খেলাধুলা

সৌভাগ্যের সেই কার্ডিফেই স্বপ্নপূরণ

ঠিক এক যুগের ব্যবধান। এই এক যুগে বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশ এখন র‌্যাংকিংয়ে ৬ কিংবা ৭ নম্বরে থাকছে। এক যুগ আগে ৯ কিংবা ১০ নম্বরে। তখন জিম্বাবুয়ে, কেনিয়াসহ ছোট ছোট দেশগুলোর বিপক্ষে জয় কামনা করতে পারতো বাংলাদেশ। এখন জয় কামনা করে, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। গুণগত মানের এটাই তো বিশাল পরিবর্তন।

Advertisement

বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটা বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল তো এই কার্ডিফ থেকেই। তখন বড় বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে নামলে বুক কাঁপতো। মাঠে নামার আগেই হেরে বসতো। খেলা শুরুর আগে চিন্তা করতো, কত সম্মানজনক ব্যবধানে হারবো আমরা।

কিন্তু ২০০৫ সালের ১৮ জুন কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন যেন অনেক কিছুই বদলে দিলো। সাহস নিয়ে যে কোনো দলের বিপক্ষে খেলতে নামার রসদ জুগিয়ে দিলো। সাফল্য অনেক দেরিতে এসেছে ঠিক; কিন্তু মোহাম্মদ আশরাফুলের সেঞ্চুরিতে তখনকার সময়ের মহা-পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ।

দীর্ঘ এক ‍যুগ পর আবারও কার্ডিফে ক্রিকেট খেলতে গেলো বাংলাদেশ। একযুগ আগের একমাত্র সদস্য হিসেবে এই দলটিতে রইলেন শুধু মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনি আবার দলটির নেতৃত্বেও। সেই মাশরাফির অধীনে আবারও স্বপ্নপূরণ করলো বাংলাদেশ। এবার অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশি নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে।

Advertisement

কার্ডিফের এই ম্যাচটির সঙ্গে অনেক কিন্তু আর যদি জড়িত। সেমির স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে হলে নিউজিল্যান্ডকে হারাতেই হবে। সেই প্রত্যয় নিয়েই আজ পয়া ভেন্যু কার্ডিফে খেলতে নেমেছে মাশরাফির দল। শুরুতেই টস পরাজয়। নিউজিল্যান্ড আগে ব্যাটিং নিল। দেখে কিছুটা স্বস্তি। কম রানে বেধে রাখতে পারলে একটা চান্স নেয়া যাবে।

বোলাররা সেই ‘চান্স’ নেয়ার সুযোগটা করে দিলেন। অসাধারণ বোলিং করলেন বোলাররা। রান কম দিলেন। বেধে রাখলেন ২৬৫ রানের মধ্যে। জয়ের সুপ্ত ইচ্ছাটা তখনই জেগে উঠেছিল।

কিন্তু টিম সাউদি আর অ্যাডাম মিলনের বিধ্বংসী বলে ৩৩ রানেই ফিরে গেলেন চার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। স্বপ্নের অপমৃত্যু তখনই যেন দিব্যি চোখে দেখা যাচ্ছিল; কিন্তু অলক্ষ্যে সোফিয়া গার্ডেন কী শুনিয়ে যাচ্ছিল বিজয়ের জয়োগান। কেউ শুনতে না পাক, সাকিব-মাহমুদউল্লাহর ব্যাট ঠিকই শুনতে পেয়েছিল।

এই সোফিয়া গার্ডেনে ম্যাকগ্রা, গিলেস্পি, ক্যাসপ্রোভিজ কিংবা ব্র্যাড হজদের একের পর এক মাঠের বাইরে পাঠিয়ে ইতিহাস রচনা করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল-হাবিবুল বাশাররা। সোফিয়া গার্ডেনই তো সেই ইতিহাস যেন বুকে ধারণ করে রেখেছিলেন। সেই ইতিহাসের এক যুগ পার হয়ে গেলেও কার্ডিফের কাছে এখনও তনতাজা। এ কারণেই ভেতর থেকে যেন ভেন্যুটিই সাকিব আর মাহমুদউল্লাহকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। আগলে ধরে রেখেছিলেন আপন মহিমায়।

Advertisement

সুখস্মৃতির ভেন্যুর আকুতি শুনেছিল তাদের দু’জনের ব্যাট। যে কারণে এলো ২২৪ রানের বিশাল জুটি। জোড়া সেঞ্চুরিও এলো সাকিব আর মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে। সাকিব ১১৪ রান করে শেষ মুহূর্তে আউট হয়ে গেলেও মাহমুদউল্লাহ সেঞ্চুরি করে টিকে ছিলেন। মোসাদ্দেক এসে চার বলে ৭ রান করে এবং বাউন্ডারি মেরে বাংলাদেশকে ঐতিহাসিক জয় উপহার পেলো।

কার্ডিফে দুটি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের জয় দুটিতেই। আগে ছিল বাংলাদেশের একটা মাত্র সেঞ্চুরি। এবার হলো তিনটা। আশরাফুলের পর সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। জয়তু টিম বাংলাদেশ, জয়তু সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

আইএইচএস/