মতামত

তিন শ্রমিকের মৃত্যুর দায় কে নেবে?

রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিপরীতপাশে একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে ওই এলাকায় রূপায়ন ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ১০ তলা নির্মাণাধীন ভবনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- সায়েম (২৩) ও জয়নুল (২২) এবং জাহাঙ্গীর (২৪)। তাদের সবার বাড়ি-ই সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। ১০ তলা ভবনের লিফটের খালি জায়গায় ঝুলন্ত মাচা তৈরি করে কাজ করছিলেন তারা। হঠাৎ করে তিনজনই এক সঙ্গে নিচে পড়ে যান। উদ্ধার করে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে নির্মাণ শ্রমিকদের জীবন কতটা নিরাপত্তাহীন।

Advertisement

এ ধরনের মৃত্যু কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। আরো দুঃখজনক হচ্ছে এ ধরনের দুর্ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে রাজধানীর মালিবাগে রেলগেট সংলগ্ন নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে স্বপন নামে এক পথচারী নিহত হন। এছাড়া ২০১২ সালে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট জংশনে নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের গার্ডার ভেঙে ১৩ জন নিহত হন। তখন নির্মাণ কাজে নিরাপত্তা নিয়ে অনেক কথা হয়েছিল। কিন্তু ফলাফল শূন্য। অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে রাজধানীজুড়েই রয়েছে অসংখ্য মৃত্যুর ফাঁদ। রাজধানীতে অনেক বড় বড় বিলবোর্ড বসানো হয়েছে। ঝড়ে সেগুলো পড়ে গিয়েও পথচারীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ইতিপূর্বে। ঝুঁকিপূর্ণ এবং অসংখ্য অবৈধ বিলবোর্ড এখনো রয়ে গেছে। এছাড়া বিদ্যুত, টেলিফোন, ডিশলাইনের তারসহ অসংখ্য তার বিপজ্জনক ভাবে জড়াজড়ি করে আছে রাজধানীজুড়ে। যে কোনো মুহূর্তে এগুলো বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এগুলো দেখভালের কেউ আছে বলে মনে হয় না। সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন।

এসব ঘটনায় দোষীদের কখনো শাস্তি হয় না। আশার কথা হচ্ছে, রাজধানী ঢাকার মালিবাগ রেলগেট এলাকায় নির্মাণাধীন মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে নিহত স্বপনকে ৫০ লাখ টাকা এবং আহত অপর দুইজনকে ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ কেনো দেয়া হবে না তা জানতে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, তমা কন্সট্রাকশনের কর্মকর্তা ও রমনা থানার ওসিকে রুলের জবাব দিতে হবে। হাইকোর্টের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরি ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গতকাল বুধবার এই রুল জারি করেন।

নানা দিক থেকেই রাজধানী শহর বসবাসের অনুপযোগী। পথে পথে এখানে মৃত্যুর ফাঁদ পাতা। কখন কার যে কিভাবে মৃত্যু হবে কেউ তা বলতে পারবে না। ফুটপাতগুলো দখলে, অধিকাংশ ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা, রাস্তার পাশেই ওয়েলডিং কারখানা, নির্মাণ কাজ চলে পথচারীদের জন্য নিরাপত্তামূলক কোনো ব্যবস্থা না রেখেই। পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় গাড়ি রাখা হয় রাস্তায়। এ জন্যও ঘটে নানা দুর্ঘটনা।

Advertisement

বলা হয় সবার আগে নিরাপত্তা। কিন্তু পদে পদে সেটি লঙ্ঘন করা হয়। কাউকে কোনো দায় নিতে হয় না বলে ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকে। অসতর্কতা ও কর্তব্যকর্মে ঔদাসীন্য কী মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনতে পারে তার সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে তিন নির্মাণ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা। কিন্তু এরপরও কি কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে না?

এইচআর/পিআর