দেশের পোশাক শিল্প ৩৫ বছরের মধ্যে এখন সব থেকে সংকটময় ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি বলে দাবি করেছে দেশের পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটি বলছে, আগামী দুই বছরের জন্য সম্পূর্ণ উৎসে কর মওকুফ এবং এফওবি’র (ফ্রি অন বোর্ড) ওপর ৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দিলে পোশাক শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে।
Advertisement
২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাস্তাবিত বাজেট নিয়ে রোববার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান এমন দাবি উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এখন পর্যন্ত যা ঘটেছে তাতে এটি পোশাক শিল্পবান্ধব বলা যায় না। তবে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী পোশাক শিল্প নিয়ে যা বলেছেন তাতে মনে হচ্ছে এটি পোশাক শিল্পবান্ধব। বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার আগে এখনও ২৫ দিনের মতো আলোচনার সুযোগ আছে। আশা করি এর মধ্যেই আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভালো অবস্থানে পৌঁছাতে পারব।
পোশাক শিল্প ৩৫ বছরের মধ্যে বর্তমানে সব থেকে সংকটময় পরিস্থিতিতে রয়েছে উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সংকটময় পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে শ্রমনিবিড় পোশাক শিল্প খাতটি বাঁচিয়ে রাখার জন্য শিল্পে নিবিড় সহায়তা ও প্রণোদনার বিকল্প নেই।
Advertisement
‘আমরা মনে করি, আরও দু’টি বছর কোনোভাবে টিকে থাকতে পারলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব। আরও বহু লোকের কর্মসংস্থান করতে পারব। যেহেতু বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক সহযোগিতা ও সহানুভূতি পেয়েই শিল্পটি আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছে, তাই আমরা একান্তভাবে আশা করি টিকে থাকার জন্য সরকার এ খাতের দুঃসময়ে আপদকালীন সহায়তা ও প্রণোদনা দেবেন।’
তিনি বলেন, আমাদের একান্ত অনুরোধ ছিল পোশাক রফতানির ওপর উৎসে কর আগামী দুই বছরের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হোক। কিন্তু দুঃখের বিষয়, উৎসে কর প্রত্যাহার হয়নি। বরং বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী পোশাক খাতে উৎসে কর বেড়ে ১ শতাংশ হচ্ছে। এটি শিল্পের বিকাশের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক।
‘তাই অর্থমন্ত্রীর প্রতি আমাদের একান্ত বিনীত অনুরোধ দু’টি বছর উৎসে কর শূন্য শতাংশ করে দিন। পাশাপাশি বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে পোশাকখাতের সুরক্ষায় আগামী দুই বছরের জন্য পোশাক রফতানির এফওবি মূল্যের ওপর প্রচলিত সুবিধাগুলোর অতিরিক্ত পাঁচ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা প্রদান করা হোক। যা শুধুমাত্র বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র সদস্য প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে’- বলেন তিনি। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই যে, বাজেট প্রস্তাবনায় কর্পোরেট করের হার ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ (পরিবেশবান্ধব কারখানার ক্ষেত্রে ১৪ শতাংশ) নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মতে, প্রস্তাবিত কর্পোরেট করের হার আরও হ্রাস করা দরকার।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি ভালো নেই। আমাদের অর্থনীতিও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান দু’টি খাত রফতানি ও প্রবাসী আয় কোনোটারই পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে সামগ্রিক রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।
Advertisement
‘একই সময়ে (১০ মাসে) রেমিট্যান্স অর্জন কমেছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। রফতানি ও রেমিট্যান্স মন্দার ফলে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সে ইতোমধ্যে চাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স ইতোমধ্যে ঋণাত্মক ১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-মার্চ) ছিল ৩ লাখ ৩৬ বিলিয়ন ডলার।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, সহ-সভাপতি এস এম মান্নান (কচি), সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির, সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান (বাবু), সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এসআই/এমএএস/এমএমএ/এমএআর/পিআর