ধর্ম

কুরআনের সর্বোত্তম কাহিনী পড়া হবে আজকের তারাবিতে

পবিত্র রমজান মাসের বিশেষ নামাজ তারাবির নবম জামাআত অনুষ্ঠিত হবে আজ। আজকের তারাবিতে সুরা হুদের ৬ নং আয়াত থেকে (১২৩) শেষ পর্যন্ত এবং সুরা ইউসুফের শুরু থেকে ৫২নং আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা হবে। আজকের তারাবিতে ১২তম পারার তেলাওয়াত শেষ হবে।

Advertisement

আজকের তারাবিতে কুরআনুল কারিমের সর্বোত্তম কাহিনীসহ প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্ত্বনা দেয়ার বিষয়টি পাঠ করা হবে। সুরার আলোচ্য বিষয়গুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

সুরা হুদ১০ রুকু এবং ১২৩ আয়াত বিশিষ্ট সুরা হুদ পবিত্র নগরী মক্কায় নাজিল হয়েছে। এটি সুরা ইউনুছের নাজিলের কাছাকাছি সময়ে নাজিল হয়েছে। এ সুরার আলোচ্য বিষয়ও সুরা ইউনুছের সঙ্গে মিল রয়েছে। তবে এ সুরায় সতর্কতা করা হয়েছে কড়াকাড়িভাবে। আজকে এ সুরার ৬ থেকে শেষ (১২৩ নং আয়াত) পর্যন্ত পড়া হবে।

আয়াত ০৬-১২৩সুরা হুদ ঐ সব সুরাগুলোর মধ্যে অন্যতম- যে সব সুরায় পূর্ববর্তী জাতীসমূহের ওপর আপতিত আল্লাহর গজব ও বিভিন্ন কঠিন আজাব, পরকালের ভয়াবহ ঘটনাবলী, পুরস্কার ও শাস্তির বিশেষ বর্ণনা রয়েছে। এ সুরা বিশেষ যে ঘটনা এসেছে তা হলো-

Advertisement

>> হজরত নুহ আলাইহিস সালামকে নৌকা তৈরির শিক্ষাদান ও তাঁর তরীর বিবরণ;

>> যানবাহনে আরোহনের পদ্ধতির শিক্ষা;

>> নুহ আলাইহিস সালামের কিস্তির বাইতুল্লাহ তাওয়াফ;

>> আদ-সামুদ জাতির বর্ণনা ও আল্লাহর নাফরমানির ভয়াবহ পরিণাম;

Advertisement

>> হজরত সালেহ আলাইহিস সালামের ঘটনার বর্ণনা;

>> সালামের সুন্নাত ও মেহমানদারির মূলনীতির বর্ণনা;

>> পূববর্তী বিশিষ্ট নবি-রাসুলদের বহু উপদেশ, হিকমত, আহকাম ও হিদায়াত থেকে উম্মতে মুহাম্মাদিকে শিক্ষা লাভের আহ্বানও করা হয় সুরা হুদে। এ বিষয়গুলো আজকের তারাবিতে পাঠ করা হবে।

সুরা ইউসুফসুরা ইউসুফ মক্কায় নাজিল হয়েছে। এ সুরাটির আয়াত সংখ্যা ১১১ এবং রুকু সংখ্যা ১২। এ সুরার বিষয়বস্তু থেকে বুঝা যায় যে, সুরাটি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কায় অবস্থানের শেষ যুগে নাজিল হয়েছিল। তখন মক্কার ইসলাম বিদ্বেষীরা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যা বা দেশান্তর বা বন্দি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিল। আজ এ সুরার ৫২নং আয়াত পর্যন্ত পাঠ করা হবে।

সুরা ইউসুফ অনন্য মর্যাদা সম্পন্ন একটি সুরা। আল্লাহ বিভিন্ন ঘটনাকে বিভিন্ন সুরা একাধিকবার বর্ণনা করেছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন নবি-রাসুলের বর্ণনাও বিভিন্ন সুরায় করেছেন। কিন্তু সুরা ইউসুফ সে দৃষ্টিকোন থেকে ব্যতিক্রম। কারণ এ সুরায় আল্লাহ তাআলা শুধুমাত্র হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। যা অন্য কোনো সুরায় বর্ণনা হয়নি।

হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের জীবনের ঘটনার সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের অনেক ঘটনার মিল রয়েছে। আল্লাহ তাআলা হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ন্যায় বিশ্বনবিকে নবুয়তের প্রারম্ভে সত্য স্বপ্ন দেখান।

তাছাড়া হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের আপন-জন তাঁকে অনেক কষ্ট ও নির্যাতন করেছেন উপরন্তু তিনি তার ভাইদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেছেন। তাদের প্রতি কোনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। কোনো অত্যাচার নির্যাতনই হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামকে অধৈর্য করে তোলেননি।

ঠিক বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও নবুয়তের শুরু থেকেই নিকটাত্মীয়-স্বজন দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলেন। অধৈর্য হননি এবং কারো প্রতি প্রতিশোধও গ্রহণ করেননি। এমনকি জুলুম অত্যাচারের কারণে বিশ্বনবিকে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে হয়েছে।

মক্কার অত্যাচার নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের পর বার বার মদিনা আক্রমণ করে ইসলাম ও বিশ্বনবিকে চিরতরে শেষ করে দিতে চেয়েছে ইসলাম বিদ্বেষীরা। অতঃপর বিশ্বনবি যখন অষ্টম হিজরিতে মক্কা বিজয় করলেন, তখন তিনি বললেন, ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি ছিলেন ধৈর্য ও পরম সহিষ্ণুতার মূর্তপ্রতীক ও পরম দয়ালু।

সর্বোপরি আল্লাহ তাআলা সুরা ইউসুফ নাজিল করে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্ত্বনা প্রদান করেছেন। আর এ কারণেই সুরা ইউসুফ অনন্য মর্যাদার অধিকারী।

আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম