খেলাধুলা

সোফিয়া গার্ডেনে এবার ফুল ফোটালেন সাকিব-রিয়াদ

বদলেছে অনেক কিছুই। সময়টা বদলেছে এক যুগ। প্রতিপক্ষ বদলেছে, বাংলাদেশ দলটা বদলেছে। এমন কী স্টেডিয়ামের নামটাও। তবে সাল বদলালেও মাসটি বদলায়নি। স্টেডিয়ামের নাম বদলালেও মাঠ বদলায়নি। অনেক বদলে যাওয়ার মধ্যেও বড় যে জিনিসটি বদলায়নি তা হলো বাংলাদেশের ভাগ্য। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন যে ক্রিকেটের পয়োমন্তঃ ভেন্যুই হয়ে গেলো বাংলাদেশের! যে ভেন্যুতে জয়ের রেকর্ড শতভাগ। ব্রিটিশরা ভেন্যুটির নাম যতোই বদলাক, অমাদের কাছে ওটা সোফিয়া গার্ডেনই।

Advertisement

২০০৫ সালের জুন মাসের ১৮ তারিখ। এই সোফিয়া গার্ডেনে ফুটেছিল লাল-সবুজ ফুল। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফুটিয়েছিলেন আশরাফুল, আফতাব আর হাবিবুল বাশাররা। এবার নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফুল ফোটালেন সাবিক আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। হ্ঁযা, এই দু’জনই। ক্রিকেট এক-দু’জনের খেলা নয়। তবে কখনো কখনো হয়ে যায়। শুক্রবার যেমন হলো কার্ডিফে। নিউজিল্যান্ডবধের কৃতিত্ব বাংলাদেশের এই দু’জনেরই তো। সাবাশ সাকিব, সাবাশ রিয়াদ।

২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়াবধের সেই গৌরবগাঁথা কাহিনী এখনো চোখে আটকে আছে। ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি কাভার করতে আমরা যে একঝাঁক বাংলাদেশি ক্রীড়া সাংবাদিক কার্ডিফে ছিলাম তাদের অনেকেই আছেন এবারও। তাদের লেখনি থেকেই জেনেছি সোফিয়া গার্ডেনের ওই ভেন্যুটার নামই কেবল বদলায়নি, রুপও বদলিয়েছে। তখন ছিল অনেকটাই গ্যালারিবিহীন স্টেডিয়াম। যেখানে বসে ম্যাচ কাভার করেছি সেটা ছিল অস্থায়ী প্রেসবক্স। মাথার উপর ছাদ নয়, ছিলো সামিয়ানা। মাঠের খেলা আর স্টেডিয়ামের চারপাশের সবুজ-তরঙ্গ একই সঙ্গে থেকেছে দৃষ্টি-সীমানায়।

এক যুগ আগের ম্যাচে আশরাফুল সেঞ্চুরি করে যখন আউট হয়েছিলেন তখন ইনিংসের বল বাকি ১৭টি। অস্ট্রেলিয়ার ২৪৯ রান টপকাতে প্রয়োজন ২৩। বাকি কাজটুকু সেরেছিলেন আফতাব আহমেদ ও মোহাম্মদ রফিক। অবিস্মরণীয় জয়ের ছবিটা অবশ্য এঁকেছিল আফতাবের ব্যাট। ১৩ বলে তার করা ২১ এবং রফিকের ৭ বলে ৯ রানের ইনিংস নিচু করে দিয়েছিল অসিদের মাথা। দুইজনের হার না মানা ইনিংসের উপর ভর করেই কার্ডিফে রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন ইতিহাস। প্রথম অস্ট্রেলিয়াবধ।

Advertisement

জয়সূচক রান হওয়ার পর সেদিন কার্ডিফকে আর কার্ডিফ মনে হয়নি। মনে হয়েছিল ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম। সোফিয়া গার্ডেনকে মনে হয়েছিল লাল-সবুজের দেশেই কোনো এক বাগান। আর যে জমিনে নতুন ইতিহাস রচনা করেছিলেন হাবিবুল বাশাররা, সেই মাঠটি রূপ নিয়েছিল এক টুকরো বাংলাদেশে। গায়ে লাল-সবুজ জার্সি, মাথায় একই রঙের ক্যাপ এবং হাতে জাতীয় পতাকা দুলিয়ে হাজার হাজার বাংলাদেশির গগণবিদারী স্লোগান কার্ডিফ থেকে যেন আছড়ে পড়ছিল বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে।

চার বল বাকি থাকতে যখন বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়েছিল, তখন কার্ডিফের কম্পন দেখেছি, দেখেছি প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিজয়-উল্লাস। আর সেখানে দাঁড়িয়ে অনুভব করেছিলাম হাজার হাজার মাইল দুরে প্রিয় মাতৃভূমিতে কি হতে পারে তা। এবার যখন ১৬ বল থাকতে আরেকটি অবিস্মরণীয় জয় উপহার দিলেন সাবিক আর রিয়াদ, তখন আশ-পাশের ফ্লাটগুলো থেকে ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’ আওয়াজটাই বুঝিয়ে দিলো পুরো দেশের অবস্থাটা। আর সাত সমূদ্র তেরো নদীর ওপারে কার্ডিফে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবস্থাটা কি হতে পারে তা মিলিয়ে নিয়েছি ১২ বছর আগের সেই স্মৃতির সঙ্গে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে বাংলাদেশ খেলতে পারবে কি পারবে না, সেটা পরের হিসাব; কিন্তু শুক্রবার যে ম্যাচটি জিতে রাখার কোনো বিকল্প ছিল না, সেই ম্যাচ কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই ঝুলে ছিল নিউজিল্যান্ডের দিকে। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং আশঙ্কা তৈরি করেছিল স্কোরটা ৩০০ উপরে হয়ে যেতে পারে ভেবে।

সেটা হয়নি ২১ বছরের মোসাদ্দেক হোসেনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে। বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটা ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল হারের রেকর্ড-টেকর্ড আবার না হয়ে যায় আশঙ্কা করে। হ্যাঁ, মাঠে রেকর্ড অনেক হয়েছে; সবই বাংলাদেশের। মানে সাকিব আর রিয়াদের। এক পর্যায়ে কিউইদের হাতের মুঠোয় চলে যাওয়া ম্যাচটি কামড়ে-খামচে ছিনিয়ে নিয়ে এলেন দুই রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সাবিক-রিয়াদদেরই কেবল মানায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার নামে!!!

Advertisement

আরআই/আইএইচএস/