে উৎকণ্ঠার যেনো শেষ নেই মানুষের। প্রতি বছরই বাড়ি ফিরতে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয় কমবেশি সবাইকে। এসব ঝামেলা এড়াতে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট নিতে অনেকে ভিড় জমান রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে। কিন্তু এখানেও দীর্ঘ অপেক্ষা আর ভোগান্তির যেন শেষ নেই। ৬/৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কাঙ্খিত টিকিট মিলছে না।

এমনই একজন আশরাফুল ইসলাম, ঈদে পরিবার নিয়ে যাবেন গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে। ৬ মাসের শিশুপুত্রকে নিয়ে যাবেন বলে কেবিন প্রত্যাশা ছিল তার। কিন্তু মিললো চেয়ারের টিকিট।

অন্যদিকে, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হয়ে বসে থাকতেও দেখা গেছে অনেককে। এমনই একজন আনোয়ারা বেগম। সকাল ৭টায় এসেছেন রামপুরা থেকে। চার ঘণ্টার পরও টিকিট পাননি। তিনি বলেন, ধীরগতিতে লাইন এগুচ্ছে। এক ঘণ্টায় মনে হচ্ছে দুই হাতও এগুতে পারেনি। গরমে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। কি করবে, বসে পরেছি। টিকিট দিতে এত দেরি কেন হচ্ছে তাও বুঝতে পারছি না।

Advertisement

এ বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জাগো নিউজকে জানান, সকাল ৮টা থেকে তৃতীয় দিনের মত অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। আজ দেওয়া হচ্ছে ২৩ জুনের টিকিট। সবাইকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। তাদের কর্মীরা যথাসাধ্য সেবা দিচ্ছেন। একটি কাউন্টার থেকে একাধিক জেলার টিকিট দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে একটু সময় লাগে। ঈদ উপলক্ষে বুধবার ২৪ হাজার ৬০৮টি অগ্রিম টিকিট দেওয়া হবে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিক্রি চলবে বলে তিনি জানান।

রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হকের ঘোষণা অনুযায়ী এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের সুবিধার্থে ১২ জুন থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ১২ জুন দেয়া হয়েছে ২১ জুনের টিকিট। এরপর ১৩, ১৪, ১৫ ও ১৬ জুন যথাক্রমে ২২, ২৩, ২৪ ও ২৫ জুনের টিকিট বিক্রি করা হবে।

এছাড়া রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ফিরতি টিকিট বিক্রি করা হবে। ১৯ জুন ২৮ জুনের ফিরতি টিকিট বিক্রি করা হবে।

এরপর ২০, ২১, ২২, ২৩ জুন যথাক্রমে ২৯, ৩০ জুন ও ১ এবং ২ জুলাইয়ের ফিরতি টিকিট বিক্রি করা হবে। সংশ্লিষ্ট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সকাল ৮টা থেকে এসব টিকিট বিক্রি শুরু হবে।

এসআই/এএস/এসআর/জেআইএম