ভারতে আটক `নিখোঁজ` বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে রহস্য বাড়ছে মেঘালয় রাজ্যে। সোমবার সকালে রাজ্য পুলিশ রাজধানী শিলংয়ের রাস্তা থেকে সালাহউদ্দিনকে আটক করে।সালাহউদ্দিনকে প্রথমে সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে ধরা হলেও পরে বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার জিয়ার উপদেষ্টা বলে জানতে পারে। এ নিয়ে ওই রাজ্যে তাদের মধ্যে ক্রমান্বয়ে কৌতুহল বাড়তে থাকে।সালাহউদ্দিনকে আটকের পর শিলং টাইমস্ পত্রিকায় `বি-দেশি ম্যান হেল্ড` শিরোনামে একটি সাদামাটা সংবাদ পরিবেশন করে। সংবাদে জানানো হয়, দেশটির পুলিশ জানিয়েছে সোমবার সকালে এক বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের বরাত দিয়ে সংবাদে আরো জানানো হয়, শিলিংয়ের গলফলিং এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশি নাগরিক সালাউদ্দিনকে। নিখোঁজ এ বিএনপি নেতাকে নিয়ে দেশের ভেতরে রাজনৈতিক উত্তাপ ও সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ফলাও করে প্রচার করলেও শিলং টাইমস্ এর তৃতীয় পৃষ্ঠায় গুরুত্বহীনভাবে ছাপানো হয়েছিল।মেঘালয় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে সালাহউদ্দিনের নামে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। সালাহউদ্দিন পুলিশের কাছে দাবি করেছেন তিনি দুর্বৃত্তদের হাতে অপহৃত হন এবং দুর্বৃত্তরা চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে শিলংয়ে ছেড়ে দেয়।সোমবার আটকের পর তাকে মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেল্থ অ্যান্ড নিউরোলজিক্যাল সায়েন্সেস (মিমহ্যান্স) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে মেঘালয়ের সিভিল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে তাকে প্রিজন সেলে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।মিমহ্যান্স হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পিকে রয় জানান, সালাহউদ্দিন আহমেদ মানসিকভাবে সুস্থ। তবে তার হার্ট এবং কিডনির কিছু সমস্যা রয়েছে। মেঘালয়ের সিভিল হাসপাতালে ভারতীয় গণমাধ্যম সালাহউদ্দিন জানান, তিনি বাংলাদেশ থেকে অপহৃত হন। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে কারো সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করে মুখ ঢেকে দেয়।প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে মেঘালয় পুলিশ জানায়, সালাহউদ্দিনকে মারুতি জিপসিতে করে দুর্বৃত্তরা শিলংয়ে রেখে যায়। মেঘালয় রাজ্য পুলিশ থেকে জানানো হয়, তারা প্রথমে বিস্মিত হন এই ভেবে যে, আটক ব্যক্তি বাংলাদেশের একজন সাবেক মন্ত্রী। একজন মন্ত্রীকে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া আটকের বিষয়টি নিয়েও তারা বিস্ময় প্রকাশ করেন।পূর্ব খাসি পার্বত্য অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) এম খর্গরং জানান, সালাহউদ্দিনের কাছে পাসপোর্ট ও বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাকে আইন অনুযায়ীই আটক করা হয়েছে। শিলংয়ে সালাহউদ্দিনের হঠাৎ উপস্থিতিও সেদেশের পুলিশ বাহিনীর আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে অনেক আগে থেকেই তর্ক-বিতর্ক চলে আসছে।মঙ্গলবার দ্য শিলং টাইমস পত্রিকা জানিয়েছে, সালাহউদ্দিনের খোঁজ পাওয়ার পর বিভিন্ন রাজনীতিক এবং সাংবাদিক নেতারা ফোনের ওপর ফোন করছেন এ বিষয়ে জানার জন্য।তবে মেঘালয় টাইমস পত্রিকা সালাহউদ্দিনকে নিয়ে কৌতুল প্রকাশ করেছে। পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, মেঘালয়ে কীভাবে এলেন সালাহউদ্দিন? কীভাবে সীমান্ত এলাকায় ফাঁকি দিয়ে সালাহউদ্দিনকে নিয়ে এলেন অপহরণকারী চক্র? তাদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন কীভাবে একটি অপহরণকারী চক্র কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই সীমান্ত পার করে তাকে মেঘালয়ে নিয়ে এলেন। পত্রিকায় বলা হয়েছে, মেঘালয়-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা অত্যন্ত সুরক্ষিত। নতুন করে এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।এ দিকে, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুতই বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে এনে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বুধবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সালাহউদ্দিন আত্মগোপনে ছিলেন এবং বিভিন্ন স্থান পরিবর্তন করছেন এটা এখন প্রমাণিত হলো। তার নামে বেশ কয়েকটি মামলা আছে, তাই দেশে যখন আসবেন তখন আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে। উনি (সালাহউদ্দিন) এখন ভারতে আছেন এবং সেখানেও তার একটি মামলা আছে। তাই ভারত সরকারের আইনি প্রক্রিয়া শেষে এখানে তিনি আসবেন। তখন আমরা আমাদের প্রক্রিয়া অনুযায়ী কাজ করবো’।এছাড়া, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। বুধবার দুপুরে গুলশানের ৭২ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাসায় সাংবাদিকদের কাছে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘ভিসার জন্য সকালেই আবেদন জমা দিয়েছি। হাইকমিশনে আমাদের লোকজন কাজ করছেন। ভিসা হাতে পেলেই আমি শিলং রওনা হবো’।মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় মেঘালয় থেকে স্ত্রী হাসিনা আহমেদের সঙ্গে সালাহউদ্দিনের কথা হয় বলে বিবিসির খবরে বলা হয়েছিল। বিবিসিকে হাসিনা আহমেদ বলেন, মেঘালয়ের একটি হাসপাতাল থেকে তিনি ফোন করেছেন। শুধু বলেছেন, আমি ভালো আছি। তোমরা আসার ব্যবস্থা করো।উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ রাতে ‘নিখোঁজ’ হন সালাউদ্দিন আহমেদ। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কয়েকদিন আগেও অভিযোগ করেছিলেন যে সালাউদ্দিন র্যাবের কাছে আছেন। তবে র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবসময়ই এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন।বিএ/একে/আরআই
Advertisement