কৃষি ও প্রকৃতি

কাঁঠালের মৌ মৌ গন্ধে মাতাল কালীগঞ্জ

এখন জ্যৈষ্ঠ মাস শেষ শেষ; চারদিকে মৌসুমী ফলের মৌ মৌ গন্ধ। আর এই গন্ধের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে জাতীয় ফল কাঁঠাল। পথের ধারে অস্থায়ী কিংবা বাজারের স্থায়ী দোকানে সাজানো রয়েছে রসালো এই ফল। আর তাতে আকৃষ্ট হয়ে কিনে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা।

Advertisement

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় সব এলাকায় দেখতে পাওয়া যায় কাঁঠাল। এখানকার স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রতিদিনই বসে কাঁঠালের হাট। কথিত আছে, ফলের জন্য বিশেষ করে কাঁঠালের জন্য বিখ্যাত গাজীপুর। কেউ কেউ আবার এ জেলাকে ‘কাঁঠালের রাজধানী’ও বলে থাকেন। দেশের সবচেয়ে বড় কাঁঠালের বাজারও জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায়।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। ন্যায্য দাম পেয়ে তাই খুশি কৃষক ও বিক্রেতারা। এ অবস্থা মৌসুমের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ তাদের। এ বছর ১ হাজার ১৩৩ হেক্টর জমিতে ৪৬ হাজার ৬৯৭ মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার কালীগঞ্জ বাজার, নাগরী বাজার, উলুখোলা বাজার, বক্তারপুর বাজার, ফুলদী বাজার, জাঙ্গালীয়া বাজার, আলাউদ্দিরটেক বাজার, আওয়াখালী বাজার, দোলান বাজার, জামালপুর বাজার, সাওরাইদ বাজারে প্রতিদিনই বসে কাঁঠালের হাট। মৌসুমের প্রতিদিনই ওই বাজারগুলোতে বিক্রি হয় লাখ লাখ কাঁঠাল। দিনে-রাতে প্রায় সব সময়ই চলে এ বেচাকেনা। তবে সবচেয়ে বেশি জমজমাট থাকে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তাই দেশের দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা আসেন উপজেলার ওই বাজারগুলোর কাঁঠালের হাটে। আর কালীগঞ্জের কাঁঠাল নিয়ে যান রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলোতে। কাঁঠালের এই মৌসুমকে কেন্দ্র করে বাগান থেকে কাঁঠাল বাজারে আনা, কেনাবেচা, গাড়িতে ওঠানো-নামানোসহ এর সাথে জড়িত কয়েক হাজার লোক। আর হাজার হাজার মানুষকে ব্যস্ত থাকতে হয় কাঁঠালের এই মৌসুমের সময়কে ঘিরেই।

Advertisement

স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহজাহান আলী বলেন, ‘ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পাইকারদের থাকা-খাওয়ার অবকাঠামোগত সুবিধার কারণে উপজেলার কাঁঠালের হাটগুলো হয়ে উঠেছে কাঁঠালের মোকাম হিসেবে।’

মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকে এ চিত্র চলতে থাকে আষাঢ় মাসের শেষ পর্যন্ত। কাঁঠালের হাটের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পুরো উপজেলায়। অন্যদিকে, গাছ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে ব্যস্ত সময় পার করছেন কালীগঞ্জের স্থানীয় কাঁঠাল বাগান মালিকরা। গাছ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করে বাজারজাত করার জন্য বাড়ির পুরুষদের পাশাপাশি ব্যস্ত নারী ও শিশুরাও।

প্রতিদিন ভোরে বাগান থেকে পাকা কাঁঠাল সংগ্রহ করে পুরুষরা তা বিক্রির জন্য ট্রাক, পিকআপ, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, টমটম, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক ও অটোরিকশায় করে নিয়ে আসেন বাজারে।

কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের এক কাঁঠাল বাগান মালিক মোহাম্মদ আলী ব্যাপারী বলেন, ‘এখানকার কাঁঠাল মিষ্টি, সুস্বাদু ও স্বাদেগন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়।’

Advertisement

‘প্রতিবছর প্রায় ৮০-৯০ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করি। এবারও বেশ ভালো বিক্রি হবে আশা করছি’ বলেন মোহাম্মদ আলী।

তিনি জানান, তার বাড়ির পাশে বাগানে দুই শতাধিক কাঁঠাল গাছ রয়েছে। গাছে মুচি আসার সময় খরা থাকায় বেশকয়েক বছরের মতো এবারও কাঁঠাল কম ধরেছে। তবে দাম মোটামুটি ভালো থাকায় সেই ক্ষতি পুষিয়ে যাবে।

ময়মনসিংহ থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল জানান, তার কাঁঠালের আড়ৎ আছে। সেখানে খুব চাহিদা থাকায় প্রতিবছরই কালীগঞ্জ থেকে কাঁঠাল নিতে আসেন তিনি। আর কাঁঠাল প্রতি ১০-২০ টাকা লাভ হয়। তাই স্থানীয়ভাবে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছেও তা বিক্রি করি।

মৌসুমী ও জাতীয় ফল কাঁঠালকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে হাটগুলোতে অনেকের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে। আবার অল্প পুঁজি কিংবা অন্যের পুঁজি দিয়ে শুধু শ্রম দিয়েও অনেকে ব্যবসা করছেন স্থানীয় ওই বাজারগুলোতে। তাদেরই একজন জামালপুর ইউনিয়নের দোলান বাজারের আড়তদার নুরুল ইসলাম।

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পাইকারদের কাঁঠাল কিনে দেই। প্রতি ট্রাকে আমি পাই ৩ হাজার টাকা। নিজের কোনো পুঁজি লাগে না।’

শুধু নুরুল ইসলামই নন, এভাবে আরও অনেকেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার হাটগুলোতে কাঁঠাল কিনতে আসা পাইকারদের ট্রাকভর্তি কাঁঠাল কিনে দিচ্ছেন প্রতিদিন।

এসইউ/পিআর