চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড প্রিভিউ কমিটির অন্যতম সদস্য মুশফিকুর রহমান গুজলজারকে সেন্সরের প্রিভিউ কমিটি থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবি তুলছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া। প্রতিষ্ঠানটির ভেরিফায়েড ফ্যান পেজে গুলজারের নাম উল্লেখ করে একটি স্ট্যাটাসে এমন দাবি করেছে জাজ মাল্টিমিডিয়া।
Advertisement
আজ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বিকেলে জাজ ওই স্ট্যাটাসে লেখে, ‘প্রিভিউ কমিটিতে মূলত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের লোকজন থাকে আর চলচ্চিত্র থেকে পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার সাহেব ও প্রযোজক নাসির উদ্দিন দিলু ভাই থাকেন। বস ২ সিনেমা প্রিভিউ কমিটি দেখে বলেছে, বাংলাদেশ থেকে তেমন কোন আর্টিস্ট নেওয়া হয়নি। শুধু নুসরাত ফারিয়া ও আমিত হাসান ছিল।
কিন্তু ‘বস ২’ ছবিতে নুসরাত ফারিয়া, অমিত হাসান ছাড়াও অভিনয় করেছেন নাদের চৌধুরী, সুষমা সরকার, আমিন সরকার, সীমান্ত, সাহেদ আলী, দেলোয়ার, ফারুক, রাজা, কাদের, নেপালি, তাসনিয়া, জেবা, সাজিদ, জয়।’
জাজের ভাষ্য, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ এদের সবাইকে নাও চিনতে পারে। কিন্তু এদের তো গুলজার সাহেবের চেনার কথা! তাহলে উনি কি চিনেও না চেনার ভান করেছে, জাজের প্রতিপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে। তাহলে তো উনি নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। সেই ক্ষেত্রে সরকারের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উনাকে প্রিভিউ কমিটি থেকে সরিয়ে দেয়া। আবার যদি উনি সত্যি না চিনে থাকেন, তাহলে তো উনি অযোগ্য এই পদে, সেই ক্ষেত্রেও উনাকে এই পদ থেকে সরিয়ে দেয়া উচিত।’
Advertisement
জাজের এমন দাবিতে সমালোচনার ঝড় বইছে চলচ্চিত্র পাড়ায়। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতির নাম উল্লেখ করে তার নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করায় ও তাকে অযোগ্য দাবি করায় জাজের উপর ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নতুন প্রজন্মের এক পরিচালক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেয়াদবির একটা সীমা থাকা উচিত। আমি জাজের স্ট্যাটাসটি পড়েছি। সেখানে মুশফিকুর রহমান গুলজার সাহেবের নামটি পর্যন্ত সম্পূর্ণ উচ্চারণ করা হয়নি। নিজেদের দোষ ঢাকতে তারা গুলজার সাহেবের নিরপেক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অথচ এই প্রশ্ন তাদের নিজের করা উচিত যে পরিচালক সমিতির সভাপতিই যখন শিল্পীদের চিনতে পারছেন না তখন কোন মান ও ক্যাটাগরির চরিত্রে শিল্পী নেয়া হয়েছে ঢাকা থেকে সেটা অনুধাবন করা উচিত। শিল্পীদের সংখ্যা ১৬ জন দেখিয়ে কী বুঝাতে চায় প্রতিষ্ঠানটি? মাত্র ৩২ জন দিয়ে সিনেমা শেষ করেছে তারা? ছবিতে আরও অনেক অসংগতির কথা বলা হয়েছে প্রিভিউ কমিটি থেকে। আর শিল্পীদের চিনতে না পারার দায় কেবল গুলজার সাহেবের উপর কেন দেয়া হচ্ছে?
এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরও তো দায় থাকে। দায় থাকে আরও অনেকের। এইসব দেখেই আঁচ করা যায় জাজ নতুন বিতর্ক তৈরি করতে চায়। বিতর্ক দিয়েই প্রতিষ্ঠানটি সবসময় সবার দৃষ্টি কাড়তে চেয়েছে। তবে ভুল করে বেশিদিন শুদ্ধ হয়ে থাকা যায় না। শেষ তো থাকেই।’
চলচ্চিত্রপাড়ায় আরও সমালোচনা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির হল বাঁচানোর আহ্বানের প্রেক্ষিতে। আজকের স্ট্যাটাসে পরিচালকদের সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘শুধু মাত্র নেতাগিরি করার জন্য দয়া করে হল বন্ধ করবেন না, হল বন্ধ হলে কিন্তু নেতাগিরি করার জায়গা থাকবে না।’ এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, ‘দেশের হল মালিকদের তো জাজই জিম্মি করে রেখেছে। কেউ চাইলেও হল পায় না, জাজ না চাইলে। এইসব অনিয়মের বিরুদ্ধেই সোচ্চার আজ সমগ্র চলচ্চিত্রপাড়া। অবস্থা বেগতিক দেখে নিজেকে বাঁচাতে মনগড়া তথ্য ছড়াচ্ছে জাজ।
Advertisement
তবে এ বিষয়ে মুশফিকুর রহমান গুলজার কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, ‘সময় বলে দেবে কে যোগ্য আর কে অযোগ্য।’
যৌথ প্রযোজনার নির্মিত হয়েছে ‘বস ২’ ছবিটি। মঙ্গলবার (৬ জুন) ছবিটি সেন্সরে প্রিভিউ কমিটিতে ছবিটি প্রদর্শিত হয়। এরপর প্রিভিউ কমিটি থেকে জানানো হয়, দুদেশের শিল্পীর অনুপাত ও যৌথ প্রযোজনার নিয়ম না মেনেই নির্মিত হয়েছে ‘বস ২’।
নাসিরউদ্দীন দিলু জাগো নিউজকে বলেন, ‘বস-টু ছবিটি আজ সকালে আমরা দেখেছি। এতে শিল্পী নেয়ার ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে কম সংখ্যক শিল্পী নেয়া হয়েছে। এর পরিমাণ হবে- বাংলাদেশ থেকে ২০ ভাগ আর কলকাতা থেকে ৮০ ভাগ। অথচ ফিফটি ফিফটি হবার কথা ছিলো।’
তিনি আরো বলেন, ‘ছবিটিতে শিল্পী নেয়ার ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। শুটিংয়ের নিয়মও মানা হয়নি ছবিটি নির্মাণের ক্ষেত্রে। এইসব বিষয় লিখিতভাবে গতকাল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছি।। মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
‘বস ২’ ছবিতে জিৎ-শুভশ্রী ছাড়াও অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, অমিত হাসান প্রমুখ। ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া ও জিতস ফিল্মওয়ার্কস প্রাইভেট লিমিটেড। বাবা যাদবের পরিচালনায় ‘বস ২’ ছবিটির কো-ডিরেক্টর হিসেবে আছেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ।এনই/এলএ