ধর্ম

রমজানে যে আমলগুলো সফলতা লাভের উপায়

কুরআন নাজিলের মাস রমজান। এ মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমেই মানুষ তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্জন করতে সক্ষম হয়। মুমিন বান্দা রোজা পালনে দিনের বেলায় পানাহার ও নিষিদ্ধ কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকে।

Advertisement

উদ্দেশ্য একটাই- আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। সারাদিন শুধুমাত্র উপবাস করলেই হবে না; রোজায় সফলতা লাভ করতে হলে বিশেষ কিছু আমলের প্রতি মনোযোগী হওয়া জরুরি। যে আমলগুলো পালন করলে রোজা হবে স্বার্থক ও সফল।

রোজাদারের জন্য পালনীয় কিছু আমল তুলে ধরা হলো-আমলের শুকরগোজারি করাপবিত্র রমজানে অনেক রোজাদার নিজের আমলের প্রচার করে থাকেন। যা মোটেও ঠিক নয়। আমলের এ সব প্রচারণা অনেক সময় অহংকার ও গর্ববোধের জন্ম দেয়। এমনকি কোনো কোনো সময় নিজের আমলকে নষ্ট করে দেয়।

রমজানের বিধান জারির সঙ্গে সঙ্গে সব আমল ও ইবাদতে আল্লাহকে ভয় করার নির্দেশ রয়েছে। সুতরাং তাঁর নৈকট্য অর্জনে ভয় করা এবং নিজের আমলের শুকরগোজারী করা জরুরি।

Advertisement

আজানের উত্তর দেয়ারমজানে মাসে ইফতারের সময় আজানের উত্তর দেয়া ‍গুরুত্বপূর্ণ আমল। অনেকেই ইফতারের ব্যস্ততায় আজানের উত্তর দিতে ভুলে যান। অথচ এমনিতেই আজানের সময় দোয়া কবুল হয়। আর তা যদি হয় রমজান মাসে তাহলে তো দোয়া কবুলের জন্য তা আরও উত্তম সময়।

যেহেতু রোজা পালনকারী সৎকর্মশীল বান্দাগণ অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজানে নেক আমলের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে থাকেন। তাই ইফতার পরবর্তী সময়ে আজানের উত্তর প্রদানে গুরুত্ব দেয়া একান্ত কর্তব্য।

তারাবিহ আদায় করাতারাবিহ নামাজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। তারাবিহ মানেই হচ্ছে ধীরস্থিরভাবে নামাজ আদায় করা। সুতরাং তারাবিহ নামাজের রুকু, সিজদা, তাশাহহুদসহ নামাজের অন্যান্য আমলে তাড়াহুড়ো না করে ধীরস্থিরভাবে তারাবিহ নামাজ আদায় করা।

তাকবিরে উলার সঙ্গে নামাজ আদায়রমজানে প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজই তাকবিরে উলার সঙ্গে আদায় করা অনেক সাওয়াবের কাজ। অনেকে খতম তারাবিতে দীর্ঘ সময় নামাজে না দাঁড়িয়ে রুকুতে গিয়ে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় বসে থাকে। যখনই ইমাম সাহেব রুকুতে যায়; তখনই তাড়াহুড়ো করে রুকুতে গিয়ে শরিক হয়। এটা তাকওয়াবিরোধী কাজ। সুতরাং খতম তারাবিসহ সব নামাজ তাকবিরে উলার সাথে আদায় করা এবং কুরআনের পূর্ণ তেলাওয়াত শোনাও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

Advertisement

ই’তিকাফ করারমজান মাসের শ্রেষ্ঠ ইবাদত ই’তিকাফ করা। আমাদের সমাজে রমজানের সবচেয়ে অবহেলিত ইবাদত হলো  ই’তিকাফ। গ্রামের মসজিদগুলোতে দায়মুক্তির জন্য ইফতার-সাহরি খাওয়ানোর শর্তে দিনমজুর ও বয়স্ক লোকদেরকে ই’তিকাফে বসানো হয়।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমৃত্যু প্রতিবছর রমজানের শেষ দশকে ই’তিকাফে বসতেন। কারণ দুনিয়ার সবচেয়ে মর্যাদা ও ফজিলতপূর্ণ রাত ‘লাইলাতুল কদর’ শেষ দশকেই নিহিত রয়েছে। তাই এ দশকে ই’তিকাফ করলে লাইলাতুল কদর পাওয়া সহজ হয়ে যায়। আর তা অন্বেষন করা প্রত্যেক ঈমানদার রোজাদারের জন্য আবশ্যক কর্তব্য।

ফেতরা বিতরণ করাগরীব অসহায়দের মুখে ঈদের হাসি ফোটানোর জন্য ফেতরা বিতরণ করা রমজানের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। বিশ্বনবি রমজানের শেষদিকে অসহায়দের মাঝে ফেতরা প্রদানের নির্দেশ করেছেন। ঈদের আনন্দে গরীব-দুঃখীর মুখে হাসি ফুটাতেই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফেতরার প্রদানের জন্য গুরুত্বারোপ করেছেন।তাছাড়া ফেতরা এমন এক ইবাদত; যার ফলে রোজায় মানুষের অনর্থক কথা ও কাজের ভুল-ত্রুটির কাফফারা হয়ে যায়। সুতরাং ফিতরা আদায়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানে দিনের বেলা রোজা পালন ও রাতের ইবাদত-বন্দেগিকে সফল ও স্বার্থক করতে উপরোক্ত আমলগুলো যথাযথ আদায় করার একান্ত জরুরি। আল্লাহ তাআলা সবাইকে উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/আরআইপি