ঈদের বাকি আর মাত্র দুই সপ্তাহ। মুসলমানদের সবচেয়ে আনন্দের এই দিনটিতে নতুন কোন ডিজাইনের জামা পরবেন তা ঠিক করতে ব্যস্ত মেয়েরা। অনেকে থ্রি-পিস, ফোর-পিস কিনে ইতোমধ্যে নকশা করতে দিয়েছেন ডিজাইনারদের কাছে। আর একসঙ্গে এতো কাপড়ের অর্ডার নিয়ে কাজে ফুরসত পাচ্ছেন না দোকানিরা।
Advertisement
ক্রবার সরেজমিন রাজধানীর নিউমার্কেটে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেল। মার্কেটের তিনতলায় ঢুকতেই চারদিক থেকে সেলাই মেশিনের ঝি-ঝি শব্দ। কোনো কোনো দোকানে একসঙ্গে চার থেকে পাঁচটি মেশিন নিয়ে চলছে কাপড়ে এমব্রয়ডারি আর কারচুপির নকশার কাজ। কেউ বসেছেন দোকানের বাইরে করিডরে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এবারের ঈদে মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে ভারতীয় বিভিন্ন কারচুপি (কাপড়ের উপর পুঁতি ও পাথর বসিয়ে বাহারি ডিজাইন) আর এমব্রয়ডারির ডিজাইন। যে যার মতো কাপড় কিনে দিয়ে এসব কাজ করাচ্ছেন।
ঈদে যারা রেডিমেড বা গৎবাঁধা ডিজাইনের ড্রেস পরতে চান না, তারা এই মার্কেটে আসেন। তারা নিজেরা ড্রেসের ডিজাইনের ছবি নিয়ে এসে দর্জিদের দেন। আর দর্জিরা শাড়ি, থ্রি-পিসে চুমকি, জরি ও পুঁতি লাগিয়ে সেসব ডিজাইন হুবুহু এঁকে দেন।
Advertisement
নাজিম উদ্দিন নামে সাদমান এমব্রয়ডারির এক কর্মী জানান, অনেকেই ভারতীয় পত্রিকা, নাটকের অভিনেত্রীদের ড্রেসের ডিজাইনের ছবি মোবাইলে এনে দেন। আমরা ট্রেসিং পেপারে ছাপ দিয়ে হুবুহু ডিজাইন তৈরি করি। ক্রেতারা নিজ পছন্দের কাপড় কিনে দেন। আমরা কাপড়ের ওপর কাজ করি। আমাদেরই দর্জিরা সেসব কাপড় সেলাই করে ফিনিশিং টাচ দেয়।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রতি জামায় এমব্রয়ডারি করার জন্য তারা কমপক্ষে ৫শ থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত মজুরি নিয়ে থাকেন। ডিজাইনভেদে এই মজুরি কমবেশি হয়। ঈদের আগে যেসব ডিজাইন ৩শ কিংবা সাড়ে ৩শ ছিল সেগুলো এখন ৫শ-এর কমে হচ্ছে না। ডেলিভারি দিতে সময় লাগছে পাঁচ থেকে ছয় দিন।
আর কারচুপির কাজ সম্পূর্ণটাই হাতে করতে হয়। কর্মীরা দীর্ঘসময় নিয়ে এ কাজ করেন বলে মজুরিও বেশি। একটি কারচুপি কাজের মজুরি কমপক্ষে ৮শ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। কাপড় ডেলিভারির সময় কমপক্ষে ১০দিন। আগামী ১৫ তারিখের পর থেকে এই ডিজাইনের কোনো অর্ডার নেবেন না বলে জানান দোকানিরা।
প্রতিদিন একটি দোকানের একজন কর্মী গড়ে তিন থেকে চারটি এমব্রয়ডারি এবং সর্বোচ্চ এক থেকে দুটি কারচুপির কাজ করতে পারেন। একজন কর্মী দিনে সর্বোচ্চ ৭শ থেকে এক হাজার টাকা আয় করতে পারেন।
Advertisement
বিক্রেতাদের ভাষ্য মতে, এবারের ঈদ বাজারে ‘বাহুবালি-২’ আর ‘কাটাপ্পা’ জামার পাশাপাশি কোনো অংশেই কম যাচ্ছে না এসব এমব্রয়ডারি ও কারচুপির জামা। যারা ‘আনকমন’ জামা পড়তে পছন্দ করেন তাদের প্রথম পছন্দ কারচুপি ডিজাইন।
আশিকা আহমেদ নামে এক ক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, আমি সবসময়ই ঈদের জামাগুলো এখান থেকে বানাই। এখানকার কেনাকাটা অনেকটাই ঝামেলামুক্ত। ডিজাইনারদের কাপড় কিনে মোবাইলে ‘শেয়ার ইট’-এর মাধ্যমে ডিজাইন দেই। তারা হুবুহু ডিজাউইন কাপড়ে তুলে দেন। তাদের নিজেদের দর্জিরাই আবার জামা সেলাই করে দেন।
শুক্রবার সকালে নিউমার্কেট ও এর আশপাশের মার্কেটগুলোতে গিয়ে ক্রেতার সংখ্যা খুব কম চোখে পড়ে। সাফা এমব্রয়ডারির বিক্রেতা ফয়সাল খান বলেন, শুক্রবার সকালে এমনিতেই ক্রেতা কম থাকে। সবাই কাজ শেষ জুম্মা নামাজের পর কেনাকাটা করতে আসে। দুপুরের পর ভিড় হবে বলে মনে করছি।
এআর/জেডএ/পিআর