দেশজুড়ে

পাহাড়ধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৪

দুই দিনের টানা বর্ষণে বিপর্যয় নেমে এসেছে চট্টগ্রাম বিভাগের তিন জেলায়। তিন জেলায় পাহাড়ধসে সেনা সদস্যসহ এ পর্যন্ত ৭৪ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

Advertisement

নিহতদের মধ্যে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ১৯ জন এবং চন্দনাইশে চার, রাঙামাটির সদরসহ কাপ্তাই, লংগদু ও কাউখালীতে ৪৫ এবং বান্দরবানের সদরে ছয়জন নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার ভোর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এখনও উদ্ধার কাজ চলছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্ধারকর্মীরা।

নিহতদের মধ্যে উদ্ধার অভিযানে গিয়ে মারা যান দুই কর্মকর্তাসহ ছয় সেনা সদস্য। এ সময় আহত হন বেশ কয়েকজন। তবে এখনও কয়েকজন মাটিচাপায় আটকে আছে বলে জানা গেছে। তাদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। তবে আইএসপিআর’র পক্ষ থেকে চারজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ একজন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১০ জন।

Advertisement

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর এবং ইসলামপুর ইউনিয়নে পাহাড়ধসে ১৯ জন মারা গেছেন।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন ১৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে নিহতদের সবার বিস্তারিত নাম ও পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।

চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার ভোর ৪টায় চন্দনাইশের দুর্গম এলাকা দোপাছড়ি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের শামুকছড়িতে পাহাড়ধসে এক শিশুসহ চারজন নিহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন শামুকছড়ির শিশু মাহিয়া(৩), ছনবনিয়ার ২নং ওয়ার্ডের উপজাতি এলাকার সিনসাও কেয়াংয়ের স্ত্রী মোকা ইয়ং কিয়াং (৫০), কেলাও অং কেয়াংয়ের কিশোরী কন্যা মেমো কেয়াং (১৩) ও ফেলাও কেয়াংয়ের শিশু কন্যা কেওচা কেয়াং (১০)।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার থেকে ওই এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে সোমবার রাত ২টার পর ভারী বৃষ্টি ও সঙ্গে বজ্রপাতসহ ঝড়ো হাওয়া হয়। এরপরই এই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।

এদিকে রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, প্রবল বর্ষণে বাড়িঘরে পাহাড়ের মাটিচাপায় রাঙামাটি শহরের রিজার্ভবাজার, ভেদভেদী, শিমুলতলী, মোনঘর, রাঙামাটি ও মানিকছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ২৫ জন, কাউখালীর বেতবুনিয়ায় চারজন, ঘিলাছড়িতে তিনজন, কাশখালীতে তিনজন এবং কাপ্তাই রাইখালীর কারিগর পাড়ায় চারজন নিহত হয়েছেন।

এছাড়া মানিকছড়িতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে পাহাড় থেকে ধসে পড়া মাটি অপসারণের সময় ছয় সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়।

তারা হলেন, মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর আহমেদ, সিপাহী আজিজ, শাহীন, ল্যান্স কর্পোরেল আজিজ, সিপাহী মামুন। তারা রাঙামাটি সেনা রিজিয়নে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া আরও বেশ কয়েক সেনা সদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাঙ্গামাটি এবং ঢাকায় ভর্তি করা হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে রুমা আক্তার (২৫), নুর আক্তার (৩), হাজেরা (৪০), সোনালি চাকমা (৩০), এক বছর বয়সী শিশু অমিয় কান্তি চাকমা, আইয়ুশ মল্লিক (২), চুমকি মল্লিক (২), লিটন মল্লিক (২৮), অজ্ঞাত (২২), মিন্টু ত্রিপুরা (৪৫), আবদুল আজিজ (৫৫), অজ্ঞাত (৩২), মিলি চাকমা (৫৫), ফেন্সি চাকমা (৪)।

কাউখালীর যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন ফাতেমা বেগম (৬০), মনির হোসেন (২৫), মো. ইসহাক (৩০), দবির হোসেন (৮৪), খোদেজা বেগম (৬৫), অজিদা খাতুন (৬৫), মংকাচিং মারমা (৫২), আশেমা মারমা (৩৭), শ্যামা মারমা (১২), ক্যাচাচিং মারমা (৭), কুলসুমা বেগম (৬০), বৈশাখী চাকমা (১০), লায়লা বেগমের (২৮) মরদেহ উদ্ধার করে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিকে কাপ্তাই রাইখালীর কারিগর পাড়ায় নিহত চারজনের নাম তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়নি। এর আগের দিন সোমবার রাঙামাটি শহরের পুলিশ লাইন এলাকায় এক শিশু এবং কাপ্তাইয়ের নতুন বাজারে এক শিশু পাহাড়ের মাটিচাপায় মারা যায়। এছাড়া কর্ণফুলী নদীতে পড়ে ইকবাল নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন।

এদিকে সোমবার রাত থেকে রাঙামাটি শহরের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া রাঙামাটির সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। এতে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানে বিভিন্ন এলাকায় অতি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসে শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে পাঁচজন।

মঙ্গলবার ভোররাত পৌনে ৪টার দিকে জেলার পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কালাঘাটা এলাকার ত্রিপুরা পাড়াসহ দুর্গম কয়েকটি এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতদের মধ্যে চার জনের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলো, শহরের আগাপাড়ার একই পরিবারের শুভ বড়ুয়া (৮), মিঠু বড়ুয়া (৬), লতা বড়ুয়া (৫) ও কালাঘাটা কবরস্থান এলাকার রেবি ত্রিপুরা (১৮)।

এ ঘটনায় এখনও জাইল্লাপাড়ায় কামরুন্নাহার ও তার মেয়ে সুফিয়া (২০) নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন।এএম/আরআইপি