‘ডাবলিনের উইকেট তুলনামুলক নরম। বল একটু থেমে আসে। হাত খুলে শটস খেলা কঠিন। খেলতে হয় একটু রয়ে সয়ে। আর ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের পিচ তুলনামুলক স্পোর্টিং। বল ভাল গতিতে ব্যাটে আসে। বাউন্সও স্থির। তাই স্ট্রোক খেলা তুলনামুলক সহজ।’
Advertisement
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর অনুভব এটা। আগের দিন জাগো নিউজের সাথে আলাপে এমন মূল্যায়নই করেছিলেন প্রধান নির্বাচক। এ অভিজ্ঞ ও কুশলী ক্রিকেট যোদ্ধার মূল্যায়নকে নিয়ামক ধরলে বলতে হবে, ডাবলিনের ক্লনটার্ফ ক্রিকেট ক্লাব মাঠের চেয়ে কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনের পিচে ব্যাট করা তুলনামুলক সহজ।
এই পিচে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর জন্য টাইগারদের টার্গেট ২৬৬। যা ডাবলিনের চেয়ে ৫ রান কম। ডাবলিনে ২৭১ রান টপকে ১০ বল আগে ৫ উইকেটের সহজ জয় পেলে এখানে কেন নয়?
নিউজিল্যান্ড ইনিংস শেষ হওয়া মাত্র প্রতিটি বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকের মুখে মুখে এ কথা। শুধু মুখে বলাবলি করাই নয়। কোটি বাঙ্গালীর মনে জয়ের অদম্য বাসনা। সবার উন্মুখ অপেক্ষা, সাফল্যের পয়মন্ত: ভেন্যু কার্ডিফে কিউইদের এ রান ঠিক টপকে যাবে মাশরাফির দল।
Advertisement
এ কথাবার্তা ও চিন্তা-ভাবনায় যে শুধুই আবেগ মাখা, তা বলা যাবে না। ক্রিকেটীয় যুক্তিও আছে। পরিসংখ্যান স্বাক্ষী দিচ্ছে, গত ২৪মে ডাবলিনে তিন জাতি সিরিজে কিউইদের ২৭০ রান অনায়াসে টপকে গিয়েছিল মাশরাফির দল। ওই রান টপকাতে যেমন ব্যাটিং দরকার, ঠিক তাই হয়েছিল।
ঠিক আগের দিন ভারতের ৩২১ রানের পাহাড় টপকাতে গিয়ে লঙ্কানরা যেমন গাণিতিক ব্যাটিং করেছেন, ওপেনার, তিন নম্বর এবং মিডল অর্ডার একটা ছক কষে খেলে জয়ের বন্দরে পৌছে গেছে, ঠিক তেমন হিসেবি ব্যাটিংই করেছিলেন তামিম-সাব্বির আর মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তার ব্যাট যেন খোলা তরবারি, সেই তামিম ইকবাল যথারীতি দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন। এ বাঁ-হাতি ওপেনারের সাথে চমৎকার পার্টনারশিপ গড়ে জয়ের ভীত রচনা করে দিয়েছেন ওয়ানডাউনে নামা সাব্বির।
দুজনার ব্যাট থেকেই এসেছিল ৬৫ রানের দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস। দ্বিতীয় উইকেটে ১৩৬ রানের জুটিতে জয়ের পথে এগিয়ে যাওয়া দলকে শেষ বন্দরে লক্ষ্যে পৌছে দেন মাহমুদউল্লাহ (৩৬ বলে ৪৬*) আর মুশফিকুর রহীম (৪৫ বলে ৪৫*)। ষষ্ঠ উইকেটে দুই ভায়রার অবিচ্ছিন্ন ৭২ রানে দারুণ জয় পায় বাংলাদেশ।
Advertisement
আজ ঠিক অমন ব্যাটিংটাই দরকার। বাড়তি কোন কিছুরই প্রয়োজন নেই। আবেগতাড়িত আর উচ্চভিলাষি শট খেলার কোনই দরকার নেই। দুই ওপেনার তামিম (ইতিমধ্যে আউট)-সৌম্যর যে কোন একজন ইনিংসের মাঝামাঝি সময় পার করে দিতে হবে। তাহলেই ইনিংস একটা ভীতের ওপর দাঁড়াবে।
