দেশজুড়ে

পান্তা দিয়েই নিয়মিত ইফতার করেন তারা

রাতে অতিরিক্ত ভাত রান্না করে সেই ভাতে পানি দিয়ে রাখি। পরদিন সন্ধ্যায় মাগরিবের আজান দিলে (ইফতারে) পানি দেয়া সেই ভাত (পান্তা) লবণ, কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে খাই। এভাবেই ইফতার করি।

Advertisement

কথাগুলো বললেন গাইবান্ধা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুখনগর এলাকার ফুলমতি বেগম (৭০)। প্রতিদিন এভাবেই ইফতার করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, দুইদিন প্রতিবেশিরা বুট, বুন্দিয়া, মুড়ি দিয়েছিল, তখন তা দিয়েই ইফতার করেছি।

ফুলমতি বেগম জেলা শহরের আবাসিক এলাকার একটি বাসায় ঝিয়ের কাজ করেন। তা দিয়ে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে।

দেড়শতক জমিতে ছোট্ট একটি টিনের ছাপড়াঘর তুলে সেখানে স্বামী আবু হোসেনকে নিয়ে থাকেন ফুলমতি বেগম। ঝড় শুরু হলে অন্যের বাড়িতে ছুটে যান। ঘরে টিনের ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির পানি তার ঘরের ভেতরে ঢোকে।

Advertisement

ফুলমতি বেগমের স্বামী আবু হোসেন (৮০) আগে রিকসা চালাতেন। এখন বয়সের ভারে বেশির ভাগ সময় অসুস্থ থাকেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ঠিকমত হাঁটতেও পারেন না তিনি।

ফুলমতি বেগমের এক মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে রাবেয়া ও ছোট ছেলে শাহিন মিয়ার বিয়ে হয়েছে। তারা আলাদা সংসার করেন। শাহিন মিয়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকসা চালান। বাবা-মায়ের সঙ্গে একই বাড়িতে থাকেন শাহিন।

শাহিন মিয়া বলেন, ভাড়ায় অটোরিকসা চালাই। মালিকের টাকা ও রাস্তায় টোলসহ বিভিন্ন চাঁদার টাকা পরিশোধ করে সামান্য টাকা থাকে। তাতে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না। এরপর সুযোগ হলে বাবা-মাকে সহযোগিতা করি।

আবু হোসেন বলেন, এখন বয়স হয়েছে। কোনো কাজ করতে পারি না। বয়স্ক ভাতাও পাইনি। এখন স্ত্রীর টাকায় সংসার চলছে। টাকার অভাবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ডাক্তার দেখাতেও পারছি না।

Advertisement

ফুলমতি বেগম শুক্রবার সন্ধ্যায় জাগো নিউজকে বলেন, অন্যের বাড়িতে কাজ করে সামান্য টাকা পাই। সেই টাকায় আজকের দিনে সংসার চলেনা। সেখানে আবার খেজুর, বুট, বুন্দিয়া, মুড়ি, পেঁয়াজু ইত্যাদি ইফতারসামগ্রী কেনার টাকা কোথায় পাবো বাবা।

ফুলমতি বেগমের প্রতিবেশি আব্দুর রহমান বলেন, তারা অত্যধিক গরিব মানুষ। কখনও ঘরে খাবার না থাকলে অন্যের বাড়ি থেকে চেয়ে নিয়ে খান। সরকারের উচিত তাদের মত গরিবদের পুনর্বাসিত করা।

রওশন আলম পাপুল/এমএএস/পিআর