জাতীয়

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিচারপতি লতিফুর রহমানের জানাজা সম্পন্ন

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের জানাজা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ২ টার দিকে তার জানাজা হয়। জানাজায় সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী, কে এম হাসান, সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেন, মো. মোজাম্মেল হোসেন অংশ নেন।

Advertisement

উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সাবেক মন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রমুখ।

জানাজা শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান অত্যন্ত ভালো লোক ছিলেন। আমি প্রধান বিচারপতি ছাড়াও আইনজীবী হিসেবে তাকে পেয়েছি। তিনি সবসময় হাসিখুশি ছিলেন। তিনি আমাদের অভিভাবক ছিলেন, আমরা সবাই মর্মাহত।

‘তিনি এমন অনেক রায় দিয়েছেন, যা আমরা এখনও অনুসরণ করি। তিনি অতি ভদ্র লোক ছিলেন। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’

Advertisement

সদ্য প্রয়াত সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের জানাজায় আরো অংশ নেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রফেসর ইমেরিটাস ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতা।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বেশ ক’দিন ধরে বিচারপতি লতিফুর রহমান নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে ভুগছিলেন।

প্রয়াত প্রধান বিচারপতির শ্যালক শামসুল হুদা জানিয়েছেন, রাজধানীর বনানী কবরস্থানে লতিফুর রহমানের দাফন সম্পন্ন হবে।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সাবেক এ প্রধান বিচারপতির মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল ১১ টার পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দিনের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। দুপুরের পর হাইকোর্ট ও চেম্বার আদালত আর বসেননি।

Advertisement

১৯৩৬ সালের ১ মার্চ যশোরে জন্ম নেয়া লতিফুর রহমান ১৯৭৯ সালে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হন। ১৯৮১ সালে তিনি স্থায়ী বিচারপতি হন। ১৯৯১ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হন তিনি। ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথগ্রহণ করেন লতিফুর রহমান। ২০০১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি অবসরে যান।

১৯৯৬-২০০১ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষে তখনকার নিয়ম অনুযায়ী সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন বিচারপতি লতিফুর রহমান। তার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়।

যশোর বারের আইনজীবী খান বাহাদুর লুৎফর রহমানের তৃতীয় সন্তান লতিফুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৬ সালে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। এরপর সেখানেই এলএলবি করেন তিনি। তার মামা বিচারপতি নুরুল হুদাও এক সময় হাইকোর্টের বিচারক ছিলেন।

ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে শিক্ষকতার মধ্যে দিয়ে চাকরি জীবন শুরু করলেও পরে ১৯৬০ সালে আইন পেশায় যোগ দেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল এম এইচ খন্দকারের শিক্ষানবিশ ছিলেন লতিফুর রহমান।

বিচারপতি লতিফুর রহমানের স্ত্রীর নাম আয়েশা বেগম। শম্পা, রুম্পা ও নিপা নামে তাদের তিন মেয়ে রয়েছেন।

এফএইচ/এমএমএ/জেআইএম