আর ওয়ানডাউনে ফিরে আসা সাব্বির ও চার নম্বর মুশফিকের যে কোনো একজন মিলে দুই ওপেনারের যে কারো সাথে ১২৫-১৩০ রানের একটা পার্টনারশিপ তৈরি হলেই ভীত গড়ে উঠবে। তখন যে রানটুকু থাকবে তা সাকিব, মাহমুদউল্লাহ ও আবার দলে ফেরা মোসাদ্দেক অনায়াসে তুলে নিতে পারবেন। মোদ্দা কথা, তড়িঘড়ির কিছুই নেই। উইকেট ঠিক আছে। শুধু অ্যাপ্রোচ অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশনটা যথাযথ হলেই চলবে।
অধিনায়ক মাশরাফি ও বোলাররা কৃতিত্ব দাবি করতেই পারেন। ক্যাপ্টেন মাশরাফি নিজে ভাল বোলিং করেছেন। তার ১০ ওভারে রান ওঠে ৪৫। এর মধ্যে একটি মেডেনও পেয়েছেন টাইগার ক্যাপ্টেন। তার বোলার ব্যবহারও ভাল হয়েছে। সবচেয়ে কার্যকর হয়েছে শেষ দিকে অফস্পিনার মোসাদ্দেককে ব্যবহার করাটা।
কিউই টেলএন্ডারদের স্পিনে সমস্যা আছে, তা জেনে বুঝেই শেষ দিকে হঠাৎই মোসাদ্দেকের হাতে বল তুলে দিলেন মাশরাফি। মাত্র তিন ওভারের ছোট্ট স্পেলে সর্বাধিক তিন উইকেট ঝুলিতে পুরে নিলেন মোসাদ্দেক।
ওই সময় কোরি এ্যান্ডারসন আর জিমি নিশাম, দুই বাঁ-হাতির উইকেট ঝটপট তুলে নেন মোাদ্দেক। এছাড়া নেইল ব্রুমের উইকেটটিও জমা পড়ে এ অফস্পিনারের ঝুলিতে। অফস্পিনার মিরাজের পরিবর্তে খেলতে নামা তাসকিন আহমেদও নিজের যথার্থতার প্রমাণ দিলেন।
পেসারদের মধ্যে সর্বাধিক দুই উইকেটের পতন ঘটিয়েছেন তাসকিন। শুধু তাই নয়, চতুর্থ পেসার হিসেবে এ ম্যাচ খেলা তাসকিন আট নম্বর ওভারে প্রথম বল হাতে নিয়েই ভেঙ্গে দেন কিউইদের উদ্বোধনী জুটি। তার বলে মিডঅনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রনকি।
তাসকিনের দ্বিতীয় শিকার ছিলেন রস টেলর। নিউজিল্যান্ড ইনিংসের টপ স্কোরার রস টেলর ফাইন লেগের ওপর দিয়ে চালাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন শর্ট ফাইন লেগে। রস টেলর ফাইন লেগের ওপর দিয়ে চালাতে পারেন, তা দেখে ও বুঝে খানিক শর্ট অফ লেন্থে বল ফেলেন তাসকিন। কাজেই ব্যাটসম্যান আর এডজাষ্ট করতে পারেননি।
পেসারদের মধ্যে আরেক উইকেট পান রুবেল হোসেন। ব্ল্যাক ক্যাপস ওপেনার মার্টিন গাপটিলকে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে সাজ ঘরে ফেরান রুবেল।
ডাবলিনের সাথে চালচিত্রর মিল আছে অনেকটাই। ২৪ মে‘ও নিউজিল্যান্ডের ৮ উইকেট খোয়া গিয়েছিল। আজ কার্ডিফেও ৮ উইকেট হারিয়েছে উইলিয়ামসনের দল। ওই ম্যাচে অধিনায়ক মাশরাফি দুই উইকেট পেয়েছিলেন। আর দুই স্পিনার সাকিব-নাসির দখল করেছিলেন দুটি করে উইকেট।
আজ অফস্পিনার মোসাদ্দেক সর্বাধিক তিনটি, তিন পেসার তাসকিন (দুটি), মোস্তাফিজ ও রুবেল মিলে চার উইকেটের পতন ঘটিয়েছেন। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত ডাবলিন ফিরে আসে নাকি কার্ডিফে?
এআরবি/আইএইচএস/পিআর